ছবি তোলার প্রতিবাদ করায় রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকায় মব সৃষ্টি করে এক নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম শাকিলা জেরিন, তিনি একজন টেলিভিশন উপস্থাপিকা।
গত মঙ্গলবার তগ্রিন রোডের ২৮ নম্বর বাড়ি ‘গ্রিন কর্নার’, উসমান গণি ভিলায় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিনই শাকিলা জেরিন কলাবাগান থানায় সালাম (৪০), সাগর (৩৫) নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও আট থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন বিকাল ৪টার দিকে তিনি তার অফিসের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পান, সামনের একটি ভবনের গার্ডরুম থেকে এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে তার ছবি তুলছেন এবং ভিডিও করছেন। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট ভবনের গ্যারেজে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তার ছবি তোলা হচ্ছে।
প্রথমে নিরাপত্তাকর্মী বিষয়টি অস্বীকার করলেও ফোনের গ্যালারি দেখতে চাইলে তাকে গার্ডরুমে নিয়ে যান। ফোন খুলে দেখা যায়, প্রথম ছবিটি ওই নারীরই। তিনি ছবিটি মুছে দিতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেন এবং শারীরিকভাবে আক্রমণ করেন। পরে তার সহকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারা ফোনে আরও কিছু পূর্বে তোলা ছবি দেখতে পান।
প্রায় ১০ মিনিট পর সাগর নামের একজন ব্যক্তি আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তাদের সামনে অভিযুক্ত ব্যক্তি সালাম ক্ষমা চাইলেও, গুগল ফটোস ও ফোনের ট্র্যাশ থেকে ছবিগুলো মুছে দিতে ফোনের পাসওয়ার্ড চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন ফোন ফেরত না দিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে থাকলে আবারও তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও শারীরিক হেনস্তা করা হয়। এরপর তিনি তার অফিসে ফিরে যান। প্রায় আধাঘণ্টা পর সাগর ও এক অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন ফেরত নিতে অফিসে আসেন। তখন ৯৯৯ নাম্বারে কল দিলে তারা দ্রুত স্থানত্যাগ করেন।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ এসে তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তি সালাম ততক্ষণে পালিয়ে যান। পুলিশের উপস্থিতিতেও একদল সংঘবদ্ধ লোক তাকে হুমকি দেয় এবং প্রাণনাশের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করা হয়। তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, নারী বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে এবং ভয়ভীতি দেখায়। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে ভুক্তভোগী দৌড়ে অফিসে ফিরে যান। এরপরও ওই সংঘবদ্ধ দলটি তার অফিসের সামনে অবস্থান নেয়, ফলে তিনি পুনরায় প্রশাসনের সাহায্য চান।
ভুক্তভোগী শাকিলা জেরিন বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমি ঘর থেকে বের হতে পারছি না। অফিসেও যেতে পারছি না। আমি আতঙ্কে আছি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি প্রশাসনের কাছে সহায়তা চাই।’
কলাবাগান থানার এসআই ও তদন্ত কর্মকর্তা মোন্তাসির বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করা হচ্ছে।’