শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫ ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
মশায় নাজেহাল উত্তর সিটি
৫ মাসেও দেখা মেলেনি সিটি করপোরেশনের মশককর্মীদের
জাহিদ হাসান মাহা
প্রকাশ: রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৭:০৫ PM আপডেট: ০৭.০৪.২০২৪ ৭:১৯ PM
খিলক্ষেতজুড়ে মশার উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে ঘরে কিংবা বাইরে কোথাও স্বস্তিতে নেই মানুষগত এক সপ্তাহে মশার কামড়ে অসুস্থ রাজধানীর বিভিন্ন হসপিটালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫০ এর অধিক শিশুপ্রশ্ন জনসাধারণের মনে- শীত শেষে নেই জমে থাকা পানি, বছরে মশা মারার পেছনে ব্যয় হচ্ছে শত কোটিরও বেশি টাকা। তারপরও কেন বাড়ছে মশা?  

রাজধানীর খিলক্ষেতজুড়ে মশার উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে ঘরে কিংবা বাইরে কোথাও স্বস্তিতে নেই মানুষ। শুধু রাতে নয়, দিনেও মশার কামড়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে খিলক্ষেতবাসীকে। রাজধানীজুড়েই বাড়ছে মশার সংখ্যা, তবে খিলক্ষেতের বিভিন্ন জায়গায় বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। ভাষানটেক বাজার, খিলক্ষেত, উত্তর খান, দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ ও কামারপাড়া এলাকার মানুষ মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার আতঙ্ক।

দেশে প্রায় ১২৩ প্রজাতির মশা আছে। ঢাকায় ১৬ প্রজাতির মশা বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে কিউলেক্স মশা ৯০ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস, ম্যানসোনিয়া এবং অন্যান্য মশা। তবে অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কিউলেক্সের পরিমাণ বাড়তে থাকে। 

মশার কামড় থেকে নগরবাসীকে রেহাই দিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন। তবে সংস্থা দুটির বেশকিছু উদ্যোগের পরও মশার কামড় থেকে রেহাই পাচ্ছে না রাজধানীবাসী। অথচ প্রতিবছর মশকনিধনে যথেষ্ট অর্থ খরচ করছে সিটি করপোরেশন। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় গত চার মাসে মশার ঘনত্ব দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। রাজধানীর মশা নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে- মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে শুধু ঢাকাতেই মশা বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রশ্ন জনসাধারণের মনে- শীত শেষে নেই জমে থাকা পানি, বছরে মশা মারার পেছনে ব্যয় হচ্ছে শত কোটিরও বেশি টাকা। তারপরও কেন বাড়ছে মশা?  

গত বছর এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে। এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে এখনো মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। আর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ। ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে দ্বিগুণ হারে ডেঙ্গুরোগী বাড়ছে। ডেঙ্গুর আগাম সতর্কতা হিসাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেঙ্গু পরিস্থিতির জন্য হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। মশার এমন উপদ্রবের জন্য জনস্বাস্থ্যবিদরা দায়ী করছেন মশকনিধনে স্থানীয় সরকারের ব্যর্থতা আর অপরিকল্পিত মশকনিধন কার্যক্রম। 

রাজধানীর মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পর্যাপ্ত বাজেট থাকে। সেই সাথে বছরে বছরে বাড়ে এই বাজেটের টাকা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বলছে, ঢাকার দুই সিটির চলতি অর্থ বছরে মশা মারার বাজেট ১৫২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে উত্তরের ১২১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩১ কোটি ১ লাখ টাকা।

সিটি করপোরেশনের বাজেট হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মশা মারতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা, পরের বছর সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮ কোটিতে। চলতি অর্থবছরে ডিএনসিসিতে মশা মারতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা। আর ঢাকার দুই সিটিতে গত ১২ বছরে ঢাকার মশা মারার আয়োজনে খরচ হয়েছে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে বছরে শতকোটি টাকার বেশি খরচ হলেও নগরবাসী মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না। মশা মারায় খরচ বাড়লেও মশা কমে না। নগরবাসীর অভিযোগ, এর কারণ সিটি করপোরেশনের গাফিলতি, কার্যকরী ওষুধ ব্যবহার না করা, ঠিকমতো ওষুধ না ছিটানো ও মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে না পারা। মানুষের সচেতনতার অভাবও একটা কারণ।

করিম নামে এক খিলক্ষেত বাসিন্দা বলেন, এ এলাকায় প্রচুর মশা। মানুষ মশার কয়েল, ইলেকট্রিক ব্যাট, স্প্রে ও মশারি ব্যবহার করছে। তার এলাকায় এক মাসেও সিটি করপোরেশনের মশককর্মীদের মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। তিনি মশকনিধন কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান।

আব্দুর রাজ্জাক নামে একজন বলেন, খিলক্ষেতের নামাপাড়ায় বসবাস করি প্রায় ১ বছরের বেশি সময়। এত মশা এর আগে কখনো দেখিনি। মশার কারণে দিনের বেলা দরজা জানালা বন্ধ করে থাকতে হয়। কয়েল ব্যবহার করেও মশা থেকে রেহাই পাচ্ছি না। মশার কামড়ে ছোট বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তার কাছে জানতে চাওয়া হলো- সিটি করপোরেশনের লোকেরা মশানিধনে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কী না? তিনি বলেন, গত ৫মাস ধরে সিটি করপোরেশনের মশককর্মীরা রাস্তায় কোনোরকমের ওষুধ ছিটাতে দেখিনি। 

আব্দুর রহিম নিকুঞ্জ বাসিন্দা তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় সিটি করপোরেশনের মশককর্মীরা রাস্তায় ওষুধ ছিটায়। মশা কিন্তু রাস্তায় থাকে না। মশা থাকে বাসাবাড়ির আনাচে-কানাচে, ড্রেনে, ময়লার স্তূপে ও যেসব জায়গায় পানি জমে সেখানে। এসব জায়গা স্থানীয়দের সহায়তা চিহ্নিত করে ওষুধ ছিটাতে হবে।’

এমন পরিস্থিতিতে মশাবাহী রোগ প্রতিরোধে গত মঙ্গলবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সাথে বৈঠকে বসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে মশানিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশনের প্রতি অনুরোধ জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। এই বৈঠকে ঢাকার উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) নিয়ে। তিনি বলেন, ঢাকার খালগুলো পরিষ্কারের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউক এটি পরিষ্কার না করার কারণেই মশা বাড়ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ১০টি অঞ্চল রয়েছে। এসব অঞ্চলে ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। মশানিধনে ১ হাজার ৫০ জনবল কাজ করছে। মশানিধনে প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু মশার আক্রমণ থেকে মানুষ রেহাই পাচ্ছে না। 

ডিএসসিসির প্রধান ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশিরুল হক ভুঞা বলেন, মশা নিধন কার্যক্রম সারা বছরই চলে। প্রয়োজনীয় ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। তিনটি স্থানে ফিল্ড পরীক্ষা শেষে ওষুধ ছিটানো হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘এখন কিউলেক্স মশা বেশি হয়ে থাকে। মশার বিস্তার কমাতে আমাদের মশা নিধনকর্মীরা কাজ করছে। আমাদের ৭৫ ওয়ার্ডের প্রতিটিতে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত লার্ভিসাইডিং ও দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অ্যাডালটিসাইডিং ওষুধ ছিটানো হয়। মশার বংশবিস্তার কমাতে খাল, ডোবা, নালা, ড্রেন পরিষ্কার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সামনে ডেঙ্গুর মৌসুম। আমরা সতর্ক আছি।’

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  মশা   নাজেহাল   উত্তর সিটি  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত