শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫ ২১ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫
নেত্রকোণায় গাছের সাথে এ কেমন নিষ্ঠুরতা
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোণা
প্রকাশ: সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৪:৫৬ PM আপডেট: ২৬.০৯.২০২২ ৪:৫৯ PM
গাছ মানুষের পরম বন্ধু। গাছ যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, তেমনি আর্থিকভাবেও উপকার করে। কিন্তু সেই গাছের সঙ্গেই করা হচ্ছে নিষ্ঠুর আচরণ। প্রয়োজনে–অপ্রয়োজনে গাছকে হত্যা করার অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে যেন সর্বত্র। এরকমই প্রতিযোগিতা দৃশ্যায়িত হচ্ছে নেত্রকোণার সকল উপজেলায়। এতে করে গাছের খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি এই জেলার সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে।

জেলার সবকয়টি সড়কে পাশের গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রচার-প্রচারণার অসংখ্য সাইনবোর্ড-ব্যানার-ফেস্টুন ও বিজ্ঞাপন। এসব ব্যানার, ফেস্টুন, বিজ্ঞাপন ঝোলানো হয়েছে পেরেক ঠুকে। একেকটি গাছ যেন একেকটি বিজ্ঞাপন বোর্ড। এভাবে গাছে পেরেক ঠোকা হচ্ছে, অথচ তা দেখার কেউ নেই। আসলে কারও এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই। 
শুধু নেত্রকোণা শহর নয়, পুরো জেলা জুড়েই এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পোস্টার, ব্যানার ও বিজ্ঞাপনে এমনভাবে ছেয়ে গেছে যে কোনটা কোন গাছ, তা আর চেনার উপায় থাকে না। এটা খুবই বিপজ্জনক একটি ব্যাপার। পরিবেশবিদদের মতে, পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয়, তা দিয়ে পানি ও এর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব ঢোকে। এতে গাছের ওই জায়গায় দ্রুত পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে গাছ মারাও যেতে পারে। তাই কোনো গাছে পেরেক ঠোকা মানে ওই গাছের চরম ক্ষতি করা। যেখানে বেশি করে গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্যা করা প্রয়োজন, সেখানে আমরাই উল্টো গাছের ক্ষতি করে চলেছি।

এভাবে গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড না লাগানোর বিষয়ে ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস হয়। কিন্তু শুধু কাগজপত্রেই আইনটি আছে। বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। এই আইনটি সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে এবং এর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। গাছ রক্ষায় প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। তা না হলে গাছের গায়ে পেরেক ঠোকা কখনোই বন্ধ হবে না। পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে উদ্যোগ নিতে হবে। গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড না লাগানোর বিষয়ে ২০০২ সালে জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস হয়। কিন্তু শুধু কাগজপত্রেই আইনটি আছে। বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ না নেয়ায় গাছের ওপর মানুষের অত্যাচার থামছে না দাবি নাগরিক সমাজের। তাই জনসচেতনতা তৈরি পাশাপাশি গাছ রক্ষার প্রয়োজনে এই আইনটি দ্রুত কার্যকর করার দাবি তাদের।

নেত্রকোণা জেলা শহরের এক সচেতন নাগরিক বলেন, রাজনৈতিক দলের প্রচারণা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য গাছ ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। একান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে গাছের গায়ে তার বা রশি দিয়ে তা বেঁধে ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো যেতে পারে। কোনোভাবেই পেরেক ঠোকা চলবে না। একই কথা বলেছেন বারহাট্টা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ বাবুল। তিনি আরও বলেন, গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড না লাগানোর আইনটি সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে এবং এর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। গাছ রক্ষায় প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। তা না হলে গাছের গায়ে পেরেক ঠোকা কখনোই বন্ধ হবে না। পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে উদ্যোগ নিতে হবে।

এদিকে, যত্রতত্র লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন কিংবা সাইনবোর্ড সরানোর জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একশনে যাওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নেত্রকোণা জেলার সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, গাছে পেরেক মারা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। গাছে পেরেক মেরে বিজ্ঞাপন টাঙানো বন্ধ করতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নেত্রকোণা জেলার উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে জনসচেতনতা তৈরিতে কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন।

গাছে পেরেক ঠুকে ব্যানার কিংবা ফেস্টুন সাইনবোর্ড টানানো দণ্ডনীয় অপরাধ বলে জানান জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস। তিনি বলেন,গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ও অক্সিজেন সংগ্রহ করে,গাছ আমাদের প্রকৃত বন্ধু। তিনি আরও বলেন, সতর্ক করার পরেও যদি কেউ গাছে পেরেক ঠুকে ব্যানার ও বিলবোর্ড টাঙায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাবু/জাহিদ
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত