সারাদিন শুয়ে বসে কেটে যায় ইব্রাহীমের একঘেয়মি জীবন। এরই ফাঁকে কখনো মায়ের কোলে, কখনো ঘরের বারান্দার মেজেতে, আবার কখনো প্লাস্টিক ঝুড়িতে সন্ধ্যা নামে জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী দশ বছর বয়সী মোঃ ইব্রাহীমের। দরিদ্র দিন মজুর পিতা দেলোয়ার ফরাজী ও মা চম্পা বেগমের সামর্থ নেই বিকলঙ্গ পুত্রের ভাত কাপড়ের যোগান দিয়ে একটি হুইল চেয়ার কিনে দেবার। সেই স্বপ্ন পূরণ করলো উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল কাইয়ুম।
“বাংলা ইশারা ভাষা দিবস” এ প্রতিবন্ধি ইব্রাহিম মায়ের কোলে চড়ে আসেন মঠবাড়িয়া উপজেলা সদরে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় নির্বাহী অফিসার। তুলে দেন অত্যাধুনিক হুইল চেয়ার। এভাবেই হুইল চেয়ারের বসে মঠবাড়িয়া উপজেলার বাদুরা গ্রামে নিজ বাড়িদে ফেরে ইব্রাহীম।
জানা গেছে, দেলোয়ার ও চম্পা দম্পতির ঘরে প্রথম সন্তান ইব্রাহীম শারীরীক সমস্যা নিয়ে জন্ম নেয়। কোন রকম চলা ফেরা বা উঠে দাঁড়াবার মত কোন শক্তি বা সক্ষমতা নেই ইব্রাহীমের। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ে লেখা পড়ারও সুযোগ পায়নি ইব্রাহীম। কাক ডাকা ভোরবেলাতেই দিন মজুর পিতা বের হতেন কাজের সন্ধানে। মা বিকলঙ্গ ইব্রাহিমকে লালন পালন করতেন। অর্থ সংকটে থাকলেও প্লাষ্টিকের ঝুড়িতে করে ছেলেকে চিকিৎসার জন্য বহু জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েও স্বাভাবিক জীবনে ফেরারত পারেনি।
পরে স্থানীয় এক সামাজিক উদ্যোক্তা ও সাংবাদিক ইসরাত জাহান মমতাজ বিষয়টি জানতে পেরে মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল কাইয়ুমকে অবহিত করেন। মানবিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়ের সহযোহীতায় বাংলা ইশারা ভাষা দিবসে হুইল চেয়ার তুলে দেয়। এসময় ইব্রাহীম সহ পাঁচজনকে হুইল চেয়ার ও দু'জনকে ট্রাইসাইকেল প্রদান করা হয়।
এসময় উপজেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা ফিরোজ আলম, সাংবাদিক ইসরাত জাহান মমতাজ ও থ্রাপি সহকারী শরীফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
ইব্রাহীমের মা চম্পা বেগম বলেন, আমি কোন দিন ভাবি নাই আমার ছেলে হুইল চেয়ারে চড়বে। জন্ম থেকেই অনেক কষ্টের মধ্যে তাকে বড় করছি। হুইল চেয়ার দেয়ায় প্রশাসনকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল কাইয়ূম বলেন, প্রতিবন্ধীরা অবহেলিত নয়। তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে সরকার নানামুখি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এতে গ্রামঞ্চলের প্রতিবন্ধীরা উপকৃত হচ্ছেন। বাংলা ইশারা ভাষা দিবসে এই শিশুটিসহ আরও ছয়জনকে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা আনন্দিত।