এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক (স্থগিত) সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির আনুষ্ঠানিক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দলটির সদস্য নীলা ইসরাফিল। এনসিপির গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি অভিযোগপত্রের অনুলিপি দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনকেও দেওয়া হয়েছে।
এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান আব্দুল্লাহ আল আমিন আজ বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তারা নীলা ইসরাফিলের লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে অভিযোগপত্র শেয়ার করেন এনসিপির সদস্য ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ধানমন্ডি থানার প্রতিনিধি নীলা ইসরাফিল।
অভিযোগপত্রের বিষয়ে লেখা হয়েছে, ‘এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক (স্থগিত) সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে অনৈতিক, যৌন হয়রানি ও শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ।’
নীলা ইসরাফিল অভিযোগপত্রে লিখেছেন, ‘আমার উত্থাপিত অভিযোগ আমি অত্যন্ত সাহস এবং একইসাথে দুঃখ এবং মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে করছি, শুধু নিজের সম্মানরক্ষার জন্য নয়, বরং সংগঠনের নারী সদস্যদের জন্য একটি নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিসর প্রতিষ্ঠার আশায়।’
নীলা লিখেছেন, ‘২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আমি এক নির্মম সহিংসতার শিকার হই। শারীরিক ও মানসিক, সুরক্ষার স্বার্থে আমাকে বাংলাদেশ ত্যাগ করে নেপালে যেতে হয়। এই সময়টিতে সারোয়ার তুষার ছিলেন অনেকের মত আমার সঙ্গে যোগাযোগে থাকা রাজনৈতিক সহকর্মী, যিনি পূর্বেও আহত অবস্থায় অনেকের মত মানবিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন। সেই আস্থার জায়গা থেকেই আমি তার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ চালিয়ে যাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সম্পর্ককে তিনি ব্যক্তিগত ও অনৈতিক রূপ, যৌন হয়রানি করতে উদ্যত হন।’
সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তিনি চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি (সারোয়ার তুষার) প্রায়ই রাতের বেলা কল করে আপত্তিকর কথা বলেছেন। সারোয়ার ছবি চাইতেন এবং ভিডিও কলে কথা বলতে চাইতেন। একজন রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং সামাজিক মর্যাদাকে হেয় করার শামিল।
ফোনালাপ রেকর্ড ও প্রচারের ঘটনা নিয়ে নীলা অভিযোগপত্রে লিখেছেন, আমি যখন বুঝতে পারি, এই রাজনৈতিক সম্পর্ক আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ও মানসিকভাবে নিঃশেষ করছে, তখন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে তুষারের সঙ্গে কয়েকটি ফোনালাপ রেকর্ড করি। ১৬ জুন সেই রেকর্ডের একটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর তুষার আমাকে চাপ দিতে থাকেন যেন আমি ফেসবুকে বলি, “তার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।” আমি তখন দ্বিতীয় ও তৃতীয় ফোনালাপও রেকর্ড করি এবং এগুলো কিছু মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকের মাধ্যমে প্রচারে সম্মতি দিই। কেননা, সেইগুলো উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানিমূলক এবং যৌন হয়রানিমূলক অপরাধ করে তা প্রকাশ করা থেকে বিরত করবার চেষ্টাও হয়েছিল অবিরত।
নীলার অভিযোগ, তার এই কঠিন সময়ে দলের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোনো লিখিত বিবৃতি, সহানুভূতি বা সুরক্ষা প্রদান করা হয়নি। ১৯ জুন এনসিপির পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলা হয়। এছাড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো দায়িত্বশীল বা আন্তরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।