নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় মাল্টা বাগান করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিন বন্ধু।
তিন বন্ধু হলেন- উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুস ছাত্তারের ছেলে বর্তমান কেন্দুয়া সদরের বাসিন্দা এবং ময়মনসিংহ সরকারী পলিটেকটিনেক্যাল ইনষ্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইনজিনীয়ারিং শেষ বর্ষের ছাত্র মোহাইমিনুল ইসলাম তমাল, কান্দিউড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান,বর্তমান কান্দিউড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তেতুলিয়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে কেন্দুয়া সরকারী কলেজের বিএ (পাস) পাশ করা ছাত্র রিজন আহমেদ ও উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের বানিয়াগাতী গ্রামের রহিছ উদ্দিন মিয়ার ছেলে কেন্দুয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করা তামিম ইকবাল রাসেল।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে বাগানে গিয়ে কথা হয় ৩ বন্ধুর সাথে। তারা জানান, রিজন এবং তমাল আপন মামাত-ফুফাত ভাই। রাসেল তাদের বন্ধু। দুই বছর আগে করোনাকালীন সময়ে বেকার বসে না থেকে একটা কিছু করার পরিকল্পনা করেন তারা।
মোহামিনুল ইসলাম তমাল বলেন, ইউটিউব এর মাধ্যমে মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হই। এ সময় আমাদের আত্মীয় এডভোকেট সেকুল ইসলাম সাগর ব্যাপক অনুপ্রেরণা যোগান। আমরা তখন বিভিন্ন এলাকার মাল্টা বাগান পরিদর্শন করি। গত ২০২০ সনে তেতুলিয়া গ্রামে রাজিনদীর পাড়ে মামার সাড়ে ৬ কাঠা (৬৫ শতাংশ) জমিতে ৩ বন্ধু মিলে শুরু করি মাল্টা চাষের বাগান। বাগানে বারী-১, বারী-২, ভেরাকাটা এবং চায়না বিয়েথনামীসহ ৪ প্রজাতির মোট ৩শ ৩৫টি মাল্টা গাছ লাগাই। গত মার্চ মাসে গাছ গুলোতে প্রথম ফুল আসে। বাগানটিতে ব্যাপক সহযোগিতা করেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন ভূঞা বাচ্চু এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম শাহজাহান কবির।
বাগানে যখন মাল্টা ধরতে শুরু করে তখন আকষ্মিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। বাগানে পানি উঠে ৪০টি গাছ মারা যায়। এখনো ৫/৬টি গাছ আক্রান্ত রয়েছে। বর্তমানে ২৯৫টি মাল্টা গাছের মাধ্যে ২শ গাছে মাল্টা ধরেছে যা আগামী সেপ্টেম্বর/২০২২ মাসে বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। তারা আরও জানান, মাল্টার পাশাপাশি থাই-৭ ও গোপালভোগ আম, থাই-৭ পেয়ারা এবং বিভিন্ন প্রজাতির ১শ লেবু গাছ লাগানো হয়েছে। প্রতিদিনই আশপাশের মানুষ আমাদের বাগান দেখতে আসেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাগান পদির্শন করতে তারা বলেন, আমাদের স্বপ্ন- বিশাল বড় একটি সফল বাগান তৈরি করা। সেই সাথে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে বার্মি কম্পোষ্ট প্রদর্শনীর দাবি জানান।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম শাহজাহান কবির বলেন, তমালদের ৩ ছাত্র বন্ধুর মাল্টা বাগানটি খুবই চমৎকার। আমাদের পরামর্শমতে তারা কাজ করছেন। গাছে গাছে প্রচুর মাল্টা এসেছে। দেখলে খুবই ভাল লাগে। এই বাগানের মাল্টাগুলো এখনই প্রচুর মিষ্টি। রং ধরতে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরে পাকবে। তারা ভাল লাভবান হবে বলে আশা করছি। ৩ বন্ধু মিলে মাল্টার বাগানের পরিকল্পনাকে কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি অফিস সাধুবাদ জানায় পাশাপাশি যেকোন ধরনের সমস্যা কিংবা পরামর্শ দিতে কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি অফিস বদ্ধপরিকর বলে তিনি আশ্বাস দেন। বার্মি কম্পোষ্ট প্রদর্শনীর ব্যাপারে বলেন, এটি গোবর, কচুরিপানা, পঁচা লতা-পাতা ও কেঁচুর মাধ্যমে উৎপন্ন কেঁচু জাতিয় সারের নামই বার্মি কম্পোষ্ট। আমরা প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী দিই। সুযোগ আসলে আমি সেখানে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করব। আপনাদের মাল্টা বাগানের সফলতা কামনা করছি পাশাপাশি আপনাদের সফলতা দেখে অন্য কৃষকরাও আকৃষ্ট হবে, এটা আমার বিশ্বাস।
-বাবু/ফাতেমা