নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় মরমী কবি বাউল সাধক জালাল উদ্দীন খাঁর মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে।
বিংশ শতাব্দীর বিশ ষাটের দশক পর্যন্ত এই গীতিকবি সাধনায় সক্রিয় ছিলেন। তিনি অনেক গান রচনা করেন। তার জীবদ্দশায় চার খন্ডের ‘জালাল গীতিকা’ গ্রন্থে ৬৩০ টি গান প্রকাশিত হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছিল ‘জালাল গীতিকা’ ৫ম খন্ড। সেই খন্ডে গানের সংখ্যা ৭২ টি।
তার মোট ৭০২ টি গান নিয়ে ২০০৫ সালে মার্চে প্রকাশিত হয় জালাল গীতিকা সমগ্র।
‘মানুষ থুইয়া খোদা ভজ,এই যন্ত্রণা কে দিয়েছে ?
মানুষ ভজ কোরান খোঁজ, পাতায় পাতায় সাক্ষী আছে ।’
জালাল উদ্দীন খাঁর বিখ্যাত উক্তি-
‘আমি বিনে কে বা তুমি দয়াল সাঁই,
আমি যদি নাহি থাকি,
তোমার জায়গায় ভবে নাই, যা করেছ আমায় নিয়ে
সৃষ্টিকে সৌন্দর্য গিয়ে
মহা প্রাণে করেছ ঠাঁই। ’
জালাল তার গানগুলোকে বিভিন্ন ‘তত্ত্ব’ এ বিন্যস্ত করে প্রকাশ করেন। সেগুলি - আত্মতত্ত্ব, পরমতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব,লোকতত্ত্ব,দেশতত্ত্ব, ও বিরহতত্ত্ব নামে পরিচিত। বিশ্ব রহস্য নামে তার একটি প্রবন্ধ গ্রন্থও রয়েছে।
রোববার (৩১ জুলাই) বেলা ১১ টায় কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের উদ্যোগে মরমী কবি বাউল সাধক জালাল উদ্দীন খাঁর ৫০ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দাঁড়িয়ে ০১ মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জালাল উদ্দীন খাঁর স্মরণ সভায় কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আসাদুল করিম মামুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম, কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মোফাজ্জল হোসেন ভূইয়া, কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জালালভক্ত মোঃ কামরুল হাসান ভূইয়া, কেন্দুয়া উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জামিরুল হক, প্রেস ক্লাব ক্লাবের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাট্যকার সাংবাদিক রাখাল বিশ্বাস, কেন্দুয়া উপজেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মহিউদ্দিন, কেন্দুয়া পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সজল কুমার সরকার প্রমূখ।
স্মরণ সভা শেষে বাংলাদেশ বেতার শিল্পী জালালভক্ত প্রদীপ পন্ডিত ও শুসেন সাহা রায় মরমী সাধক প্রয়াত জালাল উদ্দীন খাঁর লেখা গান পরিবেশন করেন পাশাপাশি তারা বলেন, প্রতি বছর যাতে এই সব গুণী মানুষের স্মরণে আমরা কোন এক ফাঁকে বসে শেয়ার করতে পারি, এবং কেন্দুয়া অডিটোরিয়াম নাম পরিবর্তন করে সেটাকে মরহুম জালাল অডিটোরিয়াম করার ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
আজকের প্রধান অতিথি কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান জালাল গবেষক মোঃ নূরুল ইসলাম মরমী সাধক জালাল খাঁর জীবন কর্ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন পাশাপাশি জালালভক্ত দাবিগুলির প্রতি পূর্ণ সমর্থন।
এছাড়াও কেন্দুয়া উপজেলা আশুজিয়া ইউনিয়নে সিংহেরগাঁও গ্রামে রোববার থেকে দু’দিনব্যাপী জালাল মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই গ্রামের আঙ্গিনায় তাকে সমাহিত করা হয়।
-বাবু/ফাতেমা