গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ দোষারোপ করা, কুৎসা রটনা, পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষগুলো অন্যেও সামনে তুলে ধরা।
ইসলামি শরিয়তে গীবত হারাম ও কবিরা গুনাহ। যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায় তাদের জন্য ইসলামে ধবংসের দুঃসংবাদ রয়েছে। পবিত্র কোরআনে সূরা আল-হুজুরাতের ১২ নং আয়াতে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না। এতে করেই প্রমাণ হয়ে যায় যে, মহান রাব্বুল আলামীন গীবত বা পরনিন্দা কতটা অপছন্দ করেন।
রোজা অবস্থায় গীবত করলে রোজা ভাঙে না। তবে রোজার সওয়াব ও গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। গীবত কবিরা গোনাহ। কোরআনে কারিমে এবং হাদিস শরিফে এর ঘৃণ্যতা ও ভয়াবহতার কথা এসেছে। শুধু রোজা নয় সাধারণ সময়ই এটি খুবই নিকৃষ্টতম কাজ ও অভ্যাস। মাহে রমজান পবিত্র মাস। মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আর এই জন্য রোজাদারদের মধ্যেও কতগুলো সদগুণ- পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহানুভূতি, দানশীলতা, উদারতা থাকা দরকার।
পরচর্চা, পরনিন্দা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি হল নিন্দনীয় আচরণ। এগুলো সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করে দেয়। আর তাই এ সমস্ত আচরণ বর্জন প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। কারও দোষ বা কুৎসা রটানো, গীবত করা হল পরচর্চা ও পরনিন্দা। আর এই কাজগুলো সমাজের কাছে যেমন ঘৃণ্যতর, তেমনি তা আল্লাহর কাছেও অত্যন্ত পাপের কাজ।
আর পবিত্র রমজান মাসে রোজা অবস্থায় এর ভয়াবহতা আরও বেশি। হাদিস শরিফে এসেছে, নবী করীম (সা.) বলেন, রোজা হল ঢাল, যে পর্যন্ত না তাকে বিদীর্ণ করা হয়। জিজ্ঞাসা করা হলো, কীভাবে রোজা বিদীর্ণ হয়ে যায়? নবী করীম (সা.) বলেন, মিথ্যা বলার দ্বারা অথবা গীবত করার দ্বারা। এই বিষয়ে মুফাসসির মুজাহিদ (রহ.) বলেন, দুটি অভ্যাস এমন রয়েছে, এ দু’টি থেকে যে বেঁচে থাকবে তার রোজা নিরাপদ থাকবে- গীবত ও মিথ্যা।
নবী করীম (সা.) বলেন, তোমাদের কেউই কারও গীবত করবে না। গীবত করলে তোমরা ধ্বংস হবে। তিনি আরও বলেন, তোমরা গীবত থেকে বেঁচে থাকো। কারণ তাতে তিনটি ক্ষতি রয়েছে। এগুলো হলঃ গীবতকারীর দোয়া কবুল হয় না, কোনো নেক আমল কবুল হয় না ও সেইসাথে তার আমলনামায় পাপ বৃদ্ধি হতে থাকে।
কোরআন ও হাদিসে গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যেভাবে মৃত ব্যক্তির গোশত কেটে ভক্ষণ করা হলে মৃত ব্যক্তির কোনো কষ্ট হয় না, তেমনি কারও গীবত করা হলে সে অনুপস্থিত থাকায় তারও কোনো কষ্ট হয় না। এভাবে মৃত ব্যক্তির গোশত ভক্ষণ অত্যন্ত খারাপ ও নিকৃষ্ট কাজ, যা মানুষের রুচি বিরুদ্ধ। ঠিক গীবতও এ রকম।
রোজা রেখে কিংবা রোজাদারের গীবত সম্পর্কে নবী করীম (সা.) বলেন, যারা গীবত করবে এরা ইহকালে যদিও ভালো ভালো নেক আমল করে, রোজা রাখে বা অন্যান্য ইবাদত করলেও এদের পুলসিরাত অতিক্রম করতে দেওয়া হবে না। বরং তাদেরও বলা হবে তোমরা গীবতের কাফ্ফারা না দেওয়া পর্যন্ত সামনে এগুতে পারবে না। অথচ পুলসিরাত অতিক্রম না করে কারও পক্ষেই জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই বোঝা গেল, গীবতকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
তাই পবিত্র মাহে রমজানে আল্লাহ পাক আমাদের গীবত করা থেকে বিরত রাখুক। আমরা সবাই যেন পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা মেনে গীবত, পরনিন্দা, পরচর্চা ইত্যাদি সকল পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারি।
-বাবু/এ.এস