শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫ ২১ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫
ভিসিকে শিক্ষার্থী বললেন- ‘আপনি নিজ যোগ্যতায় আসেননি, আমরা বসিয়েছি’
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫, ৫:৫৭ PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদোন্নতি বোর্ডে এক শিক্ষকের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে উপাচার্যের মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতারের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ কয়েক শিক্ষার্থীর বাদানুবাদের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ভিডিওতে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী উপাচার্য ইয়াহিয়া আখতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি নিজ যোগ্যতায় আসেননি, আপনাকে আমরা বসিয়েছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদোন্নতি বোর্ডের পূর্ব নির্ধারিত সভায় সংস্কৃত বিভাগের এক শিক্ষকের উপস্থিতির বিরোধিতা করে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে। এক পর্যায়ে তারা উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতারের কার্যালয়ে এই বিষয়ে কথা বলতে যান। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তী উপস্থিত হন সেখানে। এ সময় উপাচার্যের উপস্থিতিতেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন শিক্ষক কুশল বরণ।

পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক কুশল বরণকে প্রশাসনিক ভবনের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যান। এরপর প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেছেন তিনি ‘মবের শিকার’ হয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্যের কথোপকথনের ভিডিওতে দেখা গেছে দু্ই শিক্ষার্থী উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, “আপনি নিজ যোগ্যতায় আসেননি, আপনাকে আমরা বসিয়েছি।”

ভিডিওতে দেখা যায়, কথোপকথনের শুরুতে উপাচার্যের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আপনাকে এখানে বসিয়েছি অবশ্যই যাতে আপনি আমাদের সাথে কাজ করেন।”

জবাবে উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বলেন, “না” (তিনি মাথা নেড়ে অসম্মতি জানাতে থাকেন)।

এরপর উপাচার্যের সামনে ও পাশে বসা কয়েকজন একযোগে বলতে থাকেন। জবাবে উপাচার্য বলেন, “আমাদের কার্যক্রম দেখ আগে।”

উপাচার্যের পাশে বসা এক শিক্ষার্থী বলেন, “আপনি বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবেন। ছাত্রদের জন্য কাজ করব। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করব। একটা কথা রেখেছেন? একটা কথা রাখেননি স্যার।”

এক শিক্ষার্থী আবার বলেন, “আপনাকে আমরা বসাইছি, আপনি নিজের যোগ্যতায় আসেননি স্যার।” উপাচার্য তখন পাল্টা প্রশ্ন করেন, “কি করেছি আমি?”

তখন সামনে দাঁড়ানো ওই শিক্ষার্থী বলেন, “আপনারা কেন কুশল বরণকে প্রমোশন দিচ্ছেন? আমাদের রক্তের সাথে এবং আমাদের বিপ্লবের সাথে বেঈমানি করে।”

এরপর একাধিক শিক্ষার্থী হট্টগোল করে উঠেন। তারপর উপাচার্যের সামনে বসা এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন, “যারা আহত করেছে আমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন?”

উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বলেন, “শোন আগে। মাঝখানে কথা বল কেন। আচ্ছা তুমি বল, তুমি বল।”

অন্য এক শিক্ষার্থী এসময় বলেন, “আমরা প্রতিদান চাচ্ছি না। কি ব্যবস্থা নিয়েছেন। জুলাই পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের নিয়ে কাজ করবেন…।”

জবাবে উপাচার্য বলেন, “ইউনিভার্সিটি বোর্ড না, ইটস আ কোআসি-জুডিশিয়াল বডি। ইউনিভার্সিটি হাই কোর্ট সুপ্রিম কোর্ট না। আমরা জেল জরিমানা দিতে পারি না। শাস্তি দিতে পারি।”

এরপর শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন আবার একযোগে কথা বলতে শুরু করে। এক শিক্ষার্থী বলেন, “এই প্রশাসন একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি।”

তখন উপাচার্য বলেন, “বলতে থাকো।”

এই পর্যায়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, “এই প্রশাসন দেশে সবচেয়ে বড় সুশীল প্রশাসন। অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, “জুলাইয়ের পরে একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের ভাইদের যারা হত্যা করছে তাদের কত জনকে আপনি শাস্তি দিছেন বলেন।”

উত্তরে উপাচার্য বলেন, “শাস্তি আমি একা পকেট থেকে বের করে দিতে পারি না।”

তখন একাধিক শিক্ষার্থী একযোগে বলতে থাকেন, “স্যার, একাডেমিক শাস্তি কয়জনের হয়েছে? প্রায় এক বছর হয়েছে। ডিমোশন না হয়ে আরো প্রমোশন হচ্ছে। আপনারা তাদের প্রমোশন দিচ্ছেন।”

তখন উপাচার্য ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, “হ্যাঁ, বলতে থাকো, বলতে থাকো।”

তারপর এক শিক্ষার্থী বলেন, “আজকে যে বোর্ড বসবে, সেই বোর্ড বসবে কি না এবং প্রমোশন দিবে কি না আমরা এটা জানতে চাচ্ছি।”

অন্য একজন বলেন, “স্যার জুলাইয়ে যারা সহযোগী হামলাকারী তাদের আপনারা কিভাবে প্রমোশন দিচ্ছেন?”

এরপর আবারও কয়েকজন শিক্ষার্থী একযোগে কথা বলতে শুরু করেন। তারপর উপাচার্য কয়েকজনের মোবাইল সচল দেখে তাদের মোবাইল বন্ধ করতে বলেন। তখন তারা জানিয়েছেন, তারা সংবাদকর্মী।

উপাচার্য তাদের উদ্দেশে বলেন, “তোমরা পরে এসে আমার ইন্টারভিউ নিও।”

পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষে একজন বলেন, “আজকে যার জন্য প্রমোশন বোর্ড বসছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সে একজন হত্যাচেষ্টা মামলা আসামি। তার নাম ২০ নম্বরে চার্জশিটভুক্ত। তার ব্যাপারে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিতে অভিযোগ গেছে। ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি যতদিন না সুপারিশ করছে অন্তত ততদিন তো তার প্রমোশন আটকে রাখা দরকার।”

এই কথোপকথনের বিষয়ে জানতে উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতারকে শনিবার একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

ঘটনার বিষয়ে শুক্রবার উপাচার্য কার্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীরা স্যারের সাথে কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতির বোর্ড বসানো বিষয়ে আলাপ করতে গিয়েছিলাম।

“সেখানে এক শিক্ষার্থী বলছিলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের এখনো বিচার হয়নি। ওটা নিয়ে কথা বলতে গিয়েই একজন ওই মন্তব্য করেছে (আপনি নিজ যোগ্যতায় আসেননি, আমরা আপনাকে বসিয়েছি)।”
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত