নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় কথা সাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ুন আহম্মেদের হাতে গড়া শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে লেখাপড়া করত মোশাররফ। তার বাবার আর্থিক দৈন্যতার কারণে যে স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সেই স্কুলের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজে শ্রমিকের কাজ করেছে নিজের পরিচয় গোপন রেখে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয়েছেন।
মোশাররফ উপজেলার রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে।
মোশারফের মা মোছা: নাজমা খাতুনের সাথে শনিবার (২৫ মে) সকালে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ- ৫ পাওয়ায় আমরা খুব খুশি। তাই স্কুলে গিয়েছিলাম স্যারদের মিষ্টি খাওয়াতে এবং কিভাবে ভালো কলেজে ভর্তি করাবো এবং লেখাপড়া করাবো সে বিষয় জানতে বুঝতে। মোশারফের লেখাপড়া করার খুব আগ্রহ। কিন্তু আমাদেরতো টাকা পয়সা নাই। কিভাবে ভালো কলেজে লেখাপড়া করাবো এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। মোশারফ লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চায়। তার সেই স্বপ্ন পূরনের জন্য মোশারফের মা-বাবা সরকার তথা সমাজের বিত্তশালীদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
তিনি আরো বলেন, তার ৩ ছেলে এবং ১ কন্যার মধ্যে মোশারফ হোসেন রাব্বি সবার বড়। লেখাপড়ায় তার খুব আগ্রহ। কোনদিন তাকে স্কুলে আসা যাওয়া করার জন্য বা পড়ার জন্য তাগিদ করতে হয়নি। নিজের অদম্য উৎসাহ নিয়ে সে লেখা পড়া করেছে। গত এসএসসি-২০২৪ পরীক্ষার কিছুদিন আগেও সে নিজ প্রতিষ্ঠানে বাবার সাথে মুখে কাপড় দিয়ে বেধে মুখ ঢেকে রাজমিস্ত্রির কাজে শ্রমিকের কাজ করেছে। গত এসএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েেছে। আর্থিক সমস্যার কারণে কলেজে তার পড়াশোনা নিয়ে বেশ চিন্তিত রয়েছেন তার মা।
মোশাররফ তার উপার্জিত টাকা মায়ের হাতে দিতে গিয়ে সে আবেগ আপ্লোত হয়ে বলে, বাবার কষ্ট হয় তাই বাবাকে সাহায্য করতে আমি স্কুলে গিয়ে মুখ বেধে মুখ ডেকে শ্রমিকের কাজ করেছি। সে সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগীতা কামনা করেন।
অবশেষে মানবিক বিভাগ থেকে অদম্য এই মোশারফ জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়েও রয়েছে বেদনার কথা।
কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ী আমতলা ইউনিয়ের কুতুবপুর গ্রামে কথা সাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ুন আহম্মেদের পৈতৃক বাড়ির পাশেই গ্রামের পিছিয়ে পরা ছেলে-মেয়েদের কে আধুনিক, বিজ্ঞান ও মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে নিজ হাতে গড়ে তোলেন শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ।
এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, ২০২৪ সালের এসএসসি পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় গত ১২ মে। প্রকাশিত এই ফলাফলে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ৪৯ জন পরিক্ষাথীর মধ্যে ৪৮ জনেই জিপিএ-৫ পায়। ১২ মে কৃতিত্ব পূর্ণ ফলাফল অর্জনের জন্য আনন্দ উৎসব করেন বিদ্যাপীঠের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত সহ সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ। সেদিন আনন্দ উৎসবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদারও গিয়েছিলেন কৃতী শিক্ষাথীদের ফুল দিয়ে বরণ করতে। ৪৯ জনের মধ্যে ৪৮ জন জিপিএ-৫ পায় । সেদিন লোক লজ্জার ভয়ে আনন্দ উৎসবে যায়নি। বাড়িতে বসেই কান্না করছিল মোশারফ।
এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, মোশারফ অত্যন্ত মেধাবী। আমি আমার অজানা গল্প তার অদম্য উৎসাহ ও মেধাকে এগিয়ে নিতে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সুদৃষ্টি ও সহানুভুতি কামনা করছি।
রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে মোশাররফ জিপিএ-৫ পেয়েছে। আসুন অদম্য এই মেধাবীর জন্য সকলেই সহযোগীগার হাত বাড়িয়ে দেই।