শনিবার ২৮ জুন ২০২৫ ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২৮ জুন ২০২৫
বদলে যাচ্ছে ধর্ষণের সংজ্ঞা, নতুন আইন যা হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ১:৫৬ PM আপডেট: ১৫.০৫.২০২৪ ৫:১৬ PM
বিশ্বের অনেক দেশের সমসাময়িক বাস্তবতায় যৌন নিপীড়ন ও বিকৃত যৌনাচারকে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর আলোকে খসড়ায় ধর্ষণের সংজ্ঞা সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। নারী নির্যাতন দমনে নতুন আইন আসছে। এ আইনের খসড়ায় ‘শিশু’ শব্দ বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণের সংজ্ঞায়ও আসবে পরিবর্তন। 

মাঠ পর্যায় ও নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তাদের মত জানতে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার ওই বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার ছাড়াও অতিথি হিসেবে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। নতুন আইনের ব্যাপারে পুলিশ তাদের বেশ কিছু মত তুলে ধরে। তা পুলিশ সদরদপ্তরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পুলিশের প্রস্তাবে এ আইনে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) নাগরিকের বিচার পাওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট একটি ধারা যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।

বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তৃতীয় লিঙ্গের কেউ ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হলে মামলার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। তাদের পরিচয়ের ব্যাপারে এ আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী বলেন, নতুন আইনে তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়টি যুক্ত করার যে প্রস্তাব, এটি ইতিবাচক। বিভিন্ন সময় আমরাও এমন দাবি করেছিলাম। নতুন আইনের পাশাপাশি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার সাপোর্ট সার্ভিসগুলো আরও কার্যকর করতে হবে। বিচার পাওয়ার দীর্ঘসূত্রতা দূর করা জরুরি। 

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, পুলিশ মাঠ পর্যায়ে যেসব সমস্যায় পড়ে, সেসবই নতুন আইনে যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। সবার সুপারিশসহ এটি মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটিতে যাবে। এর পর ভেটিং হবে। নতুন আইন পাস হলে বর্তমানের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন রহিত হবে। তবে পুরোনো মামলার বিচার এ আইনে চলবে। 

পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২০ হাজার মামলা হয়। এর মধ্যে থানায় হয় ১৮ হাজার ৯৪১টি। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩৮টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ৩৪ হাজার মামলায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচার চলছে। 

সরকার নতুন যে আইনটি করার কথা চিন্তা করছে, সেখানে কী কী বিষয় যুক্ত করা যেতে পারে, তার একটি প্রস্তাবনা পুলিশের তরফ থেকে দেওয়া হবে। কারণ আইনের ভালো-মন্দ বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকে পুলিশ। মামলা, তদন্ত ও অভিযোগপত্র দাখিলের সময় বাদী-বিবাদী উভয়ের সমস্যা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। 

নতুন আইনে যেহেতু শুধু নারীকে যুক্ত করা হয়েছে, তাহলে ছেলেশিশু ধর্ষণ (বলাৎকার) বা যৌন নিপীড়নের শিকার হলে তার আইনি প্রক্রিয়া কী হবে? এতে বিদ্যমান শিশু নির্যাতন আইন সংশোধন করার প্রস্তাব দিয়েছে পুলিশ। ছেলেশিশুরা ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হলে সে আইনে যাতে মামলা করার বিধান থাকে, এটি নিশ্চিত করার ব্যাপারে মত দেওয়া হয়। এ ছাড়া পুলিশ বলছে, ছেলেশিশু নিপীড়নের শিকার হলে দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারাও প্রয়োগ করা যায়। 

ধর্ষণের সংজ্ঞার ক্ষেত্রে নতুন একটি ধারণা যুক্ত করার ব্যাপারে মতামত দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের যুক্তি হলো, এখন ধর্ষণের অনেক মামলার এহাজারে ভুক্তভোগী লেখেন– বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর বয়স ১৬ বছরের অধিক বা কেউ বিবাহিত হলেও এজাহারে এ বিষয়টি লেখা থাকে। 

অনেক ঘটনায় এমন নজির পাওয়া যায়– ছেলে-মেয়ে উভয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল ছেলে। মেয়ের সম্মতিতেই তাদের শারীরিক সম্পর্ক ছিল। এর পর মেয়ে বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে থাকলে বিভিন্ন অজুহাতে তা এড়িয়ে যায় ছেলে। এমন বাস্তবতায় ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করছে নারী। সম্পর্কের সূত্র ধরে সম্মতি নিয়ে শারীরিক সম্পর্কের ঘটনায় ধর্ষণের যে মামলা হয়, আদালতে গিয়ে তা ধর্ষণ বলে প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যায়। 

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একাধিক রায়ে বলা আছে, ১৬ বছরের ঊর্ধ্বে কোনো নারীর সম্মতিতে তাঁর সঙ্গে কারও শারীরিক সম্পর্ক হলে সেটিকে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। এসব রায়ে আদালত বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগও খারিজ করেছেন। ভারতের উচ্চ আদালতও বিভিন্ন সময় বলেছেন, কোনো নারী স্বেচ্ছায় দীর্ঘদিন ধরে কারও সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখার পর ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ আনতে পারবেন না। 

নতুন আইনে পুলিশের প্রস্তাব হলো– বিয়ের প্রলোভনে বা বিশ্বাস স্থাপন করার পর টানাপোড়েনে এক পর্যায়ে যে মামলা হয়, সেটিকে ধর্ষণ না বলে ‘শারীরিক সম্পর্ক’ নামে  সংজ্ঞায়িত করা। শারীরিক সম্পর্কের ধারায় আসামির বিচার নিশ্চিত করা। এ ছাড়া যৌতুকের ক্ষেত্রে নতুন ধারা সংযুক্ত করার পরামর্শ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তাদের মত, বিদ্যমান আইনে এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে– যৌতুকের মামলা চলাকালে সামাজিক উদ্যোগ বা অন্য কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে যৌতুকের ক্ষেত্রে আপসরফার একটি বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব দেবে পুলিশ। 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত