ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজা, পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমে ইসরায়েলি বিভিন্ন পদক্ষেপ পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি করেছে। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে ফ্রান্স।
একইসঙ্গে এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছে দেশটি। শনিবার (৩১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, সাম্প্রতিক ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের ফলে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে দৃঢ় উদ্বেগ প্রকাশ করছে ফ্রান্স।’
গাজা উপত্যকার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় নেওয়া স্কুল এবং শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইসরায়েলি হামলার ফলে অগ্রহণযোগ্য সংখ্যক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ফ্রান্স দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করে যে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে সম্মান করার বাধ্যতা ইসরায়েলসহ সকলের জন্য প্রযোজ্য। এই ক্ষেত্রে মানবিক সহায়তাকারী বা জাতিসংঘের কর্মীদের লক্ষ্য করে হামলা অগ্রহণযোগ্য।
ফ্রান্স গত ২৮ আগস্ট গাজায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) গাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণেরও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। ওই হামলার ফলে গাজা উপত্যকায় ডব্লিউএফপি তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে।’
ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানের নিন্দা করেছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘এর ফলে অভূতপূর্ব অস্থিতিশীলতা এবং সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছে। ফিলিস্তিনি ভূমিতে উপনিবেশ স্থাপন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’
গত ২৮ আগস্ট ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তুলকারম এবং জেনিন শহরের পাশাপাশি তুবাসের কাছে আল-ফারা শরণার্থী শিবিরে ১৬ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। ২০০২ সালের পর অধিকৃত পশ্চিম তীরে এটি ইসরায়েলি বাহিনীর বৃহত্তম সামরিক অভিযান ছিল।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীর জুড়ে উত্তেজনা বেড়েছে। গাজা উপত্যকায় ১০ মাসের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে ইতিমধ্যে ৪০ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৯৪ হাজার ছাড়িয়েছে।
দখলকৃত পশ্চিম তীরে কমপক্ষে ৬৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিকে জেরুজালেমের বিষয়ে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আল আকসা মসজিদের বর্তমান স্থিতাবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। ফ্রান্স ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন গভিরের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যেরও নিন্দা করছে, যিনি প্রকাশ্যে এবং বারবার স্থিতাবস্থার বিপরীতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা ইসরায়েলি সরকারকে এই অগ্রহণযোগ্য মন্তব্যেকে দৃঢ়তার সঙ্গে নিন্দা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
গত সোমবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন-গভির জোর দিয়ে বলেন, আল-আকসা মসজিদে ইহুদিদের প্রার্থনা করার অধিকার রয়েছে। এসময় মুসলিমদের পবিত্র এই স্থানের অভ্যন্তরে একটি ইহুদি উপাসনালয় নির্মাণের অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেন তিনি।
তার এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য আরও ধর্মীয় সংঘাত উসকে দিতে পারে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে।