পিরোজপুর সদর উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মোটর সাইকেলের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ১০ জন।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর-পাড়েরহাট সড়কের ঝাউতলা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও চারজনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহতদের খুলনা ও বরিশাল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- পিরোজপুর সদর উপজেলার বাদুরা গ্রামের আমিনুল ইসলাম গাজীর স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩৬), উত্তর শংকরপাশা গ্রামের জাহাঙ্গীর মুন্সী’র স্ত্রী মানসুরা বেগম (৪০), একই গ্রামের মৃত জাকির শেখের ছেলে মো. নাঈম শেখ (২৫), দক্ষিন নামাজপুর গ্রামের সুলতান মীরের ছেলে আলমগীর মীর (৩০), শংকর পাশা গ্রামের ইদ্রিস আলী শেখের ছেলে মো. খাইরুল শেখ (২০), ইন্দুরকানী উপজেলার গদার হাওলা গ্রামের মৃত আক্কেল আলী হাওলাদারের ছেলে হেমায়েত হাওলাদার (৫৫) এবং ভান্ডারিয়া উপজেলার মাদাসী গ্রামের মোদাচ্ছের হাওলাদারের ছেলে স্বপন হাওলাদার (২৮)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুপুরে পিরোজপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি বাস যাত্রী নিয়ে ইন্দুরকানী উপজেলার চন্ডিপুরের দিকে যাচ্ছিল। বাসটি পিরোজপুর সদর উপজেলার ঝাউতলা নামক স্থানে একই দিকে যাওয়া একটি যাত্রীবোঝাই ব্যাটারিচালিত ইজিবাইককে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটর সাইকেলের সাথেও বাসের ধাক্কা লাগে। বাসটি ইজিবাইকটিকে দুমড়ে-মুচড়ে নিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থালেই তিনজনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের ৬ জনই ইজিবাইকের যাত্রী ও চালক। অন্যজন মোটর সাইকেলের চালক।
জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় বাসের চালক মোবাইলে কথা বলতেছিলেন। তার অসর্কতার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. পান্থ মিস্ত্রি জানান, সড়ক দুঘটনায় আহতদের হাসপাতালে আনার পরে ৪জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নিজাম উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৫ জনকে পিরোজপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত ৫ জনকে খুলনা ও বরিশাল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
পিরোজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’র ষ্টেশন অফিসার মো. রেজোয়ান জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সাথে সাথেই পিরোজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সদস্যরা দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়।
পিরোজপুর সদর থানার ওসি মো. আশিকুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ পাঁচজন ও দুইজন নারী রয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে বাস চালক ও হেলপার পলাতক থাকলেও ঘাতক বাসটি আটক করা হয়েছে।
পিরোজপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম শুক্রবার বিকেলে আহতদের খোঁজ খবর নিতে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে যান। তিনি নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সাথে কথা বলেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সহমর্মিতা জানান। এ সময় তিনি নিহতদের লাশ দাফনের জন্য সরকারীভাবে আর্থিক সহায়তা দানের ব্যবস্থা করেন এবং আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন।