গাজীপুরের কালীগঞ্জ জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিরিনা আক্তার (৩০) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার ৬ আসামিকে জেলগেটে দু’দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত অগ্রগতির জন্য গ্রেফতারকৃত দুই আসামিকে আরো ৫ দিনের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার (০৫ সেপ্টেম্বর) সকালে মামলার সার্বিক বিষয়য়ে কথা হয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মশিউর রহমান খানের সাথে।
তিনি প্রতিবেদককে জানান, কালীগঞ্জ জনসেবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় নিহত প্রসূতির স্বামী উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক মিয়া (৩৯) বাদী হয়ে চিকিৎসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাসুদসহ ৯ জনের নামে ও ৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় একটি মামলা (নং ১৮) দায়ের করেন।পরে সেই মামলায় গ্রেফতার ৬ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে গত ২৫ আগস্ট আদালতে আবেদন করা হয়। পরে রিমান্ড শুনানি শেষে গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে ২ দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদেশ দেন গাজীপুর সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২-এর বিচারক রাগীব নূর।
অভিযুক্তরা আসামিরা হলো টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানার আগদেউলি গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে ওটি বয় আশিকুর রহমান আশিক (২৫), কালীগঞ্জের পিপ্রাশৈর গ্রামের অরুন কস্তার মেয়ে সিনিয়র নার্স সংগিতা তেরেজা কস্তা (৩৩), তুমলিয়া গ্রামের ক্লেমেন্ট ক্রুশের স্ত্রী জুনিয়র নার্স মেরী গমেজ (৪০), একই গ্রামের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে হাসপাতালের অন্যতম অংশীদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তার (৩১), ঢাকার লালবাগ এলাকার ধানেছ আলীর মেয়ে রিসেপশনিস্ট শামীমা আক্তার (৩২), বালীগাঁও গ্রামের শরিফ মিয়ার স্ত্রী নার্স সীমা আক্তার (৩৪)। তাদের সকলকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এছাড়াও বালীগাঁও গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে জনসেবা হাসপাতালের ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম (৩১), টাঙ্গাইল সদরের পাড়াদিঘুলীয়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের ছেলে ডাঃ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (৫০) এবং মাগুরা জেলার মহাম্মদপুর থানার নজির মিয়ার ছেলে প্যাথলজিস্ট শাওন (২৪) নামের তিনজন আসামি পলাতক রয়েছে।
এসআই মো. মশিউর রহমান খান আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে গত দু’দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে, যা মামলার তদন্ত অগ্রগতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তবে মামলা তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছেনা বলেও তিনি জানান। কিন্তু অধিকতর তদন্তের জন্য গ্রেফতারকৃত বন্যা আক্তার (৩১) ও আশিকুর রহমান আশিককে (২৫) নামের দুই আসামিকে আরো ৫ দিনের জন্য গাজীপুর সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এর আগে গত ২৪ আগস্ট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) অভিযুক্ত ৬ আসামিকে আটক করে কালীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। পরে অন-অনুমতি ব্যক্তির মাধ্যমে রক্ত পরিচালনা করে রক্তগ্রহীতার মারাত্মক ক্ষতি করে একে-অপরের পরস্পর যোগসাজশে একই উদ্দেশ্যে অবেহেলার কারণে মৃত্যু ঘটানোর অপরাধে ৩০৪ (ক) এবং ১০১/৩৪ ধারায় এবং নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন আইন এর ২৫ ধারায় মধ্যরাতে মামলা নথিভুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২১ আগস্ট জনসেবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় শিরিনা আক্তার নামের প্রসূতির মৃত্যু হয়। রক্তশূণ্য প্রসূতি ওই রোগীর এবি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন থাকলেও তাকে পুশ করা হয় বি পজেটিভ রক্ত। এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মনজুর-ই-এলাহী, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী ডাক্তার সানজিদা পারভীনকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির বাকী দুই সদস্য হলেন একই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. মুনমুন আক্তার, মো. এমরান (অ্যানেস্থেসিয়া)।
-বাবু/এ.এস