নেত্রকোনার পূর্বধলায় ‘ভূতের ভয়ে’ চল্লিশা হেনা ইসলাম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সুমি আক্তার (১৮) এর মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করেছে পূর্বধলা থানা পুলিশ।
দীর্ঘ প্রায় ২ বছর পর মায়ের হাতে মেয়ের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন ও মেয়ে হত্যার সাথে জড়িত মা জোৎসা বেগম (৪৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত সোমবার (৫ মে) পুলিশ জোৎসা বেগমকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত জোৎসা উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের বরুণ বৈরাটি গ্রামের মৃত এমএল মিয়ার স্ত্রী।
জানা গেছে, গত বছরের ২২ আগস্ট রাত ১টার দিকে সুমি বাথরুমে যাওয়ার পর হঠাৎ চিৎকারের আওয়াজ শুনেন। পরে সুমি তার মায়ের সঙ্গে ঘরে চলে আসে। তারপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে আবার বাথরুমে যায়। সেখান থেকে ফিরে আসলে তার শরীর ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। মা জোৎনা বেগম তার মেয়ে সুমীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ‘ভূতের ভয়ে’ মেয়ে মারা গেছেন এমন খবর এলাকায় ছড়িয়ে দেয়।
খবর পেয়ে পূর্বধলা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। বাদী হয়ে মা নিজেই পূর্বধলা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার প্রায় ৭/৮ মাস পর ময়না তদন্তের রির্পোট থানায় আসে এবং রির্পোটে ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। উক্ত রির্পোটের ভিত্তিতে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে পূর্বধলা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলার পর থেকে বিভিন্ন কৌশল ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টার পর অবশেষে গত ৫ মে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভিকটিমের মা জোৎসা বেগমকে থানায় নিয়ে আসা হয়। মামলার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেন। মেয়ে সুমী তার অবাধ্য হয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতো। তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করাসহ ঘরের আসবাবপত্র ভেঙ্গে ক্ষতিসাধন করতো, নিষেধ করার পরও এক ছেলের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার কারনে মেয়েকে হত্যা করে।
ঘটনার দিন জোৎসা বেগম ও তার দুই মেয়ে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। গভীর রাতে বড় মেয়ে সুমীকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে নিষেধ করায় সুমি তার মাকে শারীরিকভাবে আঘাত করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুমীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তার মা।
পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম জানান, জোৎসা বেগম হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করায় তাকে এ মামলায় গ্রেফতার করা হয় এবং গতকাল মঙ্গলবার (৭ মে) বিকালে নেত্রকোনা কোর্টে প্রেরণ করা হয়। সেখানে তিনি মেয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।