নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে চলতি ২০২০/২১অর্থ বছরে কৃষকদের জন্য সরকারী বরাদ্ধকৃত কৃষি প্রদর্শনীর উপকরণ, টাকা, ন্যয্য পাওনা থেকে কৃষকদের বঞ্চিত করার কারনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দূনীতির অভিযোগ উঠেছে। এই কর্মকর্তার দূর্নীতির কারণে কৃষকরা প্রদর্শনীর মাঠে লাভের পরিবর্তে নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দেশকে খাদ্যে বেশী ফলন উদপাদন বাস্তবায়ন ও কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প, প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের প্রণোদনা, বিনামূল্যে বীজ, সার, নগদ টাকা, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণ বরাদ্ধ দিয়ে থাকে। মোহনগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা প্রদর্শনীর জন্য রবি শষ্য, ধান, গম, পাট অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আগ্রহী কৃষক বাছাই করেন।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের প্রদর্শনীর টমেটো, ধান, ও অন্যান্য ফসলের জন্য বিনামূল্যে রাসায়নিক সার, টাকা ও উপকরণ কৃষকদের না দিয়ে তাদের ব্যাপক ঠকানো হয়েছে। অর্থাৎ কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের ন্যায্য পাওনা না দিয়েই বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, সার ও অন্যান্য উপকরণ কালোবাজারে বিক্রি করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের সবজি, ধান, গম, ভুট্টা, পাট বীজ উ’ৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পে এবং এনএটিপি প্রকল্পের সরিষা, টমেটো, গম, বেগুন, বসত বাড়িতে সবজি চাষ, ভার্মিকম্পোস্ট, প্রদর্শনীতে ব্যাপক অর্থ লুটপাটের চিত্র সামনে এসেছে।
কৃষকের সকল পাওনার হিসাব, নিকাশ নিজের মত কাগজে কলমে বিল ভাউচার পাকাপোক্ত করার কাজ সম্পন্ন করেন ঐ কর্মকর্তা। তিনি যে সকল ভূয়া বিল ভাউচার চুড়ান্ত করেন এই বিল ভাউচারের টাকা বিভিন্ন কৌশলে আত্মসাৎ করেন। প্রদর্শনী অফিসের মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা,কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের দিয়ে মাঠ পর্যায়ে জায়েজ করা হয়। বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানে ভিন্নচিত্র প্রকাশ পেয়েছে।
সরেজমিন কৃষকরা জানায়, সরকারী বরাদ্ধের বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। রবি শষ্য,পাট, সবজি চাষ, ধান চাষের প্রয়োজনীয় বীজ,যৎ সামান্য সার ও প্রদর্শনীর একটি সাইনবোর্ড তাদের ভাগ্যে জুটে। অন্যসব উপকরণ রয়ে যায় কৃষকের অজানা। এ বিষয়ে সুবিধাভোগী কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,তারা যতটুক বীজ সার পেয়েছেন তার বিবরণ দিয়েছেন। অফিসের হিসাবের খাতায়, বিল ভাউচারে সঠিকভাবে সকল উপকরন ও টাকা সেঠিক ভাবে বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। বাস্তবে সে ভাবে সরকারী বরাদ্ধের সকল প্রকার সহায়তা ভোক্তার কাছে পৌঁছায়নি। এব্যাপারে কতিপয় কৃষকরা উপপরিচালক বরাবরে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেছেন।
উপজেলার বড়তলী-বানিয়াহারী ইউনিয়নের নগর বসন্তিয়া ব্লকের মাহমুদ গ্রামের টমেটো চাষী শামছু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, প্রদর্শনীর জন্য ২ একর জমিতে টমোটো চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে একটি সাইনবোর্ড, প্রয়োজনীয় বীজ, ৯বস্তা রাসায়নিক সার, সামান্য কীটনাশক পেয়েছি। এসবের বাজার মূল্য অনুমান ১০ হাজার টাকার মতো হবে। আর কিছু পাইনি। প্রদর্শনীর জন্যই ২ একর জায়গায় টমেটো চাষ করতে হয়েছে। না হলে নিজের মত করে কয়েক ধরণের সবজি চাষ করলে লাভবান হতাম। এত পরিমান জমিতে টমেটো চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। যদি সরকারি বরাদ্ধের সব উপকরণ পেতাম তাহলে লাভবান হাতে পারতাম।এই কৃষকের মত অন্যান্য কৃষকরা হতাশ হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে ঐ কৃষকের ২একর টমেটো প্রদর্শনীর জন্য কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ ৬০হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। ছোট বড় মিলিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ই্উনিয়নে ২০টি টমেটো প্রদর্শনী দেয়া হয় এবং এভাভেই কৃষকদের সাথে প্রতারনা করা হয়।
এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন,বিনা মূল্যে প্রদর্শনীর সার, বীজ ও উপকরণ বিতরণে কোন অনিয়ম হয়নি। কৃষকদের সুবিধার্থে অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা কম বেশি করে সমন্বয় করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে বরাদ্ধের সব টাকা কৃষককে দেয়া যায় না। এই টাকা থেকে ভ্যাট,আইটি,একাউন্টস অফিস,অডিট, ডিডি অফিস ছাড়াও আরও কিছু খরচ করতে হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহম্মেদ আকুঞ্জি বলেন, প্রদর্শনীতে কৃষদের যে যে আইটেম দেওয়ার সরকারি নির্দেশনা আছে সেগুলো সব দিতে হবে। আইটেম বাদ দেয়া বা আংশিক দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
-বাবু/শোভা