সোমবার ১০ নভেম্বর ২০২৫ ২৬ কার্তিক ১৪৩২
সোমবার ১০ নভেম্বর ২০২৫
এইচএসসি ফল বিপর্যয় কাটাতে নারায়ণগঞ্জ ডিসির বিশেষ উদ্যোগ
জাহাঙ্গীর আলম, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫, ৭:০৮ PM
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় নারায়ণগঞ্জ জেলায় পাসের হার মাত্র ৫২ শতাংশ, যা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ৬৪ শতাংশ এবং জাতীয় গড় ৫৮ শতাংশের তুলনায় অনেক কম। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা একে জেলার শিক্ষাক্ষেত্রে “ফল বিপর্যয়” হিসেবে দেখছেন।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা উদ্যোগ নিয়েছেন এক বিশেষ মতবিনিময় সভার। এতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলার বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে।

শিক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে এইচএসসি ফল বিপর্যয় মোকাবিলায় এ ধরনের উদ্যোগ প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জে নেওয়া হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফজলুল হক রুমন রেজা। তিনি বলেন, “করোনা-পরবর্তী শিখন ঘাটতি, শিক্ষার্থীদের ক্লাস বিমুখতা, মোবাইল আসক্তি ও কোচিং নির্ভরতা—এই খারাপ ফলাফলের মূল কারণ।”

তিনি আরও বলেন, “অটো পাস ও সিলেবাস সংকোচনের ধারাবাহিকতা শিক্ষার্থীদের পাঠের প্রতি অনাগ্রহ বাড়িয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ২০২৪ সালের সহিংস ঘটনাবলিও শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।”

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ইংরেজি, আইসিটি ও হিসাববিজ্ঞানে সর্বাধিক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। শিক্ষক সংকট, শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি এবং দুর্বল ক্লাস পরিবেশও প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ রুমন রেজা প্রস্তাব করেন—
শিখন ঘাটতি পূরণে রিমিডিয়াল ক্লাস চালু,
ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক,
বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ,
এবং কোচিং নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ বলেন, “নারায়ণগঞ্জের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে একটি শিক্ষা উন্নয়ন রোডম্যাপ তৈরি করা জরুরি।” তিনি জেলা শিক্ষা অফিসের তত্ত্বাবধানে ‘নারায়ণগঞ্জ শিক্ষা উন্নয়ন টাস্কফোর্স’ গঠনের প্রস্তাব দেন, যা নিয়মিতভাবে ফলাফল পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ প্রদান করে

সভায় উপস্থিত এক অভিভাবক বলেন, “শিক্ষকদের ডাকলেও আমরা অনেক সময় যাই না। সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে কি না, তা দেখা অভিভাবকেরও দায়িত্ব।”

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “নারায়ণগঞ্জে ২২ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১১ হাজার ফেল করেছে—এই চিত্র আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। আমরা একে অপরের ওপর দায় চাপাতে চাই না; বরং দায়িত্ব নিতে চাই। এমন প্রতিষ্ঠান গড়তে চাই, যেখানে শিক্ষা হবে আনন্দের, উৎসবের। শুধু পাশ নয়, আমরা চাই প্রকৃত মানুষ তৈরি করতে।”

তিনি আরও বলেন, “সন্তানদের শুধু শিক্ষকের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না। অভিভাবকদেরও সময় দিতে হবে, নজর রাখতে হবে। শিক্ষকরাও যেন অনুসরণযোগ্য হন—এটাই এখন সময়ের দাবি।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, “শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে এই ফল বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব।”

বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার এহসানুল কবির বলেন, “ম্যানেজিং কমিটিতে অশিক্ষিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির দায় শিক্ষা বোর্ডের নয়; জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রেরিত নামই আমরা অনুমোদন করি। যোগ্য ও শিক্ষিতদের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।”

প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শোয়াইব আহমাদ খান বলেন, “করোনা মহামারি ও শিক্ষার্থীদের গণঅভ্যুত্থানের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। পৃথিবীর কোথাও পাবলিক পরীক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ মোতায়েন করতে হয় না—এ এক দুঃখজনক বাস্তবতা।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকরা একসাথে কাজ করলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াবে।”

সভায় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আ. ফ. ম. মশিউর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম সুজন, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু সাউদ মাসুদ, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মাইনুদ্দীন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুদ বিল্লাহ প্রমুখ।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত