সামাজিক মূল্যবোধ ক্ষয়ে দেয়ার অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত হওয়া শর্ট ভিডিও তৈরীর অ্যাপ ‘টিকটক’ শোবিজ জগতেও হানা দিয়েছে । মানুষের প্রাণঘাতি কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে অপরাধ জগতে প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম টিকটকে গা ভাসিয়েছেন শোবিজের কয়েকজন তারকাও। এতে বিতর্ক তৈরীর পাশাপাশি নিজের ক্যারিয়ারও হুমকিতে ফেলছেন তারা।
চলচ্চিত্র নির্মাতা বা কুশিলবরা টিকটিক পরিহার করে শিল্পীদের কাজে মনযোগি হতে পরামর্শ দিয়ে আসলেও এতে কারো কোন কর্ণপাত নেই। উল্টো প্রকাশ্যেই টিকটক নিয়ে গণমাধ্যমে তারা স্বাক্ষাতকার প্রদান করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
সম্প্রতি ২০২২ সালের টিকটক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশের টিকটক ভিডিও নির্মাতাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন অভিনেত্রী সামিরা খান মাহি। চতুর্থ স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন আরেক অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। শিরীন শিলা, তমা মির্জা থেকে শুরু করে ৯০ পরবর্তি জনপ্রিয়তা নায়িকাও টিকটক, ইনস্ট্রাগ্রাম ও ফেসবুক রিল ভিডিওতে আক্রান্ত হয়ে আছেন। এ তালিকা দিন দিন লম্বা হচ্ছে। টিকটকের জন্য তারা ভীষণ আনন্দবোধ করলেও চলচ্চিত্র ও নিজের এগিয়ে যাওয়াকে সংকটে ফেলছেন বলে মনে করেন নির্মাতারা।
কয়েকদিন আগে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়ে অভিনেত্রী নূতন বলেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে টিকটক ক্যাটাগরি নাই? টিকটক আর ফেসবুক ফলোয়ার ক্যাটাগরি রাখার আবেদন করছি। পাশাপাশি ভাইরাল ক্যাটাগরি রাখলে মন্দ হয় না!’ গত বছরের শেষে নির্মাতা রায়হান রাফী আর অভিনেত্রী দীঘির পাল্টাপাল্টি মন্তব্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এসময় রায়হান রাফি বলেন, ‘দীঘির উচিত টিকটক বাদ দিয়ে অভিনয়ে মনোযোগী হওয়া। ফিটনেসের দিকে মনোযোগী হওয়া। সে শুধু আমার সিনেমা থেকে বাদ হয়েছে এমনটা না, অন্যরা কেন তাকে সিনেমা থেকে বাদ দিল? নিশ্চয়ই তার ঘাটতি আছে।’ এর জবাবে দিঘি বলেন, ‘রায়হান রাফি নিজেওতো এক নায়িকার সাথে টিকটক করে ছেড়েছে।’ এর আগে টিকটকের কারণেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়ার একটি সিনেমা থেকে দিঘীকে বাদ দেয়া হয় বলে শোনা যায়।
বাংলা সিনেমার অন্যতম লাস্যময়ী নায়িকা দিলারা হানিফ পূর্ণিমা সামাজিক মাধ্যমে নিজের শর্ট ভিডিও ছেড়েছেন। অনেক ভক্তই পূর্ণিমার এমন ভিডিও দেখে উচ্ছ্বাসিত হলেও কেউ কেউ বলছেন, আসলে পূর্ণিমার টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে আসা ঠিক নয়। আবেদনময়ী নায়িকা ইয়ামিন হক ববি টিকটক করছেন। কখনো স্লিভলেস ব্লাউজ, কখনো টপস পরে নিজের রূপ ও আবেদন ছড়িয়ে উষ্ণতা ছড়াচ্ছেন।
এক সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা পলি ও মুনমুন। পলি অভিনয়ে নিয়মিত না হলেও অগ্রজ হওয়ায় তাকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হচ্ছে শর্টভিডিও নির্মাণে। তাছাড়া পলি এখনো গ্লামার’স হওয়ায় অভিনয়ে নিয়মিত হলে এখনো ভালো করবেন বলে মনে করেন অনেকেই। বর্তমানে মুনমুন নিয়মিত হতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা দুইজনই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত নিজের ছবি, ভিডিও পোস্ট করে থাকেন। মূলত টিকটক, লাইকিতে বানানো রিল ভিডিওগুলোই ফেসবুকে পোস্ট করেন দুই অভিনেত্রী। গত জুলাই মাসে ফেসবুকে একটি রিল ভিডিও পোস্ট করে মুনমুন লিখেছেন, ‘প্রচণ্ড জ্বর, সঙ্গে সর্দি। তার মাঝেই টিকটক করে ফেললাম।’
টিকটকের সামাজিক অবনতি দেখে অভিভাবক, নাগরিক সমাজের ব্যক্তিরাও টিকটক, লাইকির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তারুণদের সচেতন করে তুলছেন প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিশ্লেষকরা মনে করে, আমাদের সেলিব্রেটিরা সাধারণ মানুষের আইডল থাকেন সেখানে তারা নিজেরাই যদি টিকটক করে বেড়ান তাহলে এটি চরম হতাশাজনক এবং তারুণ্যের উপর চরম প্রভাব পড়ে। তাই তাদের সবার মতো টিকটকে গা ভাসানো ঠিক নয়।’ এর আগে চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ক ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘যে নায়িকা টিকটক করে দর্শক কেন তাকে টাকা দিয়ে পর্দায় দেখবে’।
২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার ‘ইন্টারনেট প্লাটফর্ম থেকে টিকটক, বিগো লাইভ, ফ্রি ফায়ার গেম পাবজি ও লাইকির মতো অনলাইন গেমস এবং অ্যাপস অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।
বাবু/জেএম