গাজীপুরের টঙ্গী ও শ্রীপুরে ভূমিকম্পের সময় কয়েকটি পোশাক কারখানায় আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে প্রায় চার শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্প চলাকালে উঁচু ভবন দুলতে শুরু করলে ঘরবাড়ি, অফিস, শিল্পকারখানা, দোকানপাট থেকে মানুষ দ্রুত খোলা জায়গায় ছুটে আসে। ছুটির দিন হওয়ায় অধিকাংশ পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক এলাকায় যে কয়েকটি পোশাক কারখানা খোলা ছিল সেগুলোর শ্রমিকেরা হুড়োহুড়ি করে রাস্তায় নেমে পড়ে। অনেকে নামতে গিয়ে আহত হন।
টঙ্গীর পাগাড় বিসিক এলাকার ফ্যাশন পালস কারখানার শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে শতাধিক শ্রমিক আহত হয়। একইসময় পিনাকি এপারেলস নামে আরও একটি কারখানার শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অন্য শ্রমিকরা তাদেরকে উদ্ধার করে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হাসপাতালে নেয়। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. তারিক হাসান বলেন, যেসব রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হয়েছেন। এছাড়াও হুড়োহুড়ি করে পদদলিত হয়ে অনেকেই হাত-পায়ে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১০-১৫ জনকে ভর্তি এবং অর্ধশতাধিক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
ভূমিকম্পের ফলে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় একটি ছয় তলা ভবন হেলে পড়ার খবর আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে। খবর পেয়ে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহীন আলম বলেন, ভবনটি পরিদর্শন করে দেখা গেছে এটি আগে থেকেই অন্য ভবনের সাথে লাগোয়াভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণের সুযোগ নেই। বিষয়টি রাজউক, গাউক এবং সিটি করপোরেশনের দেখভালের দায়িত্ব।
এছাড়াও শ্রীপুরে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর একটি পোশাক কারখানায় তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে তিন শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ি এলাকায় ডেনিমেক লিমিটেড পোশাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
শ্রমিকরা জানান, ভূমিকম্পের সময় সাত তলা ভবনের ওই কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় কারখানা কর্তৃপক্ষ ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠলে কর্মরত শ্রমিকরা ফ্লোর থেকে নামার সময় পদদলিত হয়ে অনেক শ্রমিক আহত হন।
পরে তাদের গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল (নিটোর), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাইয়িদা আফরোজ ইমা জানান, এপর্যন্ত শতাধিক শ্রমিক হাসপাতালে রেজিস্ট্রার হয়েছে। তবে বেড স্বল্পতার কারণে আহতদের স্বজনরা তাদের এ হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলম হোসেন বলেন, ‘গাজীপুরে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। কিছু শ্রমিক হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের টিম বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি দ্রুতই স্বাভাবিক হবে।’
সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ
সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক সরফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নগরবাসীর সুরক্ষা ও সেবা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভূমিকম্পের পরপরই ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।
নগর ভবন–২য় তলা, কক্ষ নং–২০১
টেলিফোন: ০২-২২২৪৪২৪০৭০
মোবাইল: ০১৭১২৮৩৬৮৭৩, ০১৯১৫৬৭৬৮৩২
ই-মেইল: secretary@gcc.gov.bd
সিটি কর্পোরেশন সচিব মোঃ আমিন আল পারভেজ জানান, বিদ্যুৎ, পানি, স্যানিটেশন, ভবনে ফাটল— যেকোনো অভিযোগে আমরা এখনই রেসপন্স করছি।
জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ
গাজীপুরের এডিসি জেনারেল মুতাসেম বিল্লাহ জানান, ভূমিকম্প পরবর্তী তথ্য সংগ্রহ ও নাগরিক সেবা প্রদানে জেলা প্রশাসনও নিজের জরুরি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা
কক্ষ নং – ১০৫, গাজীপুর
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা: মোঃ আওলাদ হোসেন ও সানজিদা আক্তার
টেলিফোন: ০২-২২৪৪২৩১৭৬
মোবাইল: ০১৭০০৭১৬৬৭৯, ০১৬২০২৮৪১৬৪
ই-মেইল: drrogazipur@ddm.gov.bd
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলম হোসেন বলেন, জরুরি সেবা নিশ্চিতের জন্য সব উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ একযোগে কাজ করছে। হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত জানানো হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোতাছেম বিল্যাহ বলেন, নাগরিক সেবা, নিরাপত্তা, ক্ষয়ক্ষতি যাচাই— সব প্রক্রিয়া জরুরি গতিতে চলছে। যেকোনো তথ্যের জন্য আমাদের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করুন।