মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে প্রথমে দফায় দফায় মারধর করা হয়। এরপর খুঁটিতে বেঁধে ভিডিও ধারণ করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। গুরুতর আহত ওই ব্যক্তি ওই অবস্থায় মারা যান।
গতকাল শনিবার সকালে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের ছবিরপাইক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম জহির উদ্দিন (৪০)। তিনি বিবিরহাটের সুন্দলপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর লামছি গ্রামের মো. মোস্তফার ছেলে।
মর্মান্তিক এ ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও মুঠোফোনে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। গতকাল গভীর রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ছবিরপাইক গ্রামের একটি দোকানে চুরির অভিযোগে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী জহির উদ্দিনকে আটক করেন এলাকার কিছু লোক। তারা তাকে ভোররাত সাড়ে চারটা থেকে সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় পিটিয়ে নানাভাবে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেন। মারধরের পর গুরুতর আহত জহির উদ্দিনকে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।
এ ঘটনার ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, জহিরকে অন্ধকারের মধ্যে মাটিতে ফেলে মারধর করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে একজনকে জহিরের চোখ উপড়ে ফেলার কথা বলতেও শোনা যায়। মারধরকারীরা তার চোখ, মুখ, হাত, পা–সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুঁচিয়ে জখম করে স্বীকারোক্তি আদায় করার চেষ্টা করেন। ভোররাত থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত দফায় দফায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। একপর্যায়ে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। সে অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে তারা ছবিরপাইক এলাকায় এক ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার খবর পান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।
কবিরহাট উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, নিহত জহির উদ্দিন ২০২০ সাল থেকে সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে আসছিলেন।
নিহত জহিরের মা নাজিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী। যারা চোর সাজিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, আমি তাদের ফাঁসি চাই।’
সুন্দলপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হানিফ বলেন, নিহত জহির উদ্দিন একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। তিনি সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পেতেন। কিছুটা মানসিক সমস্যাও তাঁর রয়েছে। অনেক সময় মানুষের রান্নাঘরে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। এরকম একজন ব্যক্তিকে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা ঠিক হয়নি।