শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫ ২১ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫
ডাক্তারদের ‘হাতের লেখা’ বুঝতে না পারায় ৭ হাজার রোগীর মৃত্যু!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪, ৭:৪৪ PM আপডেট: ৩১.০৫.২০২৪ ৮:১৪ PM
হাসপাতালে চর্মরোগে আক্রান্ত এক রোগী গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে। রোগের বর্ণনা শোনার আগেই জনৈক ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন ওষুধের নাম। কিন্তু বেশ কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরেও দুর্বোধ্য হাতের লেখার পাঠোদ্ধার করতে পারেননি ওষুধ বিক্রেতারা। 

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আরেক চিকিৎসকের সহায়তায় জানা গেল সেই নাম- স্টাইরক্স শ্যাম্পু। ভারতীয় এই শ্যাম্পুর জেনেরিক নাম (ওষুধের মূল উপাদানের নাম) ‘কিটোকোনাজল’। অথচ বাংলাদেশেই ইনসেপ্টার ডেনসেল, অপসোনিনের কিটোকন, বেক্সিমকোর রিজলভ্, স্কয়ারের সিলেক্ট প্লাস সহ বিভিন্ন কোম্পানির কিটোকোনাজল শ্যাম্পু পাওয়া যায়। 

অপর এক ঘটনায়, একটি হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধের নাম বুঝতে না পেরে ফার্মেসিওয়ালা দিয়েছিল সেলেক্স (সেফালেক্সিন) ক্যাপসুল। কিন্তু পরে জানা যায়, সেটি ছিল আর্থ্রাইটিসের ওষুধ সেলেব্রেক্স (সেলিকোক্সিব)।

এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, শুধু প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসকদের হাতের লেখা বুঝতে না পারা ও ভুল ওষুধ সেবনের ফলে বিশ্বে প্রতিবছর ৭ হাজার রোগী মারা যায়।

সরকারি হাসপাতালে এবং চেম্বারে কিছু চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে পড়ার অযোগ্য লেখার অভ্যাস পরিবর্তন করতে ভুক্তভোগীদের পক্ষে দাবি উঠলে ২০১৭ সালে হাইকোর্ট থেকে আসে বিশেষ নির্দেশ। এতে বলা হয়, চিকিৎসকরা তাঁদের প্রেসক্রিপশন ব্লক লেটারে বা প্রিন্ট করে দিতে পারবেন। যাতে সেখানে লেখা তথ্যগুলো বুঝতে কারও সমস্যা না হয়।
মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) প্রেসক্রিপশন সংক্রান্ত নির্দেশনায় জানায়, ‘রোগীর জন্য ব্যবস্থাপত্রের (প্রেসক্রিপশন) লেখা সহজবোধ্য করতে তা স্পষ্টভাবে এবং বড় হরফে লেখার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সকল নিবন্ধিত চিকিৎসকদের নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা যেন সবসময় ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নাম স্পষ্টাক্ষরে লেখেন এবং ওষুধের ব্যবহারবিধি স্পষ্ট ও বোধগম্যভাবে লিপিবদ্ধ করেন’।

কিন্তু গত ৬ বছরেও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি এ নির্দেশনা। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কম্পিউটার প্রিন্ট প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন, তবে তাদের সংখ্যা নগন্য।

এক ফার্মেসির মালিক বলেন, সাধারণত সরকারি হাসপাতালের প্রেসক্রিপশনগুলোর লেখা বুঝা যায় না। এছাড়া চেম্বার থেকে আসা কিছু চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম এমনভাবে লেখা হয়, যেটা কাছাকাছি নামের ওষুধ থেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে যায়। এলজেনটা ডিএস/এলবেন ডিএস, বনোভা/বনড্রোভা, মনটিল/মনটেলা, বিটালক/বিটাকার্ড, প্রিলক/প্রিসোনিল- নামগুলো একই রকমের। এরকম অনেক ওষুধ আছে, যেগুলোর নাম প্রায় একই, কিন্তু ভিন্ন রোগের জন্য নির্দেশিত। পুরো নাম স্পষ্টভাবে না লিখলে বুঝা মুশকিল।

এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এদেশের চিকিৎসকরা যত চাপ নিয়ে সেবা দেন- সেটা পৃথিবীর আর কোথাও দেওয়া হয় না। সকাল ৮টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত অফিস। আউটডোর খোলা থাকে ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত। একজন চিকিৎসক এই ৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে দুই-তিনশ রোগী দেখেন। এক মিনিটে যদি একজন রোগীও দেখেন, তবুও আউটডোরের তিন ইঞ্চি ছোট কাগজে কিভাবে রোগের বর্ণনা আর ওষুধের নাম বড় হরফে এই সময়ের মধ্যে লেখা সম্ভব?

কয়েকজন ফার্মেসি মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একই ওষুধ দেশের কোম্পানি তৈরি করলেও অনেক চিকিৎসক বিদেশি ওষুধের নাম লিখেন। এসব ওষুধের নাম বাইরের অনেক ফার্মেসিওয়ালারা শুনেওনি। তবে ওষুধের পাইকারি এই বাজারে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞরা নামের প্রথম দুয়েক অক্ষর দেখলেই ওষুধটা শনাক্ত করতে পারে।


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত