ইফতার আল্লাহ তা'আলার বড় নেয়ামত। শরীয়তের পরিভাষায় রোজা পালনকারী সারা দিন রোজা রেখে সূর্যাস্তের পর কোনো কিছু খেয়ে বা পান করে রোজা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলে। ইফতার করা সুন্নত। রমজানে ইফতার করা যেমন পবিত্র আমল, তেমনি ইফতারের সময়টিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে ও নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৫২)।
তিনি আরও বলেছেন, ‘ইফতারের সময় রোজাদের ন্যূনতম একটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৫৩)
প্রশ্ন হলো: কোনো অমুসলিম ইফতার তৈরি করলে, সেই ইফতার মুসলমানদের জন্য খাওয়া জায়েজ আছে?
উত্তর হলো: তাদের তৈরি ইফতারে নাপাকি বা হারাম জিনিস থাকার প্রবল ধারণা না হলে তা খাওয়া জায়েজ আছে। যদিও সতর্কতার খাতিরে একজন রোজাদারের জন্য তা অনুত্তম।
তবে, অমুসলিমের হাতে জবাই করা কোনো প্রাণীর গোশত খাওয়া হালাল নয়। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘আর তোমরা ওই প্রাণী থেকে খেয়ো না, যার ওপর আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি।’ (সুরা আনআম: ১২১; রদ্দুল মুহতার ১০/৫২১; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৪)
অতএব, অপবিত্র ও হারাম জিনিসের মিশ্রণ না থাকলে অমুসলিমদের তৈরি ইফতার বা যেকোনো খাবার গ্রহণ জায়েজ।
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) অমুসলিমদের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন এবং তাদের রান্না করা খাবারও খেয়েছেন। তাদের দেয়া উপহারও গ্রহণ করেছেন। (বুখারি: ২৬১৫)
শাইখ বিন উছাইমিন (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আমার একজন অমুসলিম প্রতিবেশী আছে। কখনো কখনো বিভিন্ন উপলক্ষে সে আমাকে খাবার ও মিষ্টান্ন পাঠায়। এ খাবার আমি খাওয়া ও আমাদের বাচ্চাদের খাওয়ানো কি জায়েজ হবে?
জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। যদি আপনি নিরাপদ মনে করেন, তাহলে কাফেরের দেয়া হাদিয়া খাওয়া আপনার জন্য জায়েজ। কেননা, নবী (স.)-কে যে ইহুদি নারী ভেড়া হাদিয়া দিয়েছে এবং তিনি সেটা গ্রহণ করেছেন। যে ইহুদি তাকে তার ঘরে দাওয়াত করেছে, তিনি তার দাওয়াত গ্রহণ করেছেন এবং তার খাবার খেয়েছেন। তাই কাফেরদের উপহার ও তাদের বাসায় খেতে কোনো আপত্তি নেই।’
কিন্তু শর্ত হচ্ছে, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। যদি কোনো আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা যাবে না।
অনুরূপভাবে আরেকটি শর্ত হচ্ছে, খাবার ও উপহারগুলো তাদের ধর্মীয় উপলক্ষ কেন্দ্রিক না হওয়া (যেমন: পূজা ও বড়দিন পালন ইত্যাদি ধরনের কোনো উপলক্ষ)। এ ধরনের অবস্থায় উপলক্ষ কেন্দ্রিক তাদের উপহার গ্রহণ জায়েজ নেই। (ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব: ২৪/২)
অমুসলিমদের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করলে ঈমান-আমলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে অংশগ্রহণ করা জায়েজ হবে না। (আহকামুজ জিম্মাহ: ১/৭২৩)।
-বাবু/এ.এস