শনিবার ২১ জুন ২০২৫ ৭ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২১ জুন ২০২৫
শাবান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত
বুলেটিন ডেস্ক
প্রকাশ: সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১১:৫৫ AM আপডেট: ২০.০২.২০২৩ ১২:০৫ PM

হিজরি ১৪৪৩ বর্ষপরিক্রমা বা চান্দ্র মাসের অষ্টম মাস পবিত্র শাবান মাস। শাবান আরবি শব্দ অর্থ শাখা-প্রশাখা। আর শাবান মাস এলেই চারদিকে ইবাদতের সুবাতাস বইতে শুরু করে। মোমিন হৃদয় জেগে ওঠে। নিজেদেরকে প্রভুপ্রেমে বিলিয়ে দেন বিনিদ্র রজনীতে। ইবাদত-বন্দেগিতে কাটান দিনের বেশিরভাগ সময়। চলছে রমজানের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে মানসিকভাবে গড়ে তোলার অপূর্ব সুযোগ শাবান মাস। এ মাস একটি ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস।

শাবান মাসের আগের মাস হচ্ছে পবিত্র রজব মাস। রাসূল (সা.) রজবের চাঁদ উঠলে দোয়া করতেন ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান’ অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।

আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন এ কথার অর্থ হচ্ছে, রমজান পর্যন্ত আমাদের জীবন দান করুন। যেন আমরা রমজান মাস পেয়ে অধিক হারে ইবাদত-বন্দেগি, রোজা, তারাবি, লাইলাতুল কদরের ইবাদত, ইতিকাফ ইত্যাদির মাধ্যমে মহান পবিত্র রমজান মাসের ফজিলত লাভে ধন্য হই। এ জন্য পবিত্র রজব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর রমজানের চাঁদ দেখা পর্যন্ত উপরোল্লিখিত দোয়াটি পাঠ করা সুন্নত বা মুস্তাহাব।

যেহেতু পবিত্র রমজান মাস বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ মাস, সেহেতু পূর্ব থেকেই এ মাসের ইবাদত-বন্দেগির জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটাই একজন মোমিনের কর্তব্য। হজরত রাসুল (সা.)-এর উপরোক্ত দোয়া-ই প্রমাণ করে তিনি পবিত্র রজব মাস শুরু থেকেই রমজানের জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকতেন। বিভিন্ন হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, হজরত মুহাম্মদ (সা.) পবিত্র রজব ও শাবানে রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। রমজানে অধিক ইবাদতের জন্য সময়-সুযোগ বের করতেন। মানসিকভাবে তৈরি হতেন। আর এ কারণেই তিনি পবিত্র শাবানের দিন, তারিখ গুরুত্বসহকারে হিসাব রাখতেন।

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুল (সা.) পবিত্র শাবানের (দিন, তারিখ হিসাবে) প্রতি এত অধিক লক্ষ্য রাখতেন, যা অন্য কোনো মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না (সুনানে আবু দাউদ ১/৩১৮)।

সুতরাং পবিত্র শাবান মাসের দিন-তারিখের হিসাব রাখাটাই সুন্নত এবং মোমিনদের করণীয়। পবিত্র শাবান মাসে অধিক হারে নফল রোজা রাখা উত্তম। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত নবী করিমকে (সা.) শাবান ও রমজান ব্যতীত দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে শাবান মাসের মতো এত অধিক (নফল) রোজা রাখতে আর দেখিনি। এ মাসের অল্প কিছুদিন ব্যতীত বরং বলতে গেলে সারা মাসটাই তিনি নফল রোজা রাখতেন। (জামি তিরমিজি ১/১৫৫)।

পবিত্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত, অর্থাৎ পনের শাবান রাত হচ্ছে পবিত্র শবেবরাত, ভাগ্যরজনী, এ রাতের অশেষ ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। বছরের শ্রেষ্ঠ পাঁচটি রজনীর অন্যতম এ রাত। এ রাতের করণীয় সম্পর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেছেন, পনের শাবান রাতে (শবেবরাত) তোমরা জেগে থেকে ইবাদত কর এবং পরদিন রোজা রাখ। এ জন্য শবেবরাতে জেগে থেকে ইবাদত করা এবং পরদিন রোজা রাখা উত্তম।

শাবান মাসে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি আমল

>>বেশি বেশি রোজা রাখা

রোজা রাখা

রোজা রাখা

হজরত উসামা বিন যায়েদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! শাবান মাসে আপনাকে যত রোজা রাখতে দেখি, অন্য মাসে এত পরিমাণ রোজা রাখতে দেখিনি। অর্থাৎ আপনি কেন এ মাসে এত বেশি রোজা রাখেন?

রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এটি এমন একটি মাস, যা রজব এবং রমজানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি মাসের মধ্যে পড়ে। আর অধিকাংশ মানুষ এ মাসটি সম্পর্কে গাফেল থাকে। অর্থাৎ এ মাসটি সম্পর্কে তারা বেখবর থাকে, উদাসীন থাকে। যার ফলে তারা ভালো আমল করে না। তারা ভাবে যে, রমজান তো আছেই।’ (নাসাঈ)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘শাবান মাসে বেশি রোজা রাখার অন্য একটি কারণ হলোÑ এ মাসে আল্লাহর কাছে মানুষের আমলনামাগুলো উপস্থাপন করা হয়। আর আমি চাই রোজা থাকা অবস্থায় আমার আমলনামা আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা হোক।’

হজরত হুজাইফা (রা.) বর্ণনা করেন, কেউ যদি রোজা রাখা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, তবে তিনি জান্নাতে যাবেন। হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ মর্মে জিজ্ঞেস করলাম। হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন; যে আমল করলে আল্লাহতায়ালা আমাদের অনেক কল্যাণ দান করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি রোজা রাখ। অন্য কোনো আমল রোজার মতো হতেই পারে না।’

>>বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা

কোরআন তেলাওয়াত করা

কোরআন তেলাওয়াত করা

সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন এবং প্রসিদ্ধ ইমামরা শাবান মাস এলেই বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন। কোরআন নাজিলের মাসের বরকত লাভে এ মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করায়ও রয়েছে ফজিলত ও মর্যাদা।

>>বেশি বেশি সদকা (দান-সহযোগিতা) করা

সদকা (দান-সহযোগিতা) করা

সদকা (দান-সহযোগিতা) করা

অনুরূপভাবে সালফে সালেহিনরা এ মাসজুড়ে বেশি বেশি দানসদকা করে রমজানের দান-সদকার অভ্যাস নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলতেন। যাতে রমজানজুড়ে দানসদকায় অতিবাহিত করা যায়। আবার গরিব-অসহায়দের রমজানের কষ্ট দূর করা যায়।

>>বেশি বেশি ইস্তেগফার করা

ইস্তেগফার করা

ইস্তেগফার করা

রমজানে রহমত বরকত মাগফিরাত ও নাজাতের জন্য শাবান মাস থেকেই সালফে সালেহিনরা বেশি বেশি ইস্তেগফার করতেন, যা মানুষকে রমজানজুড়ে আমলে উদ্যোগী করে তোলে।

তাই সব মোমিন মুসলমানের উচিত, শাবান মাসজুড়ে নিজেদের ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রাখা। রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখা। আল্লাহতায়ালা আমাদের শাবান মাসজুড়ে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন।

-বাবু/এ.এস


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  শাবান মাস   গুরুত্ব   







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত