শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫ ৬ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫
ছয় ভারতীয়কে নিয়ে আইসিসির বিশ্বকাপ একাদশ ঘোষণা
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩, ২:৪৪ PM আপডেট: ২০.১১.২০২৩ ২:৫২ PM
পর্দা নেমেছে এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপের। স্বাগতিক ভারতের অপ্রতিরোধ্য যাত্রা থামিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছে ক্রিকেটের সফলতম দল অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে নিজেদের হারিয়ে খোঁজা ভারতকে ট্রাভিস হেড বীরত্বে অনায়াসেই হারিয়েছে অজিরা। অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে সাত সপ্তাহের মহাযজ্ঞের সমাপ্তি। মাঝের সময়টা ক্রিকেটের রূপে-রসে বুঁদ হয়ে ছিলেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। উপভোগ করেছেন দারুণ সব ক্রিকেটারের অসাধারণ সব কীর্তি।

বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করেও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাত্তা পায়নি ভারত। তবে টুর্নামেন্টজুড়েই ভারতীয় ব্যাটার-বোলাররা দারুণ ক্রিকেট উপহার দিয়েছেন। অন্যদিকে, হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও টানা ৯ ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপ শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে অজিরা।  তাই বিশ্বকাপের সেরা একাদশে যে ফাইনালিস্ট দুই দলের খেলোয়াড়দের আধিক্য থাকবে তা বলাই বাহুল্য।

ভারত ফাইনালে হেরে গেলেও আইসিসির বাছাইকৃত সেরা একাদশে ভারতীয়দের একক আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। সেরা একাদশে ছয়জনই ভারতীয়। চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া থেকে আছেন মাত্র দুজন। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা থেকে একজন করে জায়গা পেয়েছেন সেরা একাদশে।

ফাইনালে প্যাট কামিন্সের বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বের কাছে মার খেলেও আইসিসির নির্বাচিত সেরা একাদশের নেতৃত্ব থাকছে রোহিত শর্মার হাতে।

কুইন্টন ডি কক: দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনালে খেলবে এটা টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বেশিরভাগ মানুষই ভাবতে পারেনি। কিন্তু ভারতের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এটা সম্ভব হয়েছিল কুইন্টন ডি ককের দারুণ পারফরম্যান্সের কারণেই। গ্রুপ পর্বে স্বপ্নের ক্রিকেট খেলেছেন ডি কক। চারটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন এই প্রোটিয়া উইকেটকিপার-ব্যাটার, যার মধ্যে আছে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা ১৭৪ রানের ইনিংসটিও।

টুর্নামেন্টে ১০৭.০২ স্ট্রাইকরেটে ৫৯৪ রান করেছেন ডি কক। রান করার দিক দিয়ে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মাই শুধু তার ওপরে আছেন।

রোহিত শর্মা (অধিনায়ক): গত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানের মালিক রোহিতের এবার ভূমিকা পাল্টে গেলেও সেরা রান সংগ্রাহকের তালিকায় ঠিকই জায়গা হয়েছে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন তিনি।

পাওয়ার প্লেতে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন রোহিত। ভারতের আধিপত্যের গোঁড়া পত্তনের ভারটা তার কাঁধেই ছিল। টুর্নামেন্টে ৫৯৭ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সপ্তম সর্বোচ্চ রানের মালিক বনে গেছেন রোহিত।
রোহিতের রানগুলোর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায় তার রান তোলার ধরনের জন্য। এই বিশ্বকাপে ১২৫.৯৪ স্ট্রাইকরেটে রান করেছেন রোহিত। টুর্নামেন্টে শীর্ষ চারে ব্যাট করেছেন এমন ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেট তারই। স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেটে রান করেছেন শুধু গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও হেইনরিখ ক্লাসেন।

ভারতকে ফাইনালে তোলার পুরস্কার হিসেবে এই সেরা একাদশের নেতৃত্বও থাকছে রোহিতের হাতে।

বিরাট কোহলি: এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের রেকর্ড গড়েছেন বিরাট কোহলি। এবারের বিশ্বকাপে ১১ ইনিংস খেলে ৯ ইনিংসেই কমপক্ষে পঞ্চাশ রান করেছেন কোহলি। সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করার পর ফাইনালেও খেলেছেন ৫৪ রানের ইনিংস।

সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে ৩ সেঞ্চুরি ও ৬ হাফ সেঞ্চুরিতে  ৯৬.৬২ গড়ে রেকর্ড ৭৬৫ রান করেছেন বিরাট। তার আগে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬৭৩ রান করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। ২০০৩ সালের সে বিশ্বকাপেও ভারত অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে রানার্স আপ হয়েছিল।

এই বিশ্বকাপেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫০তম শতক হাঁকিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ানে পরিণত হয়েছেন বিরাট।

ড্যারেল মিচেল: সেমিফাইনাল থেকে নিউজিল্যান্ড বিদায় নিলেও ড্যারেল মিচেল জায়গা করে নিয়েছেন আইসিসির সেরা একাদশে। ৬৯ গড় ও ১১১.০৬ স্ট্রাইকরেটে মোট ৫৫২ রান করেছেন এই ভার্সেটাইল ব্যাটার। টুর্নামেন্ট জুড়েই নিউজিল্যান্ডের ইনিংস গড়েছেন এবং সময়মতো রান তোলার গতি বাড়িয়েছেন।

সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বড় রান তাড়া করতে নেমে তিনিই নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানে হারলেও তার খেলা ১৩৪ রানের ইনিংসটি দারুণ প্রশংসা পেয়েছে।

কেএল রাহুল: টুর্নামেন্টজুড়েই অসাধারণ ধারবাহিক ছিলেন রাহুল। টপ অর্ডার ব্যাটার হয়েই দলের প্রয়োজনে নতুন এই পজিশনে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। ১০ ইনিংসে করেছেন ৪৫২ রান।

মাঝের ওভারে রাহুলের ব্যাটিংয়ের ধরণ প্রশংসা কুড়িয়েছে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১০২ রানের ইনিংসটি তার সর্বোচ্চ হলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে খেলা অপরাজিত ৯৭ রানের ইনিংসটি টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা।

৩১ বছর বয়সী এই ব্যাটার ৭৫.৩৩ গড়ে টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন, যা  ব্যাটারদের মধ্যে তৃতীয় সেরা।

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল: বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা দুটি মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন ম্যাডম্যাক্স খ্যাত ম্যাক্সওয়েল। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি গড়েছেন ৪০ বলে। তবে তার সেরাটা দেখা গেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে। সেদিন ২৯২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৯১ রানে অস্ট্রেলিয়ার সপ্তম উইকেট পতনের পর প্যাট কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে একাই জিতিয়েছেন তিনি। ১২৮ বলে তার ২০১ রানের ইনিংসটিকে অনেকেই ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা ইনিংস বলে আখ্যা দিচ্ছে। পায়ে ক্র্যাম্প নিয়েও সেদিন অবিশ্বাস্যভাবে আফগান বোলারদের তুলোধুনো করেন ম্যাক্সওয়েল।

রবীন্দ্র জাদেজা: ভারতের অপ্রতিরোধ্য বিশ্বকাপ যাত্রায় দারুণ অবদান ছিল রবীন্দ্র জাদেজার। বল হাতে মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট শিকার করেছেন, রান আটকেছেন। আবার ব্যাট হাতে সাত নম্বরে নেমে গুরুত্বপূর্ণ রানও করেছেন। বিশ্বকাপে একটা কমপ্লিট প্যাকেজ ছিলেন তিনি।

বিশ্বকাপে মাত্র ৪.২৫ ইকোনমি রেটে রান দিয়েছেন তিনি, যা টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা। ব্যাট হাতেও পাঁচ ইনিংসে ১২০ রান করেছেন জাদেজা।

জাসপ্রীত বুমরাহ: ভারতের বোলিং আক্রমণের নেতা ছিলেন বুমরাহ। গোটা টুর্নামেন্টেই দুর্দান্ত ছিলেন তিনি।

নতুন বলে তার দারুণ পারফরম্যান্সই ভারতের বোলিংয়ের সুর বেঁধে দিয়েছে। নতুন বলে তার ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সে দারুণ ইমপ্যাক্ট রেখেছে।

টুর্নামেন্টে উইকেট শিকার তো করেছেনই, তার বলে রান করতেও প্রচণ্ড কষ্ট করতে হয়েছে ব্যাটারদের। টুর্নামেন্টে আর কোনো বোলারই তার চেয়ে কম রানরেটে রান দিতে পারেননি। মাত্র ৪.০৬ ইকোনমি রেটে রান দিয়েছেন বুমরাহ, এই রানরেট আরও অবাক করে কারণ বুমরাহ বেশিরভাগ সময় বল করেছেন ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের সময়।

দিলশান মাদুশঙ্কা: ১০ দলের টুর্নামেন্টে নবম হয়ে শেষ করেছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দিলশান ঠিকই নিজের নৈপুণ্য দিয়ে নজর কেড়েছেন।  ২১ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের শীর্ষ পাঁচ উইকেট শিকারির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন এই তরুণ বাঁহাতি পেসার। নতুন বলে ব্যাটারদের ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

অ্যাডাম জাম্পা: অ্যাডাম জাম্পা টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন। টুর্নামেন্টে ২২.৩৯ গড়ে ২৩ উইকেট শিকার করেছেন জাম্পা। ২৩ উইকেট শিকার করে মুত্তিয়াহ মুরালিধরণই এতদিন স্পিনারদের মধ্যে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন। তার সেই রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন এই অজি লেগি। এবারের আসরে শুধু মোহাম্মদ শামিই তার চেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন। মোট চারবার তিনি চার বা বেশি উইকেট শিকার করেছেন। এর মধ্যে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মাত্র ৮ রানে ৪ উইকেট শিকার করেছিলেন।

ব্যাট হাতেও ভালো অবদান ছিল তার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ২৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন জাম্পা।

মোহাম্মদ শামি: টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছেন শামি। বিশ্বকাপজুড়েই অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে তিনি একাদশেই ছিলেন না। এরপর হার্দিক পান্ডিয়ার ইনজুরিতে দলে সুযোগ পান তিনি।

এরপর সুযোগ পেয়েই মাত্র ১০.৭০ গড় ও ৫.২৬ স্ট্রাইকরেটে ২৪ উইকেট শিকার করেছেন শামি।
বিশ্বকাপে ৫৫ উইকেটের মালিক শামির চেয়ে মাত্র চারজন বোলার বেশি উইকেট শিকার করেছেন - লাসিথ মালিঙ্গা (৫৬), মিচেল স্টার্ক (৬৫), মুত্তিয়াহ মুরালিধরণ (৬৮) ও গ্লেন ম্যাকগ্রা (৭১)। এই লিস্টের বাকিদের চেয়ে কমপক্ষে ১০ ম্যাচ কম খেলেছেন শামি।

দ্বাদশ খেলোয়াড়: জেরাল্ড কোয়েতজি: এইনরিখ নরকিয়ার অবর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে একজন আগুনে বোলারের কমতি ছিল। সেই অভাব পূরণ করেছেন তরুণ কোয়েতজি। গোটা টুর্নামেন্টে গতির ঝড় তুলেছিলেন কোয়েতজি, ৮ ম্যাচে শিকার করেছেন ২০ উইকেট। ২৩ বছর বয়সী এই বোলার ১৯.৮০ গড় ও ৬.২৩ ইকোনমি রেটে এই উইকেট শিকার করেছেন।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত