বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে আটকে পড়া ১২ বাংলাদেশি আজ দেশে ফিরেছেন। তারা ভারতে পাচারের শিকার হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি ) বেলা সাড়ে তিনটায় তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের মাধ্যমে তাদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় জরুরি সহায়তা প্রদান করে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম।
দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশি নাগরিকেরা হলেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার জবা রানী রায় ও তার ছেলে জগদীশ রায়, নেত্রকোনার পূর্বধলার মোসাঃ বিউটি, চাঁদপুরের নিশ্চিন্তপুরের রিয়াহ হোসেন, যশোরের অভয়নগরের মোসাঃ বিনা বেগম ও মোঃ শেখ সাদী, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শাহিনা বেগম, জামালপুরের মেলান্দহের দুই ভাই মোঃ শামিম মিয়া ও মোঃ সুহান মিয়া, জামালপুরের ইসলামপুর থানার মোঃ ফারুখ হোসেন ও আসমা বেগম এবং ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার তৃষ্ণা অধিকারী তিশা। সাজা শেষে তিশা আগড়তলার জওহরলাল নেহেরু বালিকা নিবাসে এবং বাকিরা নরসিংগড় ডিটেনশন সেন্টারে অবস্থান করছিলেন।
পরিবার ও সহকারী হাই-কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ১২ বাংলাদেশি, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে আটক হয়েছিলেন। এরপর সেদেশের আদালতের নির্দেশে তারা সাজা ভোগ করেন। সাজা শেষে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই করা হয়। এরপর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভারতে যোগাযোগ করে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে সেদেশের সরকারের অনাপত্তি সংগ্রহ করে আগরতলার সহকারী হাইকমিশন।
আখাউড়া স্থলবন্দরে তাদেরকে ভারত থেকে গ্রহণ করার সময় ভারতের ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ, বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রথম সচিব মো. আল আমীন, আখাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া আক্তার, ওসি ইমিগ্রেশন হাসান আহমেদ ভূঁইয়া এবং বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের নিজ নিজ আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তরের সময় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে পাচারের শিকার ব্যক্তিদেরকে জরুরি সহায়তা হিসেবে খাবার, জরুরি কাউন্সেলিং সেবা ও অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। নগদ সহায়তা তাদের হাতে তুলে দেন আখাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব রাবেয়া আক্তার। এ সময় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের ম্যানেজার সজীব কুমার পাণ্ডে, ম্যানেজার মোঃ হোসেন খান এবং ডেপুটি ম্যানেজার শায়লা শারমিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে আমাদের জন্য খুবই আনন্দের দিন যে আমরা ১২ জন বাংলাদেশিকে প্রত্যাবাসন করতে পারছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের মানবপাচার ও অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে জনসচেতনতা আরও জোরদার করতে হবে।”
ফেরত আসা এই বাংলাদেশিদের পাশে থাকার জন্য আখাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব রাবেয়া আক্তার ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামকে ধন্যবাদ জানান।
ফেরত আসা জবা রানী রায় ও জগদীশ রায়ের পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রায় দেড় বছর আগে দালালের মাধ্যমে তারা ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে ভারতে যান। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে ধরা পরেন এবং সাজা ভোগ করেন। পরবর্তীতে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই করে দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হয়।