গত বছরের ডিসেম্বরে রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন ফেয়ারদিয়া বিল্ডিংয়ে অবস্থিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘নূরতাজ ডটকম’-এর অফিসে ভয়াবহ লুটপাট ও চাঁদাবাজির ঘটে। ওই ঘটনার বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পরিবর্তে উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম শেখ।
তিনি জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া এবং বিল্ডিংয়ের মালিক ইসমাইল হোসেনের যোগসাজশে দাবীকৃত চাঁদা না দেওয়ায় তাদের অফিসে হামলা, হুমকি দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের এবং অফিসের প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নেয়া হয়।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে কলাবাগান থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন ‘নূরতাজ ডটকম’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম শেখ। এছাড়া সুষ্ঠু বিচারের আশায় বিল্ডিং পরিচালনা কমিটি বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন কিন্তু তাতেও কোন বিচারের আশ্বাস না পেয়ে এবং থানায় মামলা গ্রহণ না করলে পরবর্তীতে ৫ ডিসেম্বর কোর্টে মামলা দায়ের করেন যা তদন্তাধীন রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, গত ২১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন ব্যক্তি এসে অফিস স্টাফদের হুমকি দেয় এবং ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একই দিন প্রতিষ্ঠান প্রধান সেলিম শেখের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে তাকেও একই পরিমাণ অর্থ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে জানমালের ক্ষতি করা হবে বলে ভয় দেখানো হয়।
এরপর ২৩ নভেম্বর দুইজন স্টাফকে লিফটের সামনে আটকে হুমকি দেওয়া হয় এবং ২৪ নভেম্বর থেকে স্টাফদের অফিসে না আসার নির্দেশ দেয় দুষ্কৃতিকারীরা। একপর্যায়ে সেলিম শেখ ২৬ নভেম্বর মান্নান ভূঁইয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং চাঁদা না দিলে ব্যবসা চালাতে না দেওয়ার হুমকি পান।
পরবর্তীতে ২৮ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) অফিস বন্ধ থাকার সময় তালা ভেঙে অফিসের মূল্যবান মালামাল লুট করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। লুট হওয়া মালামালের মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকার অধিক বলে দাবি করেন সেলিম শেখ।
অভিযোগের একপক্ষে রয়েছে সেলিম শেখের দাবি, যেখানে তিনি প্রতিমাসে ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়মিত ভাড়া এবং সার্ভিস চার্জ পরিশোধের প্রমাণ থাকার কথা বলেন।
অন্যদিকে ফ্ল্যাট মালিক ইসমাইল হোসেন দাবি করেছেন, ‘নূরতাজ ডটকম’ ছয় মাসের ভাড়া বকেয়া রেখেছে এবং তিনি এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন।
তবে সেলিম শেখ তার পক্ষে ব্যাংক পে-অর্ডারের রশিদের প্রমাণ আছে বলে জানিয়েছেন।
অন্য ব্যবসায়ীদেরও টার্গেট?
এই ঘটনার পর আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন সাংবাদিক জুলকার নাঈন সায়েরও। নিজের এক ফেসবুক পোস্টে তিনি দাবি করেন, কলাবাগান থানার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অন্য আরেক ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং ক্যাশ ড্রয়ার থেকে ২০ হাজার টাকা লুট করে। বর্তমানে তিনি প্রাণভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন।
তার অভিযোগ অনুযায়ী, পান্থপথ এলাকার অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী এই চাঁদাবাজ চক্রের হুমকির শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় মিথ্যা মামলায় আসামি করে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সৌখিন ফার্নিচারের মালিক রনি বর্তমানে এমন একটি মামলায় কারাবন্দী।
আইনি অগ্রগতি নেই, হুমকির মুখে বাদী
নূরতাজ ডটকমের মালিক জানান, থানা অভিযোগের পর মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। উল্টো তাকে নিয়মিত মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ অবস্থায় তিনি চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বিএনপির শৃঙ্খলা রক্ষায় সংগঠনের মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক বরাবর অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন।
পিবিআই এর তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, নূরতাজ ডটকমের মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্তনাধীন বিষয়ে এই মূহুর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নূরতাজ ডটকমের মালিক সেলিম শেখ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টু বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।