দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে নাটোরের নলডাঙ্গায় আনুষ্ঠানিক ভাবে দলিল রেজিস্ট্রির মধ্যে দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি ক্যাম্প অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই রেজিস্ট্রি করা হয়েছে ৭৮ টি দলিল। আর এই রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম চালু হওয়ায় এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ও হয়রানী লাঘব হয়েছে বলে দাবী করেছেন সেবা প্রত্যাশীরা।
মঙ্গলবার (০৫ মার্চ) দুপুরে জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর অস্থায়ী কার্যালয়ে দাতা উপজেলার খোলাবাড়িয়া গ্রামের শমসের আলী ও গ্রহিতা আশরাফ আলীর ৩৩ শতাংশ জমির দলিল রেজিস্ট্রির মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সাব রেজিস্টার গোলাম সারোয়ার। এর আগে গত ২৪ ফেব্রয়ারী (শনিবার) নলডাঙ্গা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি ক্যাম্প অফিসের উদ্বোধন করেন নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা ) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল।
জানাযায়, ২০১৩ সালের ২৭ মে নলডাঙ্গা থানাকে উপজেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে শুরু করা হয় উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রম। পর্যায়ক্রমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, প্রাণি সম্পদ অফিস, উপজেলা খাদ্য অফিস, ফায়ার স্টেশনসহ বিভিন্ন অফিস ও অবকাঠামো নির্মান করা হলেও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস চালু করা হয়নি। ফলে এতদিন নলডাঙ্গা থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নাটোর সদরে গিয়ে নলডাঙ্গাবাসীর জমি রেজিস্ট্রী করতে হতো। এতে সময় ও অর্থ অপচয়সহ নানা রকম ভোগান্তি পোহাতে হতো তাদের।
এ নিয়ে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলায় পৃথক সাব-রেজিস্ট্রি অফিস স্থাপনের দাবী জানিয়ে আসছিলেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদন করাসহ আন্দোলন সংগ্রাম করেন স্থানীয়রা। পরে তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে সাব-রেজিস্ট্রি ক্যাম্প অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। পরে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রয়ারী (শনিবার) নলডাঙ্গা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি ক্যাম্প অফিসের উদ্বোধন করা হয়। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে দলিল রেজিস্ট্রির মধ্যে দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি ক্যাম্প অফিসের কার্যক্রম শুরু করা হয়।
এদিকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম চালু হওয়ায় এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ও হয়রানী লাঘব হয়েছে বলে দাবী করেছেন সেবা প্রত্যাশীরা। তারা বলছেন, সময় ও অর্থ অপচয়সহ নানা রকম ভোগান্তি আর পোহাতে হবে না। বাড়ির কাছেই নিরাপত্তা ও সুবিধা মোতাবেক ভাবে তারা জমি রেজিষ্ট্রি করতে পারবেন।
প্রথম জমি দাতা উপজেলার খোলাবাড়িয়া গ্রামের শমসের আলী ও গ্রহিতা আশরাফ আলী জানান, আগে জেলা সদরে জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হতো, দীর্ঘ সময় অপচয় হতো, খরচও বেশি হতো। পাশাপাশি নানা রকম ভোগান্তিতে পড়তে হতো। যখন জানতে পারলাম নলডাঙ্গাতেই জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, তখন থেকে নলডাঙ্গাতেই জমি রেজিস্ট্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাই এখানেই ৩৩ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেছেন তারা। এতে তুলনামুলক ভাবে সময় ও অর্থ কম লেগেছে।
ষ্ট্যাম্প ভেন্ডার ইমরান আলী ডালিম জানান, নাটোর সদরে গত ৫ বছর ধরে স্ট্যাম্প ভেন্ডার সহকারী হিসাবে কাজ করছিলেন। এতে সেখানে ১২ থেকে ১৪টি দলিল রেজিস্ট্রির স্ট্যাম্প সরবরাহ করতেন। আজ প্রথম দিন নলডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি ক্যাম্প অফিসের দলিল রেজিস্ট্রিতে ২০টি দলিলের জন্য স্ট্যাম্প সরবরাহ করেছেন। তুলনামুলক ভাবে এখানেই বেশি কার্যক্রম ভাল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করে অপর ষ্ট্যাম্প ভেন্ডার আবু রায়হান জানান, নলডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি ক্যাম্প অফিসের প্রথম দিনে তার মাধ্যমে ৩০টি দলিল হয়েছে।
স্থানীয় দলিল লেখক তছির উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম ও জাহিদুল ইসলাম জানান, বাড়ির কাছেই নিজ এলাকার মানুষকে সেবা দিতে পারায় তারা খুশি এবং সেবা গ্রহিতারাও খুশি হয়েছেন। এই ধারা অব্যাহত রাখতে চান তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা, আমিনুল ইসলাম হাদু, মাহাবুর রহমান, আব্দুস শুকুরসহ আরো অনেকে জানান, নলডাঙ্গায় সাব-রেজিস্ট্রি ক্যাম্প অফিস চালু হওয়ায় তারা খুশি। কেননা আগে তাদের নাটোর সদরে গিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো, বেশি অর্থ খরচ হতো, নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু এখন বাড়ির কাছেই নাগালের ভিতরে তারা জমি রেজিষ্ট্রি করতে পারবেন। এতে তাদের সময়-অর্থ সাশ্রয় হবে এবং ভোগান্তি থেকে তারা মুক্তি পাবেন।
নলডাঙ্গা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ গাজী সরদার জানান, উপজেলা বাসির দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সাব-রেজিস্ট্রি ক্যাম্প অফিসের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় দলিল লেখক, স্ট্যাম্প ভেন্ডারসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই খুশি হয়েছেন। আশা করা হচ্ছে, সুন্দর ও সঠিক পরিবেশে এবং কোন প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই সেবা প্রত্যাশীদের সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। যাতে কোন প্রকার প্রতারনা বা ভোগান্তি না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে।
সাব রেজিস্টার গোলাম সারোয়ার জানান, প্রথম দিনে নলডাঙ্গায় জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা মানুষের মধ্যে উৎসাহ ও উৎফুল্ল ভাব বিরাজ করতে দেখা গেছে। এখানকার পরিবেশটা বেশ ভাল লক্ষ্য করা গেছে। আপাতত সপ্তাহে একদিন নলডাঙ্গা উপজেলায় রেজিস্ট্রি কার্যক্রম চলবে। কেননা, তাকে সদর উপজেলায় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সপ্তাহে দুইদিন সিংড়া উপজেলায় দায়িত্ব পালন করতে হয়। কারন সিংড়ায় কোন সাব-রেজিষ্টার এখনও পর্যন্ত নেই। অচিরেই সেখানে সাব-রেজিষ্টার আসবেন। এরপর থেকে নলডাঙ্গাতে সপ্তাহে দুই দিন জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম চলবে।