জন্মনিবন্ধনে ভুয়া মনির হোসেন লিখে করা হয়েছে প্রতিবন্ধী কার্ড। বাবার রয়েছে অর্ধকোটি টাকার দুইতলা পাকা বাড়ি। সুস্থ সবল দশম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলেকে অর্থের লোভে ছেলের নামে প্রতিবন্ধী কার্ড বানিয়েছেন মা। এভাবে সরকারি সহায়তা প্রতিবন্ধী ভাতা তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে নেছারাবাদ উপজেলা সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে।
মনিরুজ্জামান (মুনির) ঐ ওয়ার্ডের ফারুক মিয়ার ছেলে। দশম শ্রেণির ছাত্র মা শান্তা আক্তারের একান্ত কাছের মানুষ ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার সোহেল পারভেজ এর সহযোগিতায় সমাজ সেবা অফিস কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে ঐ ভাতার কার্ড করা হয়েছে এমন দাবি মনিরের বাবা ফারুক হোসেনের।
সমুদয়কাঠি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সামান্য দুরে জুলুহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে সুন্দর ডিজাইনের একটি বাড়ীর মালিক ফারুক হোসেন। তিনি ঢাকাতে ব্যবসা করেন। তার দুটি সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলে মনির তার সাথেই থাকে। ছেলে মনিরুজ্জামান দশম শ্রেনীর ছাত্র। তার মা শান্তা আক্তার ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোহেল পারভেজ মিলে ভূয়া মেডিকেল সনদ ও জন্ম নিববন্ধন দিয়ে অন্য প্রতিবন্ধী কার্ড বানিয়েছেন ছবির সাথেও কোন মিল দেখা যাচ্ছে না ভাতার কার্ডে।
ঐ কার্ডে মনিরুজ্জামানের নাম মনির হোসেন লেখা হয়েছে। যে এলাকার বাসিন্দা অর্থাৎ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গৌতম পাল এ বিষয়ে কিছুই জানেনা। তার কোন স্বাক্ষরও নেই। সোহেল পারভেজ প্রায় সার্বক্ষনিকই উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে, সাবরেজিষ্ট্রি অফিস এলাকায় পড়ে থাকেন। বিভিন্ন দফতরের কর্মচারীদের সাথে তার সক্ষতা রয়েছে বলে জানা যায়। অপর দিকে সোহেল পারভেজের সাথে শান্তা আক্তারের গভীর সম্পর্কের বিষয়টি এলাকায় ওপেন সিক্রেট সাংবাদিকের এমনটাই বক্তব্য দেন স্বামী ফারুক হোসেন। যে কারনে শান্তা আক্তার ও স্বামী ফারুক হোসেনের সাথে টানাপোড়েন দীর্ঘ দিনের।
মনিরুজ্জামান (মনির) এ প্রতিবেদককে জানান,আমি প্রতিবন্ধি নই আমার শারীরিক কোন সমস্য নেই। প্রতিবন্ধী হওয়ার জন্য অমি কখনো ডাক্তারের বা অফিসে কারো কাছে যাইনি। মনিরুজ্জামানের (মনির) বাবা ফারুক হোসেন জানান,আমার ছেলে মনির সর্ম্পূণ সুস্থ সবল মানুষ। সে দশম শ্রেনীর ছাত্র। সোহেল মেম্বারের সাথে আমার স্ত্রী শান্তার গভীর সম্পর্কের কারণে ওই দুজনে মিলে ভূয়া জন্ম নিবন্ধন মেডিকেল সনদ, ছবি তৈরি করে এবং নামের কিছুটা পরিবর্তন করে প্রতিবন্ধি ভাতার জন্য কার্ড বানিয়েছে। আমি বিষয়টি সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। আমি ওই কার্ড বাতিলসহ এর সাথে যারা জড়িত তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
স্বামীর অভিযোগ অস্বীকার করে শান্তা আক্তার বলেন, তার ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। আমি সোহেল মেম্বারকে চিনতামনা। আমার ননদের জামাই সাবেক মেম্বার তোফাজ্জেল হোসেন সোহেল মেম্বারের কাছে পাঠিয়ে ছিলেন। নামে ভুলত্রুটি সম্পর্কে বলেন সব মেম্বারে জানেন। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী দশম শ্রেনীতে পড়ে কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন প্রতিবছর ক্লাশে উঠায়ে দিয়েছি। ছবির বিষয়ে বলেন ওটাই আমার ছেলে মনিরের ছবি। এ বিষয়ে ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গৌতম পাল বলনে, আমি মনিরের নামে কোন প্রতিবন্ধী কার্ড করাইনি। কে বা কারা করিয়েছে আমি জানিনা। যারা সত্যিকারের প্রতিবন্ধী তাদের জন্য সুপারিশ করেছি।
৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোহেল পারভেজ বলেন, মনির সত্যিকারের প্রতিবন্ধী। তার মেডিকেল সার্টিফিকেট আছে। ওর মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। ভূয়া জন্মনিবন্ধন, নাম, ছবি পরিবর্তন করে অন্য ওয়ার্ডের মানুষের জন্য সুপারিশ কেন করেছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এক জনের জন্ম নিবন্ধন ৪/৫ টিও থাকতে পারে। অন্য ওয়ার্ডের কার্ড কেন করালেন এমন প্রশ্নে জবাবে বলেন চেয়ারম্যান করেছেন আমি করিনি। সুপারিশ পত্রে আপনার স্বাক্ষর রয়েছে এর উত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে সমুদয়কাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেযারম্যান মো. হুমায়ুন কবির বলেন, প্রতিবন্ধী না হয়েও মনিরের নামে প্রতিবন্ধী কার্ড করা হয়েছে বিষয়টি জেনেছি। কাজটি খুবই অন্যায় হয়েছে। মা বাবা ও সন্তান বলবে প্রতিবন্ধী কিনা। একজন সদস্যের ওপরতো বিশ্বাস রাখতে হয়। মেম্বার সই করেছেন বিধায় আমার সই করতে হয়েছে। যারা এটা করিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তপন কুমার জানান, সকল কাগজপত্র যাচাই করে ডাক্তারী সনদ দেখে কার্ড দিয়েছি। মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকলে ওই কার্ড বাতিল করা হবে। এখন পর্যন্ত সে ভাতা পায়নি। আমরা তদন্ত শুরু করেছি।
বাবু/জাহিদ