বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫ ৫ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫
ধামরাইয়ে ফসলি জমির মাটি ইট ভাটায়, ক্ষতি জমির উর্বরতা
ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ২:০৬ PM
ঢাকার ধামরাই উপজেলায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে খননযন্ত্র (এক্সকেভেটর) দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জমির উপরের অংশ অর্থাৎ টপ সয়েল ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে করে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে।

 উপজেলার অন্তর্গত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ধরে মানিকগঞ্জের দিকে এগুলে সড়ক থেকেই দেখা মিলবে শতাধিক ইটভাটার। ফসলি জমি, আবাসিক এলাকা, নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এসকল ইটভাটা। পরিবশে অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ধামরাই উপজেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক।

এরমধ্যে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। ইটভাটার আশপাশের কৃষি জমি ও আশপাশের এলাকায় বসবাসকারীরা ইটভাটার তাপ, ধোয়া ও ধূলাবালিতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এবং ইট প্রস্তুতের জন্য কৃষি জমির মাটি ব্যবহার করায় কমছে জমির উর্বরতা।  

ধামরাইয়ের কুশুরা ইউনিয়নের বড় কাঠালিয়া, বালিয়া ইউনিয়নের দুনিগ্রাম, নয়াচর, আমতা ইউনিয়নের জেঠাইল ব্যাপারি পাড়া, বাইশাকান্দা ইউনিয়নের বেরশ, ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়া শাইলবাড়ি, সানোড়া ইউনিয়নের আলোকদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমি কেটে মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। নগদ টাকার প্রলোভনে এবং পার্শবর্তী জমির মাটি বিক্রি করায় বাধ্য হয়ে অন্যান্য জমির মালিকরা জমির মাটি বিক্রি করছেন।

ধামরাইয়ের কাওয়ালিপাড়া থেকে বালিয়া সড়কের মাদারপুর, বাস্তা এলাকায় সড়কের উভয় পাশের বেশ কয়েকটি স্থানে ইটভাটার জন্য গভীর করে কৃষি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় সেখানে তৈরি হয়েছে গভীর খাঁদ।

একাধিক ইটভাটার মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত বছরের নভেম্বর থেকে ইট প্রস্তুতের কার্যক্রম শুর হয়। চলে পরবর্তী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে প্রতিটি ইটভাটার সক্ষমতা অনুসারে ৬০ লাখ থেকে ১ কোটি ইট প্রস্তত করে। এ ইট প্রস্তুত করতে তাদের ৫ লাখ থেকে ৯ লাখ ঘনফুট মাটির প্রয়োজন হয়। যার অধিকাংশ মাটি সংগ্রহ করা হয় ফসলি জমি থেকে।

প্রতি বছরই ধামরাইয়ের বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে আর্থিক জরিমানাসহ ইটভাটার চিমনি ও চুল্লির আংশিক গুড়িয়ে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন। তবে ওইসকল ইটভাটা কিছুদিন পরেই ভাঙা অংশ মেরামত করে পুনরায় ইট প্রস্তুতের কার্যক্রম শুরু করে দেন ইটভাটার মালিকেরা।
 
গত ২৪ জানুয়ারি বুধবার ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকার অভিযান চালিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ৭টি অবৈধ ইটভাটাকে মোট ৪৭ লাখ টাকা জরিমানাসহ ইভাটার আংশিক ভেঙে দেয়, এবং ৩১ জানুয়ারি বুধবার ৫টি ভাটাকে ৩৭ লাখ টাকা জরিমানা করেন। 

ধামরাই উপজেলার ইটভাটাগুলোর অধিকাংশ কৃষি জমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠায় এসকল ইটভাটার তাপ, ধোয়া ও ধূলোবালিতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ওই এলাকায় বসবাসকারীরা। এছাড়া খোলা ট্রাকে মাটি পরিবহনের সময় ট্রাক থেকে সড়কে পড়া মাটি পরে ধুলোয় রুপান্তরিত হয়ে চলে যাচ্ছে সড়ক লাগোয়া ফসলি জমি ও বসতবাড়িতে। এতে সড়ক ও বসতবাড়িতে বসবাসকারীরা পরছেন বিপাকে।

ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর রিফফাত আরা বলেন, ইটভাটাগুলো অবশ্যই আইনমেনে জনবসতি এলাকার বাইরে বানাতে হবে। ইটভাটার ধুলোবালি থেকে শ্বাসকষ্ট, শ্বাসনালীতে প্রদাহ, ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদী রোগ হতে পারে।
 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, সাধারণত জমির ৬ ইঞ্চি পরিমান মাটি যেকোন ধরণের ফসল উৎপাদনের জন্য খবুই জরুরি। কিন্তু ইটভাটায় জমির ১ ফুটের বেশি গভীর করে মাটি কেটে নেয়া হয়। এরফলে জমি উর্বরতা হারিয়ে ফেলে।
পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ইতিমধ্যে ধামরাইয়ে অভিযান চালিয়ে ১২টি ইটভাটাকে মোট ৮৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যহত রয়েছে।

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, ইতিমধ্যে ৪-৫টি অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে কৃষি জমির মাটি কেটে নেয়ার সঙ্গে জড়িতদের ৩-৪ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ২১ টি ড্রাম ট্রাক ৪ টি ভেক্যু জব্দ করা হয়েছে। ইটভাটা তৈরির ক্ষেত্রে জমির সুনির্দিষ্ট কোন পরিমান নেই। যে পরিমান জমি নিয়ে ইটভাটা নির্মাণ করা হয় সেই পরিমান জমির খাজনা আদায় করা হয়ে থাকে।
 
তিনি বলেন, বায়ু দূষণ কমাতে জিগজাগ পদ্ধতিতে ইটভাটা পরিচালনার জন্য ইটভাটার মালিকদের উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় আইসিডিডিআরবি উদ্যোগে উপজেলা কমপ্লেক্সে কর্মশালাও করা হয়েছে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত