বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫ ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
বহু মামলার আসামি জঙ্গি সালাহুল'র কাজই পাহাড় কাটা
রাশেদুল ইসলাম, কক্সবাজার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১১:৩৯ AM আপডেট: ০৮.০৯.২০২২ ৩:২০ PM
৫ একরের বেশি সরকারি বনভূমি দখল করে একের পর এক পাহাড় কেটে গড়ে তুলেছেন 'ইমাম মুসলিম সেন্টার' নামে মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। মাদরাসা কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে পাহাড় কেটে নির্মাণ করেছেন আলিশান বাড়ি। এসব ঘটনায় পরিবেশ আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করে দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে থেমে থেমে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছেন বহুল আলোচিত হাফেজ ছালাহুল ইসলাম প্রকাশ জঙ্গি ছালাহুল।

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজার কক্সবাজার সরকারি কলেজের পেছনে হাফেজ ছালাহুল এর প্রতিষ্ঠিত বহুল আলোচিত-সমালোচিত 'ইমাম মুসলিম সেন্টার' নামের প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে পাহাড় কাটার এ ভয়াবহ নিধনযজ্ঞ চলছে। তবে সরকারি জমি দখল ও পাহাড় কাটা আড়াল করতে তিনি মসজিদ-মাদ্রাসার দোহাই দিয়ে থাকেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, কক্সবাজার সরকারি কলেজের পেছনে 'ইমাম মুসলিম সেন্টার' এর অভ্যন্তরে উত্তর ও পশ্চিম পাশে বিশাল পাহাড় কাটা হচ্ছে। পাহাড় কাটা মাটি ঠেলাগাড়িতে করে নিয়ে হাফেজ ছালাহুল এর বাড়ির সামনে মজুদ করা হয়। সেখান থেকে ডাম্প ট্রাকে করে আনুমানিক ৫০০ গজ দক্ষিণে হাকিমের টমটমের গ্যারেজের সামনে নিচু জমির প্লট ভরাট করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে এভাবে পাহাড় কাটা চললেও সেখানে কেউ বাধা দিচ্ছে না। খবর পেয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জিল্লুর রহমান পাহাড় কাটার দৃশ্য পরিদর্শন করেছেন। তবে তাঁর উপস্থিতি টের পেয়ে শ্রমিকরা ঠেলাগাড়ি, শাবল, বেলচা সহ পাহাড় কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম ফেলে পালিয়ে যায়। প্লট ভরাটকারী হাকিম জানান, মাদরাসা থেকে মাটি এনে প্লটটি ভরাট করা হচ্ছে। তিনি এটি দেখাশুনা করেন মাত্র, প্লটের মালিক অন্য এক ব্যক্তি, তার নাম তিনি জানেন না।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ৫/৬ একর বনভূমি দখল করে পাহাড় কেটে মাদরাসা সহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রাখে হাফেজ ছালাহুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। ওই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এরপরও পাহাড় কাটা অব্যাহত রাখলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। নোটিশ দেয়া হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। কিন্তু কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত ৫/৬ মাস ধরে বেপরোয়া ভাবে পাহাড় কাটা শুরু হয়। যা গতকালও অব্যাহত ছিল। এলাকাবাসী জানান, এখানে কেউ ঘর নির্মাণ বা থাকার জন্য সামান্য এক কোদাল মাটি পরিস্কার করলেও অভিযান চালানো হয়, মামলা-জরিমানা করা হয়। কিন্তু হাফেজ ছালাহুল নামের ব্যক্তি প্রকাশ্যে বছরের পর বছর ধরে পাহাড় কেটে ডাম্প ট্রাকে মাটি বিক্রি করলেও কেউ কিছু বলেনা। প্রশাসনের অনেক লোকজন আসলেও ঘুরে চলে যায় বলে দাবি এলাকাবাসীর। এলাকাবাসী আরও জানান, হাফেজ ছালাহুল একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি একসময় ওই আস্তানায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিতেন। মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের এখানে আশ্রয় দিতেন। এখনও এটি রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এখনও রোহিঙ্গা বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে তিনি কারাভোগও করেছেন।

পাহাড় কাটার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাফেজ ছালাহুল ইসলাম বলেন, 'যা করছি প্রতিষ্ঠানের জন্য করছি। এটি একটি বড় প্রতিষ্ঠান।' কিন্তু পাহাড় কাটা যায় কিনা জানতে চাইলে পাহাড় ধ্বসে পড়ায় মাটি সরিয়ে নিচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'এনভায়রনমেন্ট পিপল' এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, '৫/৬ একর বনভূমি দখল করে পাহাড় কাটা চলছে প্রায় ১০ বছর ধরে। মামলা থাকার পরও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাহাড় কেটে চলেছেন। এতে একদিকে পাহাড় নিধনে উৎসাহিত হচ্ছে অন্যদিকে আইন লঙ্ঘনের প্রবনতা বৃদ্ধি পাবে।'

বন বিভাগের লিংক রোড বন বিট কর্মকর্তা সোহেল হোসেন বলেন, 'অভিযোগ পাওয়ার পর একবার ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড় কাটার দৃশ্য দেখেছেন, কিন্তু কাউকে পাননি।' আবার তিনি সেখানে অভিযান চালাবেন বলে জানান।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, 'পাহাড় কাটার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, 'পাহাড় কাটার দৃশ্য সরেজমিন দেখেছি। প্রতিষ্ঠান হলেও এভাবে পাহাড় কাটার আইনগত কোন সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।'

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত