জীবিকার সন্ধ্যানে পরিবার পরিজন নিয়ে ভবিষ্যাতের কথা চিন্তা করে, ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার আশায়। গত এক বছর পুর্বে সৌদি আরব গিয়েছিলেন আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কাউনিয়া গ্রামের খোরশেদ হাওলাদারের ছেলে আউয়াল হাওলাদার (৩৫)।
সেখানে কাজও শুরু করেছিলেন। ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান আউয়াল। লাশ এখনও সৌদি আরবে। টাকার অভাবে দেশে আনতে পারছেনা পরিবার। আরিফ বলেন ‘কয়েক দিন আমার আব্বা ফোন দেয় না। মানুষে কয় আমার আব্বা নাকি মইরা গেছে! আমার আব্বা মরে নাই। যদি মইরা যাইত তাইলে আব্বার লাশ বাড়িত আনতে এত দেরি লাগে ক্যা? আমনেরা সবাই আমার লগে মিচা কতা কইতাছেন ক্যা? আমারে কান্দাইয়া আমনেগো লাভ কী?’ যেকোনো মানুষ দেখলে এভাবেই আহাজারি শুরু করেন সৌদি আরবে স্টোক করে মারা যাওয়া আউয়ালের অবুঝ শিশুরা।
আমার আব্বারে আইন্নাদেন আব্বার মুখটা আমারে একবার দেহান, আমার আব্বা সৌদি গেছে। গত মাসেও টাহা পাডাইছে। আব্বার সাথে প্রতেকদিন কতা না কইলে আমার রাইতে ঘুম অয় না। কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন কাউনিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী আউয়াল হাওলাদারের ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মো. আরিফ, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মরিয়া ও নির্বাক হয়ে বসে থাকেন প্রথশ শ্রেণির ছাত্রী কারিমা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আউয়াল হাওলাদার (৩৫) দীর্ঘদিন ধরে বেকার ছিলেন। ২০২১ সালের ২১ আগষ্ঠ বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), কৃষি ব্যাংকের কাছে জমি বন্ধক রেখে আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশিদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে গিয়ে কাজ শুরু করেন। বাড়ীতে ও কিছু টাকা পয়সা পাঠাতে থাকেন। সম্প্রতি ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আউয়াল হাওলাদার (৩৫)। আউয়ালের মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকারের ছায়া । পরিবারের উপার্জনক্ষম এক মাত্র ব্যক্তির মৃত্যুতে ২ মেয়ে ১ ছেলেকে সাথে নিয়ে স্বামীর ছবি নিয়ে কেঁদে কেঁদে দিন পার করছেন নিহত আউয়ালের স্ত্রী খাদিজা (৩০)।
আউয়ালের পিতা খোরশেদ হাওলাদার বলেন, এক বছর পূর্বে আউয়ালকে বিদেশে পাঠাই কিন্তু বছর না যেতেই আমার ছেলে স্টোক করে মারা গেলো। এখন আমি শুধু ছেলের লাশ চাই যেনো মসজিদের পাশে কবর দিতে পারি। তিনি আরো বলেন, ‘ছেলের লাশটা পাইলেও কিছু সান্তনা পাইতাম। বিদেশ থেকে ছেলের লাশটারে আনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাই।’ আউয়ালের লাশ সৌদি আরবের আল কাসিম জেলার গুরাইদার মারগাজী হাসপাতালে রয়েছে। আউয়াল সৌদি গিয়ে ফ্রি ভিসায় কাজ করতেন। যেদিন আউয়াল মারা যান সেদিন সৌদি নাগরিক সলেমান দাখাইন এর কাজ করছিল। কিন্তু আউয়ালের নিয়োগ দাতা সলেমান দাখাইন না হওয়ায় লাশ দেশে না পাঠিয়ে সে হাসপাতালে রেখে দিয়েছেন। আউয়ালের পরিবার পরিবার সৌদি আরবে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে জানানো হয় লাশ আনতে হলে ২ থেকে তিন লাখ টাকা দিতে হবে। নতুবা লাশ পাঠাতে পারবেনা। অসহায় দরিদ্র পরিবারের সবকিছু বিক্রয় ধার ধেনা করে বিদেশ গিয়ে ছিলেন আউয়াল। ধারদেনাই পরিশোধ করা হয়নি। কিভাবে এত টাকা জোগাড় করবে। কোথায় পাবে এত টাকা । বাবার লাশ কখন আসবে পথে দিকে চেয়ে আছেন আউয়ালের অবুজ শিশুরা ও তার পরিবারের স্বজনরা।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতি: দায়িত্বে) এস এম সাদিক তানভীর বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অসহায় পরিবারটিকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে। আউয়ালের লাশটি দেশে আনার জন্য তার অসহায় পরিবারটি প্রবাসী কল্যানমন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
বাবু/জাহিদ