শনিবার ২৮ জুন ২০২৫ ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২৮ জুন ২০২৫
গফরগাঁওয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ধ্বংসের পথে ও শিক্ষা অব্যবস্থাপনা মানসম্মত পাঠদানের অভাব
মাজাহারুল ইসলাম রাজু, ময়মনসিংহ গফরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ২:৫৭ PM আপডেট: ০৬.০৯.২০২২ ২:৫৯ PM
গফরগাঁওয়ে একজন, দুইজন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাসে পাঠদান। ময়মনসিংহে গফরগাঁও উপজেলায় নাজুক অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খুবই নাজুক অবস্থা। কোনো কোনো শ্রেণিতে এক, দু’জন আবার কোনো শ্রেণিতে নেই একজন শিক্ষার্থীও।

আবার কোনো বিদ্যালয়ের তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একসাথে একটি কক্ষে পাঠদান করা হচ্ছে। স্থানীয় শিক্ষা অফিস যদিও দাবী করে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিত আছে কিন্তু সরজমিনে দেখা যায় তার উল্টে চিত্র। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি থাকে। সম্প্রতি সাপ্তাহখানিক ধরে সরজমিনে উপজেলার প্রতন্ত অঞ্চলের অর্ধশতাধিক বিদ্যালয়গুলো ঘুরে দেখা যায় এই দৃশ্য। পাতলাশী নায়েব আলী প্রধান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে তৃতীয় শ্রেণীতে ০১জন, পঞ্চম শ্রেণীতে ০২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিতি রয়েছে। তবে চতুর্থ শ্রেণীতে কোনো শিক্ষার্থী নেই, অথচ বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতা অনুযায়ী মোট শিক্ষার্থী ৫৭ জন রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, চলাচলের রাস্তা খারাপ থাকায় আজ ০৮ই আগষ্ট শিক্ষার্থীর উপস্থিত কম।

বারইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায় তৃতীয় শ্রেণীতে পাঠদান করছেন প্রধান শিক্ষক কাহার মিয়া। এই শ্রেণিতে ১৫জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিতি ০১ জন। চতুর্থী শ্রেণীর কক্ষে ১৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিতি ০৪ জন। তবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ উপস্থিতি নেই। প্রধান শিক্ষক কাহার মিয়ার দাবী অন্য দিন প্রায় সকল শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। মেদনা টেক ইউসুফ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৪জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষকদের পদ ০৫টির মধ্যে ০৩টি পদেই শূন্য। তবে বিদ্যালয়ে উপস্থিত পাওয়া গেছে শুধু সহকারী শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিনকে। তিনি একটি কক্ষে একসঙ্গে তৃতীয় শ্রেণীর ০৫জন, চতুর্থ শ্রেণীর ০৪জন, পঞ্চম শ্রেণীর ০৫জন শিক্ষার্থীকে পাঠ দান করাছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একাতো। তাই বাধ্য হয়ে একাই পাঠদান করাছি। আমতুরের টেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ০৫ জন শিক্ষকের মধ্যে কর্মরর্ত ০৩ জন। এখানে তৃতীয় শ্রেণী ১০ জনের মধ্যে ০২ জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ১০ জনের মধ্যে ০৩ জন, পঞ্চম শ্রেণীতে ১০ জন মধ্যে ০৫ জন শিক্ষার্থীকে উপস্থিত পাওয়া গেছে। প্রধান শিক্ষক বাছিরুজ্জামানের দাবী শুধু আককেই ০৮ আগষ্ট শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম। আংগাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ১১০ জন তার মধ্যে তৃতীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি কক্ষে ১৭ জন শিক্ষার্থীকে উপস্থিত পাওয়া গিয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সিনথিয়া রুহামা লৎফুর রহমানের মতে প্রতিদিন এই কয়েক জনেয় স্কুলে আসে । মৃধা বাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায় তৃতীয় শ্রেণিতে ২৬ জনের মধ্যে ৫ জন চতুর্থ শ্রেণিতে ১৯ মধ্যে ৮ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ১২ জনের মধ্যে ৫ শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে। সাংবাদিকরা স্কুলে এসেছে এমন খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম দ্রত সময়ের মধ্যে ছুটে আসে স্কুলে অন্যদের মতো তিনিও বলেন, শুধ আজ ১০ই আগস্ট শিক্ষার্থী কম এসে। চান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ০১ জন কেউ উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। চতুর্থ শ্রেণীতে ১৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ০২জন এবং পঞ্চম শ্রেণীতে ১৮ জন এর মধ্যে ০৩ জন শিক্ষার্থী উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্রধান শিক্ষিকা নাইরিন শাহনাজ বলেন, গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠান থাকায় আজ কম এসেছে।

ছোট বারইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২৯জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণী মাত্র ১৩জন শিক্ষার্থী উপস্থিত পাওয়া গেছে। টাংগাব দক্ষিণ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১৭জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে মিলিয়ে ২৩জন শিক্ষার্থী উপস্থিত দেখা গেছে। একই ভাবে পাইথল, নিগুয়ারী, দত্তেরবাজার, টাংগাব, লংগাইর, চরআলগী, গফরগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ঘুরে শিক্ষার্থী উপস্থিত একেবাবে কম দেখা গেছে। এ বিষয়ে গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মর্কতা (ইউএনও) আবিদুর রহমান বলেন, প্রায়ই বিভিন্ন বিদ্যালয় প্রদর্শন করছি, বা করে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতির নিশ্চিত করার জন্য আমি যথাযথ ব্যবস্থা নিব।

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত