হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শড়াতলা গ্রামের দেয়ালে দেয়ালে গত এক সপ্তাহ ধরে একটি নোটিশ দেখা যাচ্ছে, যাতে লেখা- শড়াতলা গ্রামে সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র ও হকার নিষিদ্ধ। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও গ্রামটিতে ঢুকতে পারবেন না। এই নিয়ম অমান্য করলে গুনতে হবে জরিমানা।
সরেজমিন দেখা যায়, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শড়াতলা গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ফটোকপি সাঁটানো। স্ট্যাম্পের ওপর অংশে বড় করে লেখা, ‘সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র ও হকার নিষিদ্ধকরণের নোটিশ’। এছাড়াও একই নোটিশে হকার ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও গ্রামে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নোটিশের আরও লেখা রয়েছে, ‘গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে জানানো যাচ্ছে, সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ করা হলো। যারা বাদ্যযন্ত্র বাজাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সাথে তাদেরকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হবে এবং তাদের পিতামাতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেহেতু আমাদের গ্রামের ৯৫% মানুষ শিক্ষিত ও ২০ জনের মতো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী আছে। নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে গ্রামবাসী এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।’
নোটিশের শেষ অংশে ‘গ্রামবাসীর পক্ষে’ ১৮ জন সই করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি, শিক্ষক, ইমাম ও সমাজসেবক।
নোটিশে সই করা শড়াতলা গ্রামের পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি এনামুল হক বলেন, আগে গ্রামে উচ্চ স্বরে বাদ্যযন্ত্র বাজানো হতো। এতে অসুস্থ মানুষ, শিক্ষার্থী, নারী, শিশুসহ অনেকের সমস্যা হতো। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বিভিন্ন সময়ে উচ্চ স্বরে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নাচ-গান করে। তারা ও হকাররা নানা সময়ে মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়, তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার তৌহিদুর রহমান বলেন, বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের কারণে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ক্ষতি হয়। তাই তাদের সুবিধার জন্য গ্রামের সবার মতামতের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বি এম তারিক-উজ-জামান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এটি আইনবিরোধী। এভাবে কেউ নিয়ম তৈরি করতে পারে না। ইতোমধ্যে আমি এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছি।
ঝিনাইদহের বিহঙ্গ সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক শাহীনূর আলম লিটন বলেন, নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমরা পথনাটক এবং গান-বাজনার মাধ্যমে মানুষকে সম্পৃক্ত করেছিলাম। চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনেও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষের ভূমিকা রয়েছে। আমি মনে করি, একটি গোষ্ঠী আমাদের সমাজকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য ধর্মকে মানুষের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। অথচ সৌদি আরবসহ অনেক মুসলিম দেশেও সাংস্কৃতিক চর্চা হচ্ছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটা এলাকা থেকে কেউ বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ করতে পারে না। এটা বেআইনি। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই।