শ্লীলতাহানি, লুটপাট ও ভাংচুরের মামলা করায় প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে রাজধানীর ভাটারা ধানাধীন এক ব্যবসায়ীকে। অভিযোগ উঠেছে, এই ঘটনায় মামলা করায় বাদীকে অব্যাহতভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
বাদীর পরিবারের সদস্যরা জানান, হত্যার হুমকির কারণে ভিকটিমসহ পরিবারের সদস্যরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদিকে মামলা তুলে নিতে অভিযুক্তরা পাল্টা মামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন বাদী পক্ষ।
মামলার এজহার থেকে জানা গেছে, বাদী এমডি মিজানুর রহমান (৩৯) আর রাফি হলি ট্রাভেলস এর স্বত্বাধিকারী। তিনি বারিধারা জে ব্লকের দুই নং রোডস্থ ৮নং বাসায় অফিস করে আসছিলেন।
গত ৬ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আসামী আব্দুল্লাহ আল রাজিন, (২৯), রুমানা আক্তার (৪০), শিল্পী পারভীন অজ্ঞাতনামা ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে দেশী ও বিদেশী অস্ত্র বাদীর অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। তাদের হামলায় অফিসের কর্মচারী মোঃ সোহেল, মেহেদী হাসান, সিফাত খান, ফারজানা আক্তার কুলসুম, আব্দুল্লাহ, মোক্তার, সুচনা আক্তার, ফারজানা আক্তার, রাশিদা খান গুরুতর আহত হন।
হামলাকারীরা অফিসের স্টাফদের কাছ থেকে তাদের ব্যবহৃত ১১ টি মোবাইল, ১৫টি ল্যাপটপ, ১০টি কম্পিউটার, গ্রাহকের ২৩ টি পার্সপোর্ট ও তাদের ব্যবহৃত স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। হামলার কোনো রেকর্ড় যাতে না থাকে সেজন্য আসামীগণ অফিসের সিসি টিভি ক্যামেরা ভাংচুর করে। তারা অফিসে থাকা এসি, কম্পিউটার ও অন্যান্য মালামাল ভাংচুর করে অধিকাংশ মালামাল নিচে ফেলে দেয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা অফিসের মেয়ে স্টাফদের শ্লীলতাহানি ঘটায় এবং তাদের জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। এছাড়া তারা বেতনভাতা বাবদ রাখা আট লক্ষাধিক টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায়।
বাদী মামলার এজহারে বলেন, অফিস থেকে লুট করা আনুসাংঙ্গীক মালামালের আনুমানকি বাজার মূল্য প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা। হামলার সময় আসামীগণ নিজেদের একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বলে পরিচয় দিয়ে বলে- যদি এই বিষয়ে কোন মামলা মোকাদ্দমা করা হয় তাহলে তোদের জানে মেরে ফেলা হবে।
জানা গেছে, মামলার বাদী এমডি মিজানুর রহমান ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর বিবাদী রুমানা আক্তারের স্বামী জিন্নাত আলী থেকে ইউটোপিয়া রিয়ালিটি লি: এর সাথে বায়নাকৃত বারিধারা জে ব্লকের দুই নং রোডস্থ ৮নং বাসার ৫ম তলার ফ্ল্যাটটি রাজউকের নিয়ম মেনে ক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। উক্ত চুক্তি মোতাবেক জিন্নাত আলীর পক্ষে তার স্ত্রী রুমানা আক্তার বিভিন্ন তারিখে নগদে, হাতে-হাতে এবং ব্যাংকের মাধ্যমে ৬০ লক্ষ টাকা বুঝে নেন। বাকি টাকা ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করার সময়ে প্রদান করা হবে বলে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।
এরই অংশ হিসেবে রাজউক বাদি মিজানুর রহমানের নামে সেলস পারমিশনের জন্য ইউটোপিয়া রিয়্যালিটি লি: এর বরাবর অনাপত্তি পত্রও প্রদান করে। সে হিসাবে ডেভেলপার কোম্পানী থেকে বাদীর বরাবর উক্ত ফ্ল্যাটটি হস্তান্তরের অনুমতি প্রাপ্ত হন।
অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি মামলার আসামী তথা ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফ্ল্যাটটি অন্যত্র বেশি মূল্যে বিক্রির জন্য পায়তারা শুরু করে। সে নানাভাবে বাদীকে হয়রানি করা শুরু করে। এক পর্যায়ে বাদী ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য বললে তারা গড়িমসি শুরু করে দেয়। তখন বাদী তার দেয়া টাকা ফেরত চাইলে আসামীগণ তাকে প্রাণনাশের পাশাপাশি এবং ফ্ল্যাটটি ছেড়ে দিতে তাকে হুমকি প্রদান করে।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ৬ নভেম্বর বিকেলে আসামীগণ অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ফ্ল্যাটটিতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ লুটপাট চালায় এবং অফিসে থাকার নারী কর্মীদের শ্লীলতাহানিসহ ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে মামলার বাদী এমডি মিজানুর রহমান বলেন, আমি এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। আসামীগণ আমার অফিসে যেভাবে ভাংচুর, লুটপাট ও আমার স্টাফদের মারধরসহ নারীদের ধর্ষণের চেষ্টা করেছে, সেটি কল্পনা করতেও ভয় লাগে। আমি ন্যায় বিচার চাই।
মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, গত দুইদিন আমি ছুটিতে ছিলাম। খোঁজখবর নিয়ে দেখতে হবে কি অবস্থা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আসামীদের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তাদের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।