শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫ ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
মাইক্রোফ্যাইন্যান্স ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর উদ্বোধন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১২:২২ AM আপডেট: ০৯.০২.২০২৪ ১:০৬ AM
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কারিগরি সহযোগিতায় মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি (এমআরএ) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন মাইক্রোফ্যাইন্যান্স ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (MF-CIB)  এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর জনাব আব্দুর রউফ তালুকদার প্রধান অতিথি হিসেবে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। 

এমআরএ’ র এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ফসিউল্লাহ্ এর সভাপতিত্বে আমন্ত্রিত এ অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সংস্থা, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, পিকেএসএফ, সরকারী বেসরকারী ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও কর্মকর্তাগণ, ক্ষুদ্রঋণ খাতের নেটওয়ার্কিং এজেন্সি, সাংবাদিকবৃন্দ এবং এমআরএ এর কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  

প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর জনাব আব্দুর রউফ তালুকদার এমআরএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন মাইক্রোফ্যাইন্যান্স ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (MF-CIB) এর উদ্বোধন করেন এবং তিনি তাঁর বক্তব্যে এ ব্যুরোর প্রয়োজনীয়তা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্র বিস্তৃতকরণ এবং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে এমন পদক্ষেপ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে মর্মে আশা ব্যক্ত করেন। এর মাধ্যমে আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠি এর সুফল পাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “MF-CIB বাস্তবায়নের ফলে একটি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ হিসেবে এমআরএ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে একধাপ এগিয়ে গেল। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিজের সেবা এবং কার্যক্রমকে জনগণের চাহিদার সাথে খাপ-খাপিয়ে অটোমেটেড এবং ডিজিটালাইশন করা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে MF-CIB হতে পারে উত্তম গ্রাহক যাচাই ও নির্বাচনে অন্যতম পাথেয়। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা এবং সেবা ডিজিটাইলেজশন কোন বিলাসিতা হওয়া উচিত নয়, এটি এমন একটি হাতিয়ার হওয়া উচিত যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পথে প্রতিটি নাগরিককে উন্নীত করে এবং অন্তর্ভুক্ত করে।”

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ মাজেদুল হক  স্বাগত বক্তব্যে উল্লেখ করেন আর্থিক খাতে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আর্থিক অর্ন্তভুক্তিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে দ্রুততম সময়ে সরকারি সেবা গ্রাহকের কাছে পৌছে দেয়া যাবে। গত এক দশক যাবত ক্ষুদ্রঋণ সেক্টরের চাহিদা, গবেষক, অর্থনীতিবিদগণের পরামর্শ ও সর্বোপরি এ সেক্টরের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ববোধ থেকে এমআরএ মাইক্রোফাইনান্স সেক্টরের জন্য একটি প্রযুক্তি নির্ভর, গ্রহণযোগ্য ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (CIB) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে, যা আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূর্নতা পেল।

ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান তথা ক্ষুদ্রঋণ খাতের নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে MF-CIB এর গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন যে, এর মাধ্যমে আজকে ক্ষুদ্রঋণ খাত এক অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে গেল। তারা এতে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এর যথাযথ সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিতকরণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) MF-CIB এর গুরুত্ব, কারিগরি দিক, তথ্যের নিরাপত্তা তথা সাইবার সিকউরিটি, অপারেশন পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন এবং এর সাফল্য কামনা করেন।

গ্রাহক/ঋণগ্রহীতার NID যাচাই করে MF-CIB প্রস্তুত করা হচ্ছে। API( Application Programming Interface) এর মাধ্যমে  NID তথ্য ভান্ডার থেকে লিংক নিয়ে  গ্রাহকের তথ্য যাচাই করা হবে। এজন্য MRA ও NID অথরিটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। MF-CIB বাস্তবায়নের ফলে যথাযথ গ্রাহক নির্বাচন, গ্রাহকের ঋণ যোগ্যতা যাচাই ও ইতিহাস জানা সম্ভব হবে। 

একইসাথে, গ্রাহকের আর্থিক সেবাভুক্তি সহজতর করা, মাইক্রোফাইনান্স সেক্টরের সচ্ছতা আনয়ন এবং গ্রাহকের ঋণ প্রাপ্তির প্রতিবদ্ধকতা দূর করা সহজ হবে। উদ্যোক্তা সৃষ্টির পথ সুগম করা তথা প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক খাতের (Formal Financial Sector) সাথে ক্ষুদ্র উদ্যোগ ঋণের সংযোগ স্থাপনের পথ আরো সুগম হবে।  

MF-CIB ডাটাবেজ এ গ্রাহকের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বৈবাহিক অবস্থা, জেন্ডার, স্বামী/স্ত্রীর নাম, জন্ম তারিখ, যোগাযোগের নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (National ID/ Smart Card No), জন্ম সনদ নাম্বার (Birth Certificate No), TIN নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি সংরক্ষিত থাকবে। গ্রাহকের ঋণের ধরণ, বিতরণকৃত ঋণের পরিমান, ঋণস্থিতি, কিস্তির সংখ্যা, সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধের তারিখ, সঞ্চয়, গ্রাহক কল্যাণ তহবিল, ঋণ শ্রেণীকরণ তথ্য, অগ্রিম আদায় ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশিত থাকবে। ফলে ব্যাংকিং খাতের ন্যায় ক্ষুদ্রঋণ খাতের সকল গ্রাহকের ঋণের তথ্য প্রাপ্তি সম্ভব হবে।  

স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা নিশ্চিত করে  টেকসই জনবান্ধব ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এমআরএ প্রতিষ্ঠা করা হয়। জুন ২০২৩ অনুযায়ী এমআরএ এর সনদ প্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৩১টি, গ্ৰাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৮ লক্ষ, বিতরণকৃত ঋণ ১ লক্ষ ৯১ হাজার কোটি টাকা, ঋণস্থিতি ২ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা, শাখার সংখ্যা ২৫,৩৩৬ টি। বর্তমানে এ খাতে ২ লক্ষ ৬ হাজার  কর্মকর্তা/কর্মচারীর অংশগ্রহনের মাধ্যমে সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ৪ কোটি ৮০ লাখের বেশি পরিবার ক্ষুদ্রঋণ পরিষেবার আওতায় রয়েছে। গ্রামীণ অর্থায়নের প্রায় ৭৩ শতাংশ যোগান আসে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ কৃষি এবং ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ হয় ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতে।  

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তত্ত্বাবধানে এমআরএ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা DFID এর সহযোগিতায় ২০১৭ সালে MF-CIB স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়। 

২০১৭ সালের ৮ই আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ও এমআরএ এর মধ্যে কারিগরি সহায়তা (সফটওয়্যার নির্মাণ, ডাটা সেন্টার, ডিজাস্টার রিকভারি সাইট ও টেকনিক্যাল মেইনটেনেন্স সাপোর্ট) প্রদান বিষয়ে একটি MoU স্বাক্ষরিত হয়। ৫ জুলাই, ২০১৮ তারিখে ERD এবং DFID এর মধ্যে আরও একটি সংশোধিত MoU স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত সমঝোতার ফলে Business Finance for the Poor in Bangladesh (BFP-B) প্রকল্পে নতুন একটি Component হিসাবে MF-CIB যুক্ত হয়। জানুয়ারি, ২০২১ সালে প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ায় পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সার্বিক সহায়তায়, এমআরএ’র তত্ত্বাবধানে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কারিগরি সহায়তায় MF-CIB এর বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

বর্তমানে পাইলটিংয়ে অন্তর্ভুক্ত ৫০ টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ৪৬৪ টি শাখার প্রায় ০৫ (পাঁচ) লক্ষ গ্রাহকের তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইকরন শেষে ডাটাবেইজে সন্নিবেশিত হয়েছে। 2024 সালের মধ্যেই উক্ত ৫০ টি প্রতিষ্ঠানের সকল শাখা (প্রায় ১৪০০০ শাখা)’র তথ্য MF-CIB তে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ২০২৫ সাল নাগাদ লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৭৩১ টি MFI এর দেশ ব্যাপী বিস্তৃত ২৫,৩৩৬ টি শাখার ৪.০৮ কোটি গ্রাহক MF-CIB এর আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। 

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে এমআরএ’র এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ফসিউল্লাহ্ বলেন যে, স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনালগ্নেই সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রান্তিক জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে Rural Social Services (RSS) নামীয় প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৭৪ সালে প্রথম জমানত ও সুদ বিহীন ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

পরবর্তীতে ১৯৯৬ সনে জাতীর পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় আসনে আসীন হয়েই এখাতে স্বছ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করার নির্দেশনা প্রদান করেন এবং উক্ত নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আইনের মাধ্যমে এমআরএ প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণ দেশে সুবৃহৎ আর্থিক খাত হিসেবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য কাজ করছে।

এ বিশাল খাতকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ন্যাশনাল ডাটাবেইজ, এমএফ-সিআইবি, ইন্ট্রিগ্রেটেড মাইক্রোফাইন্যান্স সলিউশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সফটওয়্যারগুলো একটি আর একটির সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে। এমএফ-সিআইবি  বাস্তবায়নে ক্ষুদ্রঋণখাত আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। এর ফলে ঋণগ্রহীতাদের তথ্য পাওয়া এবং ঋণগ্রহীতাদের যে সফলতা তা আরো সহজ হবে এবং এর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ২০৪১ সনের উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং জাতীর পিতার সোনার বাংলা বিনির্মানে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। এমএফ-সিআইবি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

পরিশেষে এই MF-CIB প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত এবং অনুষ্ঠানে আগত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিসহ উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত