শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা এবং সেগুলো সরানোর জন্য আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে তা বাস্তবে কার্যকর করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সিনিয়র আইনজীবীরা। একইসাথে এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপরেও প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করছেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার সব ধরনের ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে, শেখ হাসিনা আগে যত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন তা সব মাধ্যম থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
প্রশ্ন আসছে ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ কিভাবে নির্ধারণ করা হবে? আইনজীবীদের দৃষ্টিতে এটি নির্ধারণ করা ও এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা কঠিন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের মতে, গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ছে।
কোন বক্তব্য ‘বিদ্বেষমূলক’ হিসেবে বিবেচিত হবে?
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কিছু ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। যদিও সেগুলো সত্যিই তার কথোপকথন কি না, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে সেই রেকর্ডগুলোতে তার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নানা ধরনের রাজনৈতিক নির্দেশনা দিতে শোনা গেছে তাকে।
প্রসিকিউটর নোমান ব্যাখ্যা করেন, ‘যেহেতু এখন শেখ হাসিনার বিচার চলছে, সাধারণ মানুষ এসে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে; কিন্তু যখন সে ‘চট করে দেশে ঢুকে যাব’ বা ‘২০০ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি, লিস্ট করো’ বলে, তখন তো সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে ভয় পেয়ে যাবে। চট করে দেশে ঢুকে যাওয়া মানে দেশে একটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে ঢোকা। বিমানবন্দর দিয়ে ঢুকে যাওয়া নয়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ওইসব বক্তব্যের উদ্দেশ্য ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা না’ নয়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ দল না। উনি দল গোছানোর কথা বলতে পারে। তা তো বলে না। বলছে, লিস্ট করো বাড়িঘর পুড়িয়ে দাও। অবশ্য অডিওরেকর্ডের এই কথাগুলো কে বলছেন, সেটিও গুরুত্বপুর্ণ।
প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, শেখ হাসিনা যদি বক্তব্য দিতে গিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বৈরাচার বলেন, তা কি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য হিসাবে গণ্য হবে?
এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রসিকিউটর নোমান বলেন, প্রফেসর ইউনূসকে স্বৈরাচার বলাও একটি বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা। অবশ্য শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার বললে তা বিদ্বেষমূলক না। কেননা শেখ হাসিনা যে একজন ফ্যাসিস্ট সেটি এ্যাডমিটেড। কিন্তু ড. ইউনূস তো স্বৈরাচার হতে পারেন না।