বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫ ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫
‘ডাঙার দোকান সাগরে’
মাহমুদ হাসান, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)
প্রকাশ: বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৫:৫৪ PM

জোৎস্না ভরা আকাশ। চারদিক আধাঁরে ছায়া। নির্দিষ্টস্থানে লাল-নীল এবং সবুজ রঙের বাতির আলোয় টিপটিপ ঝিলিক মেলা। দেখে যে কারো মনে হবে কোন স্টেজ শো-এর আলোকসজ্জা। তবে- বাস্তবে কিন্তু তা নয়। ওই আলো জ্বলছে সোনারচর ও কলাগাছিয়া চরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাগর মোহনায়, সাগরের জেলে ট্রলারে। যেখানে দিনগড়িয়ে রাত নেমে এলে ভিড় জমায় জেলেরা। অপ্রয়োজনে নয়, প্রয়োজন মেটাতে এখানে ছুঁটে আসছেন তারা। সাগর মোহনায় জেলেদের মেলবন্ধনের মূল কারণ: ‘ভাসমান দোকান’। এ দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য পাওয়া যায়। আছে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার ওষুধ।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়ন সংলগ্ন সাগর মোহনায় তিন থেকে চার বছর আগে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে ডাঙার মুদি দোকানের সাজ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ‘ভাসমান দোকান’। যে দোকানে ভেসে ভেসেই চলতো বেচাবিক্রি। ভাসমান এ দোকানের ক্রেতা বলতে শুধুই নদী এবং সাগরের জেলেরা। মাঝেমধ্যে এ দোকানের স্বাদ নিতে ছুঁটছেন সোনারচর সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সাগর মোহনায় ইঞ্জিনচালিত তিনটি স্টিলের ট্রলার ভাসছে। ট্রলারের ভেতরে ডাঙার দোকানের সাজ সেজেছে। বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য। এখান থেকেই জেলেরা যে যার প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করছেন। ভাসমান এই দোকানের পাশাপাশি রয়েছে সাঁড়ি সাঁড়ি কয়েকটি জেলে ট্রলার। যারা অবসরে এখানে নোঙর করেন। এসময় দেখা যায়, দুইটি জেলে ট্রলার নোঙর করে রসদ কিনছেন ভাসমান একটি দোকান থেকে। কথা হয় কুয়াকাটার জেলে মোসলেমের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘আমার মৎস্য এলাকা মহিপুর-কুয়াকাটা। আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় কুয়াকাটা যেতে পারিনি। সোনারচর এলাকায় ঘুরেছি। আমাদের তেল শেষ হয়ে গেছে। অন্য জেলে ট্রলারের সহায়তায় সাগরের এই দোকান এসেছি। এখান থেকে তেল ও প্রয়োজনীয় বাজার সদয় করে নিবো। সাগরে এরকম দোকান হওয়ায় বিপদগ্রস্ত জেলেরা অনেক উপকৃত হচ্ছে।’

নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত সোনারচর অবলোকনে এসে সৈকতের প্রবেশপথে ভাসমান ট্রলার দেখে মুগ্ধ হয়েছেন প্রকৃতিপ্রেমী কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘সোনারচরের মনোরম দৃশ্যের পাশাপাশি সাগর মোহনায় ভাসমান দোকান দেখে আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে। সোনারচরে পর্যটকরা আসলে তাদের খাবার অথবা নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল খুব সহজেই এই দোকান থেকে সংগ্রহ করতে পারে। এবং এ দোকান আমার কাছে ব্যতিক্রম মনে হয়েছে। এটিও একটি উপভোগের অংশ পর্যটক হিসেবে মনে করি।’ 

ভাসমান দোকানের উদ্যোক্তা নজরুল দফাদার বলেন, ‘জেলেদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে বরফ ট্রলার ছেড়ে সাগরে ‘ভাসমান’ মুদি দোকান দিয়েছি। যার ফলে সাগর থেকে জেলেরা এখানে এসে প্রয়োজন মিটিয়ে আবার সাগরে চলে যেতে পারে খুব সহজে। ভাসমান এই দোকানে সুঁই-সুতা থেকে শুরু করে সকল ধরনের মালামাল এবং প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধপত্র পাওয়া যায়। স্থানীয় বাজার মূল্যে এখানে মালামাল বিক্রি করি। এতে জেলেরাও সুবিধা পায়। আমরাও বেচাবিক্রি করি। সাগরের মাঝে ভাসমান দোকান পেয়ে জেলেরা খুশি।’   

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল হক বাবুল বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরা। সাগরে বিক্রি। সাগর থেকেই রসদ নিয়ে মাছ ধরতে যেতে পারছে জেলেরা। এই সংযোগ স্থাপন করেছে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের কয়েকজন উদ্যোক্তা। যার ফলে মাছ ধরায় ব্যাহত হচ্ছে না। এতে সাগর মোহনায় ভাসমান দোকান হওয়ায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে জেলেরা।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সালেক মুহিদ বলেন, ‘জেলেদের সুবিধার্থে সাগর মোহনায় ভাসমান দোকান হয়েছে। এটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এ ধরনের কাজ খুবই প্রসংশনীয়। ভাসমান দোকান পরিচালনায় উদ্যোক্তারা যদি কোন সম্যসার সম্মুখীন হয় আমাদের জানালে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করা হবে।’

বাবু/এসএ ম

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত