বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছেন, দুই হাজার শহীদ, শত শত মানুষের পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব, হাজার হাজার মানুষের নির্যাতন-নিপীড়নের সিঁড়ি বেয়েই এসেছিল চব্বিশের ৩৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থান।
‘জন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে প্রফেসর ড. ইউনূস নেতৃত্ব নিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় সংস্কার, খুনি-লুটেরাদের দৃশ্যমান বিচার, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি থাকলেও একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গোলকধাঁধা তৈরি করেছে। এ গোলকধাঁধার মাঝেই পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের বন্দরের মালিকানা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’।
চট্টগ্রাম বন্দর পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সোমবার (১৭ নভেম্বর) মহানগরী জামায়াত আমীর এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিদেশি নাগরিক লুৎফে সিদ্দিকী, আশিক চৌধুরীদের বন্দরের দায়িত্ব দিয়েছিলেন ড. ইউনূস, জুলাই বিপ্লবের সাথে যাদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতাও ছিল না। তারাই বন্দর সেক্টরে পতিত স্বৈরাচার ও নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী আধিপত্য চাপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি করে দিয়ে তারা চলে যাবেন বিদেশে।
তিনি বলেন, বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা অপারেশন খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনও সোচ্চার হয়েছে। আমরাও কোম্পানি আইন ১৯৯৪ সহ প্রযোজ্য আইন এবং শ্রম আইন ২০০৬ বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্রের নীতিমালা মেনে জনগণকে অবহিত করে বন্দর পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছিলাম। অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বন্দরের দীর্ঘসূত্রিতা ও দুর্নীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং জুলাই বিপ্লবের টার্গেটকেও বিবেচনায় রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের আমীর বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে উন্মুক্ত দরপত্রের প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে জিটুজি’র ভিত্তিতে পিপিপি এর প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নেওয়ার ছদ্মাবরণে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে শুরু হওয়া সমঝোতাগুলোকেই মূলত এগিয়ে নেয় বন্দর বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠজনেরা। ১২ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে বন্দরের চেয়ারম্যানকে পাশে নিয়ে বিডা’র চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান যে- লালদিয়ায় এপিএম টার্মিনালকে বন্দর নির্মাণ এবং পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে এবং খুব সহসাই চুক্তি হতে যাচ্ছে। এরপর প্রথমবারের মতো সরকারের পক্ষে আশিক চৌধুরী বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করেন, এপিএম এর সাথে দেশিয় একজন অংশীদারের অল্প শেয়ার আছে।
জামায়াতের আমীর নজরুল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালে এপিএম টার্মিনালের সিইও যখন শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতে আসে তখনি বন্দর সেক্টরে জানাজানি হয় যে, কনটেইনার ব্যবসার সাথে জড়িত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়ের মাধ্যমে এপিএম বাংলাদেশে এসেছে এবং ঐ ব্যক্তিই হবেন স্থানীয় অংশীদার। এখন বিভিন্ন সূত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে, ঐ ব্যক্তিই হচ্ছেন আশিক চৌধুরীর প্রকাশ করা সেই অংশীদার। অর্থাৎ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আত্মীয় হতে যাচ্ছেন আগামী ৩০-৪০ বছরের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে আধুনিক টার্মিনালের অন্যতম মালিক।