কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে দিন দিন পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ছে শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্ক। স্থানীয়রা বলছেন, গত ২৪ বছরে পার্ক সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এছাড়া নতুন নতুন রাইডস অর্ন্তভুক্ত না হওয়ায় এই সম্ভামনাময় পর্যটন কেন্দ্রটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা। অন্যদিকে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ইকোপার্কের উন্নয়নে চিন্তা ভাবনা চলছে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।
মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় এবং স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা। ১৯৯৯ সালে ময়মনসিংহ বন বিভাগ এই উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের সমসচূড়া বিট এলাকার প্রায় ৯৭২ বিঘা পাহাড়ি টিলার উপর মধুটিলা ইকোপার্ক নির্মাণ করে। ওই সময় একটি রেস্ট হাউস, পাহাড়ি লেকে প্যাডল বোট, স্টার ব্রিজ, মিনি চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, মৎস্যকন্যা, হাতি, বাঘ, হরিণ, কুমিরসহ বিভিন্ন জীবজন্তুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি পার্কের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য রোপন করা হয় হাজারো প্রজাতির গাছ। সেই সাথে গড়ে তোলা হয় মৌসুমি ফুলের বাগান।
স্থানীয় শাহজাহান মিয়া, আব্দুল বাতেন ও একাব্বর আলী বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে গত ২৪ বছরে এই পার্কের কোন রকম সংস্কার করা হয়নি। এছাড়া নতুন কোন রাইডস বা স্থাপনা গড়ে না উঠায় একই দৃশ্য বারবার পর্যটকরা দেখতে এসে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ফলে ইকোপার্কের ভেতরে খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন খেলনা ও আসবাবপত্রের দোকানের মালিকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। সেই সাথে ইকোপার্কের ইজারাদাররাও প্রতি বছর লোকসান গুণে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বলেন, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ইকোপার্কে শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকদের ভিড় থাকলেও এবার রাজনৈতিক ও নির্বাচনের কারণে সবেমাত্র পর্যটকদের আগমন শুরু হয়েছে। কিন্তু হাতে রয়েছে মাত্র দেড় মাস। এই স্বল্প সময়ে পর্যটকদের আনাগোনা যতই বাড়ুক স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং ইজারাদাররা লোকসানের মুখে পড়বেই।
আরেক ব্যবসায়ী হুমায়ুন শেখ বলেন, এই পার্ক ঘিরে গড়ে ওঠা শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় সবাই লোকসানের মুখে। সেইসাথে ইকোপার্কে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষা সফর ও বনভোজনে আগত পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল স্থানীয় শ্রমজীবী মানুষ কাজ না পেয়ে বেকার জীবন যাপন করছে বলে তিনি জানান।
ইকোপার্ক এলাকার বাসিন্দা আমজাদ আলী বলেন, সীমানা প্রাচীর না থাকায় প্রায়ই বন্যহাতি ইকোপার্কের পাহাড়ের চূড়ায় উঠে ব্যবসায়ীদের দোকান পাট ভাঙচুর ও মালামালের ক্ষয়ক্ষতি করছে। এছাড়া পার্কের বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে ফেলার ঘটনায় পর্যটক এবং স্থানীয়দের মাঝে হাতি আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় বেশ কিছু বখাটে যুবক প্রায়ই পার্কের টিলার উপর জুয়ার আসর বসায়। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করা হলেও কোন সুরাহা হয়নি। এখন বন বিভাগের পক্ষ থেকে ইউএনওকে জানানো হবে।
ইকোপার্কের ইজারাদার রিয়াজ এন্ড আসাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান বাবলু বলেন, ২০ লাখ টাকা দিয়ে ইকোপার্কের ক্যান্টিন, টাওয়ার, লেক, শিশুপার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা ইজারা নিয়ে এখনো তিন লাখ টাকাও তুলতে পারিনি। অথচ এই ইজারার মেয়াদ আছে মাত্র দেড় মাস। পার্ক সংস্কার না হওয়া, নতুন কোন রাইডস যুক্ত না হওয়ায় পর্যটকরা আর আসতে চাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
এন. নাহার এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইজারাদার সাদ্দাম হোসেন বলেন, ইকোপার্কের প্রধান গেটসহ বিভিন্ন স্পট ৬৭ লাখ টাকা দিয়ে ডেকে নিলেও গত ১১ মাসে অর্ধেক টাকাও উঠেনি।
এদিকে ইকোপার্কের উন্নয়নের বিষয়ে মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম কোন মন্তব্য করতে চাননি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ইকোপার্ক উন্নয়নে চিন্তা ভাবনা চলছে।
অন্যদিকে পার্ক এলাকার পাহাড়ের মাটির গুণগত মান ভালো না বিধায় ধীরে স্থিরে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।