গত এক সাপ্তাহ ধরে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরের বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক গরু চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরদল। এর ফলে ধার দেনা করা গরুর গৃহস্থ ও খামারীরা পড়ছেন ঋণের চাপে।
অন্যদিকে আয়ের আর কোন উপায় না থাকায় একমাত্র অবলম্বন গরু হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে খামারি ও গৃহস্থরা।
জানা যায়, গত বুধবার রাত ৩ টার সময় রামগতি উপজেলার চররমিজ ইউনিয়নের চররমিজ গ্রামের গোমস্তা বাড়ির ইব্রাহিম খলিল বাবুর ২টি, একই গ্রামের ফজলুর রহমানের ৩টি, শফিউল আলমের ২টি , নিজাম উদ্দিনের ২টিসহ এ গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ১১টি গরু, একই রাতে আলেকজান্ডার ইউনিয়নের জনতা বাজার এলাকার শারু মুন্সির ২টি, সোমবার রাতে চররমিজ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডেট ক্বারির গোঁজা এলাকার আতিক উল্যাহর ২টি, আবুল কালামের ৩টি, মহিউদ্দিনের ৪টি ও অন্য একজনের ৩টি রাজহাঁস নিয়ে গেছে চোরেরা।
গত মঙ্গলবার রাতেও চরগাজী ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামের নোমান সিদ্দীকির ১টি গরু চুরি হয়েছে। এসময় তার এবং আরও তিন প্রতিবেশির ১৩টি গরু গভীর রাতে পিকআপে করে নিয়ে যাওয়ার সময় জনসাধারণের উপস্থিতি টের পেয়ে ১২টি রেখে ১টি গরু নিয়ে পালিয়ে যায় চোরের দল। এছাড়াও চরলক্ষ্মী গ্রামের মো: রুবেল উদ্দিনের ৫টি, চরগাজীর সিদ্দিক উল্লার ৬টি, পার্শ্ববর্তী গ্রামের শাহাব উদ্দিন সমাজ থেকেও ১০টি গরুসহ গত এক সাপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৫০টি গরু নিয়ে গেছে চোরের দল।
শুধু রামগতি নয় কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গরু চুরি হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। রামগতি উপজেলার সাথে নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও কমলনগর উপজেলার সাথে নোয়াখালী সদর উপজেলার সিমান্ত রয়েছে। এতে চোরের দল সহজেই দু'উপজেলা থেকে গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের ধারনা নদীমাতৃক, চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকা হওয়ার সুযোগে সহজ রুট হিসেবে উপজেলার চরগাজী, বয়ারচর, টাংকিবাজার, বড়খেরী, চররমিজ, চরআবদু্ল্যাহ,আলেকজান্ডার ও চরবাদাম ও কমলনগর উপজেলার চরবসু চরকাদিরা এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকাকে টার্গেট করেছে চোরেরা। সংঘবদ্ধ এ চোরচক্রকে সহায়তা করছেন স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারী। রামগতি-কমলনগরের কয়েকট সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্যরা গরু চুরির কাজে সহায়তা করছেন বলে কয়েকটি সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও খামারি গোলাম রব্বানী জানান, গরু চুরির সাথে জড়িত রয়েছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী। চোরের দল গাড়ি নিয়ে টার্গেট এলাকার কিছুটা দুরে অবস্থান করে। গাড়ির চাকা পাংচার ও নষ্ট হওয়ার তালবাহানা করে সময়ক্ষেপন করে। গভীর রাতে সংগঠিত হয়ে গরু চুরিতে নামে।
চররমিজের ইব্রাহিম খলিল বাবু জানান, ধারদেনা করে গরুগুলো পালছি। চোরের দল আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমাকে এখন পথে বসতে হবে।
চরগাজী ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামের নোমান সিদ্দীকি জানান, আমার এবং প্রতিবেশীদের মোট ১৩টি গরু চুরির সময় জনগন টের পেলে ১টি নিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা। খামারি হিসেবে আতংকের মধ্য দিয়ে প্রতিটি রাত পার করছি। এছাড়াও রাতের বেলায় রামগতি-তোরাবগঞ্জ ও রামগতি-টাংকিরঘাট বয়ারচর সড়কে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করলে চুরিসহ অন্যান্য অপরাধ কমবে বলে দাবি করেন এ ভুক্তভোগী। তিনি আরও বলেন, বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী মিলে এখন পালাক্রমে রাতভর গরু পাহারাও দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।
কমলনগর উপজেলার চরবসু এলাকার রেহান উদ্দিন হুজুর জানান,শনিবার গভীর রাতে তার বাড়ী থেকে ২ টি গরু নিয়ে যায় চোরের দল। ধারদেনা করে গরু ক্রয় করে এখন রাস্তায় বসা ছাড়া আর কোন পথ নেই তার।
চররমিজ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, গরু চুরির বিষয়ে কেউ আমাকে জানায়নি। তবে আমি বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছে এ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩টি গরু চুরি হয়েছে।
চরগাজী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান নাছির উদ্দীন জানান, প্রায় প্রতি রাতেই এ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু চুরির খবর আসছে। ভুক্তভোগিরা গভীর রাতে ফোনে দেন। বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করেছি। প্রশাসনকে জানিয়েছি। তিনি আরো জানান,এ ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি গরু চুরি হয়েছে বয়ারচর থেকে। এ গণচুরির পেছনে শক্তিশালী চক্র থাকতে পারে বলেও তিনি ধারনা করছেন তিনি।
রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ কবির হোসেন জানান, সবচেয়ে বেশি গরু চুরি হচ্ছে বয়ারচর ও টাংকি এলাকায়। রামগতি-হাতিয়া নিয়ে সীমানা বিরোধ থাকা ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় ঐ অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করা কঠিন। ইতিমধ্যে গরু চুরির কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি আমরা। এটা নিয়ে কাজ করছি। এছাড়াও অন্যান্য এলাকায় পুলিশ তৎপর রয়েছে। জনসাধারণের সহায়তাও কামনা করেন তিনি। একই মন্তব্য জানান কমলনগর থানার ওসি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামও। তিনি বলেন,গরু চুরির বিষয়ে পুলিশ সজাগ রয়েছে।