হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবাকে কেন্দ্র করে আল্লাহর নির্দেশিত নিয়মে হজ প্রবর্তন করেন। উম্মতে মোহাম্মাদির ওপর নবম হিজরিতে তা ফরজ করা হয়। শরিয়তের বিধান মোতাবেক নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ।
হজ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ তায়ালা যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নির্দেশনা নিম্নরূপ-
নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরের হজ কিংবা ওমরা সম্পন্ন করবে, এ দুই পর্বতের মধ্যে দৌড়াবে তার পক্ষে কোনো পাপের কাজ সম্ভব নয়। আর যে ব্যক্তি নিজ ইচ্ছা, আগ্রহ ও উৎসাহে কোনো মঙ্গলজনক কাজ করবে, আল্লাহ তার সম্পর্কে অবহিত এবং এর পুরস্কার দান করবেন, তিনি সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা,আয়াত: ১৫৮)
যে লোক বাইতুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছানোর শক্তি ও সামর্থ্য যে রাখে, সে যেন হজ করে এবং যে এ নির্দেশ অমান্য করবে সে কুফুরির আচরণ করবে, তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ বিশ্ব প্রকৃতির ওপর অবস্থানকারীদের মুখাপেক্ষী নন। (সুরা আলে ইমরান,আয়াত: ৯৭)
যখন আমি কাবাকে মানব জাতির জন্য সম্মিলন ও নিরাপত্তা স্থল করেছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমরা ইবরাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাজেরর স্থান বানাও এবং ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, আমার ঘরকে তাওয়াকারী, অবস্থান ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। (সুরা বাকারা,আয়াত: ১২৫)
তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যখন হজ ও ওমরার নিয়ত করবে, তখন তা পূর্ণ করবে, আর কোথাও যদি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পড়ো, তাহলে কোরবানির যে বস্তু তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে পেশ করে দিও এবং নিজেদের মাথা মুড়িও না, যতক্ষণ না কোরবানির পশু নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যায়। কিন্তু যে ব্যক্তি এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিংবা মাথায় যদি কোনো অসুখ থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে রোজা রাখবে কিংবা ফিদিয়া দেবে অথবা কোরবানি করবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ ও ওমরা একত্রে একসঙ্গে পালন করতে চায়, তাহলে যা কিছু সহজলভ্য, তা দিয়ে কোরবানি করাই তার ওপর কর্তব্য। বস্তুত যারা কোরবানির পশু পাবে না, তারা হজের দিনগুলোর মধ্যে তিনটি রোজা রাখবে আর সাতটি রোজা রাখবে ফিরে যাওয়ার পর এভাবে ১০টি রোজা পূর্ণ হয়ে যাবে। এ নির্দেশটি তাদের জন্য, যারা মসজিদুল হারামের পাশে বসবাস করে না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। আর জেনে রাখো, আল্লাহর আজাব বড়ই কঠিন। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৬)
তোমাদের ওপর তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে কোনো পাপ নেই। অতপর যখন তাওয়াফের জন্য ফিরে আসবে আরাফাত থেকে, তখন মাশআরে হারামের কাছে আল্লাহকে স্মরণ করো। আর তাকে স্মরণ করো তেমন করে, যেমন তোমাদের হিদায়াত করা হয়েছে। আর নিশ্চয়ই এর আগে তোমরা ছিলে অজ্ঞ। অতপর তাওয়াফের জন্য দ্রুত গতিতে সেখান থেকে ফিরে এসো, যেখান থেকে সবাই ফিরে আসে আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী ও করুণাময়। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৮-১৯৯)
আর লোকদের মধ্যে হজের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার কাছে সব দূরবর্তী স্থান থেকে হেঁটে ও উটের ওপর সওয়ার হয়ে আসবে। যাতে তারা তাদের কল্যাণ ও নির্দিষ্ট দিনগুলোয় আল্লাহর নাম স্মরণ করে তার দেওয়া জীবিকা হিসেবে চতুষ্পদ জন্তু জবাই করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং অভাবগ্রস্থকে আহার করাও। (সুরা হজ, আয়াত: ২৭-২৮)
বাংলাদেশ থেকে যারা হজে যাবেন তাদের জন্য চলতি বছর তৃতীয়বারের মতো হজে গমনে নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় আরও ৯ দিন বাড়ানো হয়েছে। ফলে আগামী ১৬ মার্চ পর্যন্ত হজযাত্রীরা নিবন্ধন করতে পারবেন। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এরপর হজ নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না।
ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখ হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়। যা ২৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিবন্ধনে সাড়া না পাওয়ায় সময় পাঁচদিন বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়। এরপরও নিবন্ধন কম ছিল। পরে নিবন্ধনের শেষ সময় বাড়িয়ে ৭ মার্চ করা হয়। এবার আরও ৯ দিন বাড়িয়ে ১৬ মার্চ করা হলো।
এবার হজে গমনেচ্ছুদের সংখ্যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চারগুণ কম। সময় বাড়িয়েও বাংলাদেশ থেকে হজে গমনেচ্ছুদের সংখ্যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। সৌদি আরব থেকে পাওয়া কোটা অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন।
-বাবু/এ.এস