ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই। তবে সহসা-ই দুদলের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ না মেলায় পাকিস্তানের জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে বাংলাদেশের নাম! কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচেও নানা কারণে দারুণ এক উদ্দীপনা কাজ করে আসছে। তবে দুই দলের ম্যাচ মানেই যেন বিতর্ক পিছু ছাড়ে না! ইমার্জিং এশিয়া কাপে সেমিফাইনালের ১৪তম ওভারে ভারতীয় ব্যাটারকে স্টাম্পিং আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে সেসব ছাপিয়েও ভারতকে ২১১ রানেই আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ।
এর আগে তানজিম হাসান সাকিব, শেখ মেহেদী ও রাকিবুলদের বোলিংয়ে ক্রিজে দাঁড়াতে হিমশিম খেয়েছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা। ১৩৭ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ভারত রীতিমতো ধুঁকছিল। তবে সেখান থেকে পাল্টা লড়াই শুরু করেন দলটির অধিনায়ক ইয়াশ ধুল। তার ফিফটি পেরোনো ইনিংসেই বাংলাদেশকে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিয়েছে ভারত।
আর মাত্র একটি ধাপ পেরোলেই ইমার্জিং কাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে টাইগাররা এক পা দিয়ে রাখবে। এমন সমীকরণ মাথায় নিয়েই আজ (শুক্রবার) সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয় সাইফ হাসানের দল। এদিন টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সাইফ।
এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ধীরে-সুস্থেই আগাচ্ছিল ভারতীয় ওপেনাররা। সাকিব-মেহেদীদের বোলিংয়ের সামনে তাদের বেশ নড়বড়ে দেখাচ্ছিল। তার ফলও দ্রুতই পেয়েছে যুব টাইগাররা। ২৯ রানের মাথায় ভারতকে প্রথম ধাক্কা দেন সেই সাকিবই। শুরু থেকেই এই পেসার আগ্রাসী মেজাজে বল করছিলেন। বুকের কিছুটা ওপরে লাফিয়ে ওঠা বলে ফাঁদে ফেলেন সাই সুদর্শনকে। অফ-স্টাম্পের অনেক বাইরের বল খেলতে গিয়ে সফলভাবে সুদর্শন উইকেটরক্ষক আকবর আলীর তালুবন্দী হন। ২৪ বলে তিনি করেন ২১ রান।
এরপর নিকিন জসকে সঙ্গে নিয়ে ৪৬ রানের জুটি বাধেন আরেক ওপেনার অভিষেক শর্মা। এর মাঝেই ঘটে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ইনিংসের ১৪তম ওভারে নিজের কোটার প্রথম ওভার করতে এসেছিলেন স্পিনার রাকিবুল। প্রথম তিন বলেই পরাস্ত হন ভারতীয় ব্যাটার নিকিন জস। চতুর্থ বলটিতে এগিয়ে এসে কিছুটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গিয়েছিলেন নিকিন। বলটি ব্যাট মিস করে যায়। উইকেটের পেছনে বুদ্ধিদীপ্ত স্টাম্পিং করেন আকবর।
খালি চোখে বা জুম ইন করে যতটুকু দেখা যায়, স্টাম্পিংয়ের সময়ে ব্যাটারের পা গ্রাউন্ডেড ছিল না! আর তাই সিদ্ধান্ত জানাতে খুব বেশি রিভিউয়েরও দরকার পড়ে না। থার্ড আম্পায়ার ফয়সাল আফ্রিদিও কয়েকবার বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে দেখে আউটের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন। ততক্ষণে উদযাপন শুরু করে দিয়েছেন সাইফ হাসানরা। ব্যাটসম্যান নিকিনও ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। মাঠের অনফিল্ড আম্পায়ার ব্যাটারকে দাঁড়াতে বলেন। কয়েক সেকেন্ড পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নট আউটের সবুজ সিগন্যাল দেন টিভি আম্পায়ার! যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে সমালোচনার ঝড় চলছে।
এরপর অবশ্য নিকিন আর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। টাইগার অধিনায়ক সাইফের বলেই জাকির আলীকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জস। তিনি ১৭ রান করেন। এর একটু পরই ওপেনার অভিষেক শর্মাকে তুলে নেন বাঁ-হাতি তরুণ স্পিনার রাকিবুল হাসান। তার পর নামা নিশাত সিধুকেও ক্যাচে পরিণত করেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার। এরপর রায়ান প্রাগকে (১২) তুলে নেন তানজিদ সাকিব। ধ্রুব জুরেলকে আউট করেন শেখ মেহেদী।
তবে অন্যপ্রান্তে অটল ছিলেন ধুল। টেল-এন্ডার ব্যাটারদের নিয়েও তিনি শক্ত ভিত গড়ার কাজ চালিয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত ৬৬ রানে থামেন ধুল। ৮৫ বলের ইনিংসে তিনি ৬টি চারের বাউন্ডারি খেলেন। পাঁচ বল বাকি থাকতেই ভারত ২১১ রানে অলআউট হয়ে যায়।
বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী, রাকিবুল ও সাকিব ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া সাইফ, রিপন মন্ডল ও সৌম্য সরকার নেন একটি করে উইকেট।
বাবু/জেএম