শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫ ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
ইংরেজি ভাষার আগ্রাসন
ইলিয়াজ হোসেন রানা
প্রকাশ: শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪, ৪:৪৬ PM
ভাষা যেমনিভাবে কোন জাতির সভ্যতা-সংস্কৃতির সংরক্ষক, তেমনিভাবে সে জাতির মাঝে ঐক্য-সংহতির একটি মাধ্যম বটে! ভাষার মাধ্যমে সকল জাতি উন্নতি-অগ্রগতি লাভ করে মর্যাদা ও উচ্চতার শীর্ষ  চূড়ায় আরোহন করে। তাদের মাঝে ঐক্য-সংহতির ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। 

কিন্তু ভাষাকে যদি তার আসল মর্যাদা ও সঠিক স্থান না দেওয়া হয়, তাহলে জাতিসমূহের মধ্যকার ঐক্য ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তাদের ভ্রাতৃত্ববোধ, একতা-সংহতি ধুলোয় মিশে যায়। এ কারণে যে দেশে শুধু একটি ভাষায় কথা বলা হয়,  সে দেশ অর্থনীতি ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে ঐই দেশের তুলনায় বেশি মজবুত ও শক্তিশালী, যে দেশে একাধিক ভাষায় কথা বলা হয়। কারণ একই ভাষা হওয়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভারত  একটি বহু ভাষার দেশ হওয়ার কারণে গর্ববোধ করে। কিন্তু ভাষা সে দেশের রাজনৈতিক ও অস্থিতিশীলতার বড় কারণ। জামাল উদ্দিন আফগানির ভাষায়, যদি ওসমানি খেলাফতের পতনের কারণ বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে এটাও স্পষ্ট হয় যে, আরবি ভাষা ওসমানি খিলাফতের রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা পায় নি। এজন্য আরবি ও তুর্কি জাতীয়তাবাদের স্লোগান এবং সুবিশাল ইসলামি সাম্রাজ্য ওসমানি খেলাফত ভেঙে  টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সুতরাং এতে দ্বিমতের আর কোন অবকাশ নাই যে, কোনো জাতির মাঝে বিদেশি ও অপরিচিত  ভাষার  অনুপ্রবেশ কী পরিমাণ বিপজ্জনক। 

অতঃপর এই ভয়াবহতা বিদেশি ভাষা দুর্বল ও কমজোর হওয়া সত্ত্বেও অবশিষ্ট ও অব্যাহত থাকে। কিন্তু যদি বিদেশি ভাষা শক্তিশালী ও বিকশিত হওয়ার উপায়-উপরণের মাধ্যম হয়, তাহলে সংগঠিত বিপর্যয়ের অনুমান করা অসম্ভব। বড়জোর এতোটুকু বলা যেতে পারে যে, তখন বিদেশি ভাষা দেশীয় ভাষার উপর প্রবল হয়ে যায় এবং বিদেশি ভাষার ব্যবহারকেই কারো সভ্য, ভদ্র  ও শিক্ষিত হওয়ার নিদর্শন মনে করা হয়। সে ভাষায় কথোপকথনকারীদের ইজ্জত-সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয় এবং তাদের দেশি ও স্থানীয় ভাষায় কথোপকথনকারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হয়ে যায়। তাহলে এভাবেই বিদেশি ভাষা ধীরে ধীরে দেশীয় সংস্কৃতিকে নির্মূল  করে নিজের সাথে আনীত সভ্যতা-সংস্কৃতিকে ভিনদেশি জাতির উপর চাপিয়ে দেয়। 

ইংরেজি একমাত্র ভাষা যার বিশ্বায়ন ঘটছে। এই ভাষাকে সামান্য কিছু দেশের ভৌগোলিক সীমারেখা হতে বের করে অসীম ও সীমাহীন বানানো হচ্ছে। এখন এই ভাষাতে শুধু কয়েকটি দেশের বাসিন্দারাই কথা বলেন না, বরং প্রতিটি দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকও এই ভাষাকে নিজ ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছে। আর এটাই ভাষাগত বিশ্বায়নের রাস্তায় একটি অগ্রসরমান পদক্ষেপ। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য সেদিন পূর্ণ হবে যেদিন প্রতিটি দেশের জাতীয় ভাষা ইংরেজি হয়ে যাবে। বিগত শতাব্দীর শেষ দশকে মার্কিন অর্থনীতি ও মিডিয়ার আধিপত্যের ফলে ইংরেজি ভাষার ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। অতঃপর ইন্টারনেটের ব্যবহার তো আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে; এর বিকাশর সকল রাস্তা উন্মুক্ত ও সহজ করে দিয়েছে, যার পরিণতিতে মার্কিন সংস্কৃতির মুখপাত্র ইংরেজি ভাষার শব্দ ও বাক্য জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের মুখে ব্যাপক হয়ে গেছে, এমনকি জার্মান ও চীনা ভাষাবিদগণ ইংরেজি ভাষার এই ব্যাপকতাকে নিজেদের ভাষার জন্য বিপদ মনে করছেন।

বিশ্বায়নবাদীরা ব্রিটিশ ইংরেজির প্রসার করতে চায় না বরং তাদের সকল প্রচেষ্টা মার্কিন ইংরেজি বিস্তার ঘটনোর উপরই ব্যয় হচ্ছে। তারা মার্কিন ইংরেজিকেই বিশ্বব্যাপী ছড়াতে চাচ্ছে। এজন্য সব ইংরেজি ভাষাই আন্তর্জাতিক ভাষা নয়, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে ইংরেজি বলা হয় তাই মূলত আন্তর্জাতিক ভাষা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইংরেজি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রসারের ফলে অন্যান্য দেশের ইংরেজিও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। ১৭৮৩ সনে মার্কিন ইংরেজির জন্ম হয়। সে সময় ওয়েবস্টার, টাস বিন ও উইলিয়াম স্মিথ-এর মতো মার্কিন সাহিত্যিকগণ নতুন আবিষ্কৃত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনির্মাণে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে কাজ করেছিলো। সে সমস্ত সাহিত্যিকদেরও এই ধারণা ছিল যে, মার্কিন জাতি ভবিষ্যতে এই প্রদীপ হাতে নিয়ে সামনে অগ্রসর হবে, যা দ্বারা গোটা বিশ্বে আলো ছড়িয়ে পড়বে। ফলে তারা এমন মার্কিন ইংরেজির জন্ম দিলো যা উচ্চারণ ও বানানে ব্রিটিশ ইংলিশ থেকে ভিন্ন ছিল। সুইজারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের বিভাগগুলো প্রায় এক শতাব্দী পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। বিগত শতাব্দীর সত্তরের দশক পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু সে সকল শিক্ষার্থীকেই ডিগ্রি প্রদান করেছে, যারা ইংরেজি ভাষা ও ব্রিটিশ সাহিত্যিকদের জীবনী নিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু এরপর ব্রিটিশ সাহিত্যিকদের সাথে একজন মার্কিন সাহিত্যিকের জীবনী ও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হলো। তারপর শেক্সপিয়ার ছাড়া কোনো ব্রিটিশ সাহিত্যিক সম্পর্কে পড়ানো পছন্দ করে না।

ব্রিটিশ সাহিত্যিকদের স্থান দখল করে নেয় মার্কিন সাহিত্যিকরা। এর সাথে সাথে ইংরেজি পড়ানোর জন্য এমন শিক্ষক ও প্রফেসর নিয়োগ দেয়া হয়, যারা মার্কিন বংশোদ্ভুত কিংবা ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছে, এমনকি শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন কমিটিতে তাদেরই প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়তে লাগলো। তাদের প্রচেষ্টার ফলে ছাত্রদের অধিকাংশই মার্কিন ইংরেজিকে প্রাধান্য দিতে লাগলো।

www.krysstal.comঅনুযায়ী ইংরেজি বিশ্বের ৩০০ মিলিয়ন লোকের মাতৃভাষা, ৩০০ মিলিয়ন লোক একে দ্বিতীয় ভাষাা হিসেবে ব্যবহার করে, ১০০ মিলিয়ন লোক একে বিদেশি ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে। ৪৫টি দেশ এমন রয়েছে যেখানে ইংরেজি সরকারি কিংবা বেসরকারি ভাষার মর্যাদা অর্জন করেছে। উক্ত ওয়েবসাইটের মতে, ফ্রেন্স, স্প্যানিস ও আরবি ভাষার গণ্ডি যথাক্রমে ২৭, ২০ ও ১৭টি দেশে সীমাবদ্ধ ; ইংরেজি এর থেকে বহুগুণে বেশি। 

একটি জার্মান সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত এক গবেষণার দ্বারা জানা যায়, ইন্টারনেটের ৭৭ শতাংশ পৃষ্ঠা ইংরেজি ভাষায়। আর বিশ্বের অবশিষ্ট ভাষাগুলো শুধু ২৩ শতাংশ পৃষ্ঠা ব্যবহার করে। জাতিসংঘের পরিবেশসংক্রান্ত কর্মসূচির একটি টিমের গবেষণা দ্বারা জানা যায়, গোটা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক আঞ্চলিক ভাষা পতনের পথে ধাবমান। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হল এই পরিস্থিতি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ও পরিবেশ উভয়ের জন্যই অনুতাপের। বিশ্বায়নের কারণে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাচীন জাতিসমূহের সংরক্ষিত প্রাকৃতিক রহস্য যেমন কিসসা-কাহিনী, নভেল-নাটক, শিল্প কারিগরি দক্ষতা ইত্যাদি চিরকালের জন্য অতিদ্রুত দাফন হয়ে যাবে। গবেষকদের মতে, ২৩৪টি সমকালীন ভাষা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে গেছে। আর পুরো বিশ্বের ৯০% আঞ্চলিক ভাষা একবিংশ শতাব্দীতে নির্মূল হয়ে যাবে। জাতিসংঘের পরিবেশসংক্রান্ত কর্মসূচির চেয়ারম্যান ক্লাসটুবিফার সতর্ক করেছেন, বিশ্ববাজারে যে মুক্তবাণিজ্যকে আমরা অর্থনৈতিক উন্নতির গ্যারান্টি মনে করেছি, প্রকৃতপক্ষে এটাই অগণিত সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক ঐতিহ্যকে জীবন্ত প্রোথিত করে দেবে। গবেষণা কমিটি স্বীয় রিপোর্টে একথা উল্লেখ করেছেন, ৩২ শতাংশ আঞ্চলিক ভাষা এশিয়াতে পাওয়া যায়, ৩০ শতাংশ আফ্রিকাতে, ১৯ শতাংশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, ১৫ শতাংশ আমেরিকা মহাদেশ এবং ৩ শতাংশ ইউরোপে পাওয়া যায়। আফ্রিকান দেশ কেনিয়া তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানে। সেখানে অনেক ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। কেনিয়াতে সর্বোচ্চ ৮৪৭টি ভাষা রয়েছে, নাইজেরিয়াতে ৩৭৬টি, ভারতে ৩০৮টি, অস্ট্রেলিয়াতে ২৬১টি, মেক্সিকোতে ২৩০টি, কেমিনে ২০১টি, ব্রাজিলে ১৮৫টি, কঙ্গোতে ১৫৮টি, ফিলিপাইনে ৫৩টি ভাষা রয়েছে। এ সকল ভাষা বর্তমানে শুধু ইংলিশের কারণে স্বীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম করে যাচ্ছে এবং ক্রমেই পতনের পথ। খুব নিকটে এমন সময় আসবে যখন তার উপর মাতমকারীও কেউ থাকবে না এবং সাংস্কৃতির ধ্বজাধারীদের মজলিসে হয়তো বা কখনো কখনো আলোচনা তাদের মুখ দিয়েই হবে যারা পুরো বিশ্বের তাবৎ সংস্কৃতি নির্মূল করার প্রকৃত জিম্মাদার। 

ইংরেজি ভাষার বিশ্বায়নের জোরদার, বিকাশ ও বিস্তারকে দেখে অনেক জাতির এই আশঙ্কা সৃষ্টি হয়ে গেছে, যদি তারা নীরব ভূমিকা পালন করতে থাকে তাহলে তাদের ভাষা ইংরেজির মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে এবং আমাদের নিকট যে একক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রয়েছে তা নির্মূল হয়ে যাবে। এ সকল জাতি মার্কিন সভ্যতার প্রসারকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে অতিসহজে অস্ত্রসমর্পণ করতে প্রস্তুত মনে হচ্ছে না।

ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় দেশ ইংরেজির সীমাহীন প্রসারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। সে দেশের জনগণ এক্ষেত্রে সরকারের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার সংকল্প করছে। এমনকি যারা নিজেদেরকে স্বাধীন, মুক্ত, উদারপন্থি, সংকীর্ণ মনোভাবের বিরোধী ও প্রগতিপ্রিয় মনে করত, এখানে এসে তারা সংকীর্ণমনা, পশ্চাৎপদ ও গোড়া হয়ে গেছে। কোনো কঠিন প্রয়োজন যদি তাদেরকে ইংরেজি শিখতে বাধ্য করে, তাহলে তা ভিন্ন কথা, নতুবা তারা এই ভাষার কোনো শব্দ পর্যন্ত বলা অপমান মনে করে। যারা ফ্রান্সের গলিতে ঘুরেছে তারা ভালোভাবে জানে, ফরাসি জাতির গোড়ামি এমন তীব্র আকার ধারণ করছে যে, ইংরেজিতে প্রশ্নকারী ব্যক্তি বিদেশি হওয়া সত্ত্বেও তারা তাকে নিজের ভাষাতেই উত্তর দেয়, সে বুঝুক আর না বুঝুক-এর সাথে তার সম্পর্ক নেই। তারা বিদেশি ব্যক্তিকে ইশারা ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করলেও ইংরেজির একটি অক্ষরও মুখে আনতে পছন্দ করে না। অথচ ফ্রান্স ও মার্কিন সভ্যতার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মাঝে এই অভিন্ন একক সভ্যতা-সংস্কৃতি হওয়া সত্ত্বেও যখন ভাষার কথা আসে তখন ফ্রান্স শত্রুর ভূমিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দাঁড়ায়।

প্রিয় ভাষার হেফাজত ও ইংরেজির সংমিশ্রণ থেকে বাঁচানোর জন্য ফ্রান্সের চেষ্টা-প্রচেষ্টার অনুমান তাদের নেতানেত্রীর চেষ্টা-প্রচেষ্টা এবং তাদের ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-ভাবনা থেকেই করা যায়। জার্মানীর জনগণ প্রিয় মাতৃভাষাকে ইংরেজির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কারণ তারা নিজ ভাষাকে গর্বের মনে করে। এজন্য জার্মান ভাষার উপর আগ্রাসনকে নিজেদের জাতিসত্তার উপর আগ্রাসন মনে করে। জার্মানির জনগণই আজ প্রায় ২ দশক পূর্বে শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমে বার্লিন প্রাচীর ভেঙে দিয়েছিল এবং পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মধ্যকার দূরত্বকে নির্মূল করে নজিরবিহীন ঐক্যের প্রমাণ দিয়েছিলো। আজ এ জনগণ ইঙ্গ-মার্কিন থেকে আসা ইংরেজির চাদর পরা সংস্কৃতির সামনে একটি লৌহ প্রাচীর নির্মাণ করতে চায়, যাতে তারা প্লাবন ও সয়লাব থেকে নিজস্ব সংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র ও ভাষাকে রক্ষা করতে পারে। জার্মানির জনগণ যতই দিন যাচ্ছে ততই এই দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে, আমাদের জাতীয় ভাষাকে অন্যান্য ভাষা বিশেষ করে ইংরেজির প্রভাব থেকে বাঁচানোর জন্য আইন পাশ করা হোক। যাতে জার্মান ভাষা চিরকালের জন্য জীবন্ত হয়ে থাকে। চীন হলো তৃতীয় দেশ, ভাষাগত বিশ্বায়নের ব্যাপারে সতর্কতা ও সচেতনতার সাথে চিন্তা-ভাবনা করছে। চীনা বিশেষজ্ঞদের ধারণা তরুণ ও যুবসমাজ মার্কিন ফিল্মে প্রচন্ড আগ্রহী হওয়ার কারণে, তারা মার্কিন সভ্যতা দ্বারা খুব প্রভাবিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চীনা বিশেষজ্ঞদের সংস্কৃতি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে। তারা চীনা ভাষা রক্ষার জন্য সরকারের নিকট আইন পাস করার জোর আবেদন করছে। ফলে ২০০১ সালের জানুয়ারিতে এ ব্যাপারে একটি আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়। এই আইনের আলোকে মিডিয়া ও প্রচার মাধ্যমগুলো প্রাচীন চীনা ভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।

পৃথিবীর ১৯৫টি দেশের মোট ভাষা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। তবে ভাষাবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এই সাড়ে ছয় হাজার ভাষার অর্ধেকই এই শতাব্দীর ভেতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে, কারণ প্রতি দুই সপ্তাহে আনুমানিক একটি ভাষা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বা মৃত্যুবরণ করছে। বাংলাদেশে যে ৪১টি ভাষার কথা বলা হয়েছে তার ১৪টি ভাষা খুবই বিপন্ন, যদি আশু কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে এ ১৪টি ভাষাও কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে। সুতরাং আমাদের দেশের কবি, সাহিত্যিক, লেখক, কথাশিল্পী এবং ভাষাবিদদের পাশাপাশি বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা সম্মিলিতভাবে কাজ করে, আমাদের প্রিয় মাতৃভাষাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন, সেই স্বপ্নটি ইতোমধ্যে আমরা দেখতে শুরু করেছি, এবারে তার বাস্তবায়ন দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে আছি। 

লেখক : প্রভাষক, সরকারি ইস্পাহানী ডিগ্রি কলেজ কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত