টাঙ্গাইলের সখীপুরের করটিয়াপাড়া বাজারের উত্তর পাশে কাঁকড়ার ঝোড়া খালের ওপর সোয়া দুই কোটি ব্যয়ে গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ শেষ হয়নি ৫ বছরেও।
অভিযোগ আছে, প্রকল্পে নিযুক্ত ঠিকাদার কাজের চেয়ে বেশি বিল উত্তোলন করলেও, কাজ শেষ না করেই লাপাত্তা। এদিকে, দীর্ঘদিনের ব্রিজটির নির্মাণ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর উপজেলার করটিয়াপাড়া বাজারের উত্তর পাশে কাঁকড়ার ঝোড়া খালের ওপর ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে গার্ডার ব্রিজটি নির্মাণের উদ্যোগ নেই। এতে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৩১ টাকা।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস মাইন উদ্দিনবাসী কাজটি পেয়ে ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্মাণ কাজ শুরু করে। এটির নির্মাণ ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজটি এখনো শেষ হয়নি। অন্যদিকে কাজ বেশি দেখিয়ে অতিরিক্ত বিল তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপসহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কাঁকড়ার ঝোড়া ব্রিজটি সম্পূর্ণ না হওয়ায় কালিদাস, ঠকাইনাপাড়া, ফুলঝুড়িপাড়া, করটিয়া পাড়া, বেলতলী, হারিঙ্গাচালা, হতেয়া-রাজাবাড়ি, কালমেঘা, ছলংগা ও বহুরিয়া চতলবাইদসহ অন্তত ১৫ থেকে ২০টি গ্রামের মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
তারা জানান, নির্ধারিত সময় চলে গেলে আরও কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পরও ব্রিজের কাজটি শেষ না হওয়ায় ব্রিজটি এখন কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কালিদাস-বহুরিয়া সড়কের করটিয়াপাড়া বাজারের উত্তর পাশে কাঁকড়ার ঝোড়া নামক স্থানে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই পিএসসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণাধীন ব্রিজটির কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে । ব্রিজটির সামনে রয়েছে বেশ বড় গজিয়ে ওঠা নানা জাতের গাছ, একটু দূর থেকে তাকালে মনে হয় এখানে ব্রিজ নয় গাছ দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয় শাজাহান চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি জানান, এই ব্রিজটির কাজ শেষ না হওয়ায় কারণে এই এলাকা ও পাশ্ববর্তী এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ বিপদে রয়েছে, অথচ এখানে সরকার এত টাকা খরচ করে এলাকাবাসী সুবিধার জন্য কাজ করেছিল কিন্তু স্থানীয় এলজিইডির অফিসের লোকজনের সহযোগিতায় পেয়ে ব্রিজের কাজটি শেষ না করেই নাকি বিল তুলে নিয়ে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে। এখন এই নির্মাণাধীন ব্রিজটির লোকজনের জন্য গলায় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
করটিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, এই রাস্তা দিয়ে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন।
ব্রিজটির কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। স্থানীয়রা একটি বাঁশের চাটাই দিয়ে নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশেই বিকল্প সড়ক তৈরি করে চলাচল করছেন। এতে মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনার কবলেও পড়তে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এই রাস্তাটি হয়ে পড়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, আগে এলজিইডির লোকজন দেখা গেলেও কয়েক মাস ধরে তাদেরও আর দেখা যাচ্ছে না। ব্রিজটি না হওয়ায় ১৪ থেকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে তাদের উপজেলা শহরে যেতে হয়। এতে তাদের অর্থ ও সময় উভয়ই বেশি ব্যয় হচ্ছে।
উপজেলা বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা জানান, এই সড়ক দিয়ে বিভিন্ন সেবাগ্রহীতা ও উপকারভোগীদের একটি বৃহৎ অংশ যাতায়াত করে।
ব্রিজটির কাজ শেষ না হওয়া কারণে বিকল্প সড়ক ঘুরে আসতে অনেক সময় লেগে যায় এবং ভিজিডি বা ভিজিএফ এর উপকারভোগীরা চাল নিয়ে যেতে এতে অনেক টাকা ভাড়াও দিতে হয়। বৃদ্ধ, নারী-শিশুসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সখীপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান জানান, এই ব্রিজের কাজ হয়েছে ৮০ ভাগ আর বিল দেওয়া হয়েছে ৭৭ ভাগ।
জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এই কাজটি বাতিল করে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে এবং কাজটি শেষ করতে না পারার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হবে।
কাজের চেয়ে অতিরিক্ত বিল দেওয়ার বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি অতিরিক্ত বিল যতটুকু দেওয়া হয়েছিল এখন কাজের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে।’
এবিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো, বাবুল আক্তার জানান, ‘এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন মাসেই শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হবে।’
সখীপুরের অসম্পূর্ণ ব্রিজ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এই বিষয়গুলি তদারকির জন্য জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এবং উপজেলা প্রকৌশলী রয়েছেন, তাদের সাথে আলাপ করার পরামর্শ দেন।