শনিবার ২৮ জুন ২০২৫ ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২৮ জুন ২০২৫
কুবিতে আগ্রহ নেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের
কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০২২, ৯:৫১ PM

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রকাশিত ‘৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২০’অনুযায়ী ২০২০ সালে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের (৪টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় বাতীত) মধ্যে ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৬৭ জন। যা ২০১৯ সালের তুলনায় ২৮৫ জন বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও এর উল্টো চিত্র কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরের মধ্যে শুধু ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ মিলিয়ে চার জন বিদেশী শিক্ষার্থী এসেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।   ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোন বিদেশি শিক্ষার্থী আগ্রহ দেখায়নি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি।

রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চারজন শিক্ষার্থী সবাই ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার অনুষদের শিক্ষার্থী  এর মধ্যে তিনজন ছিলেন ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষের আর একজন ছিলেন ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের। এবং তারা সকলেই নেপালের নাগরিক।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন বিদেশি শিক্ষার্থী আসছে না এ বিষয়ে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে সেশনজট, আবাসন সমস্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা, ভর্তি প্রক্রিয়ায় জটিলতা, বিশ্ব র‍্যংকিং এ পিছেয়ে থাকা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিভাগ গুলোর পাঠদান প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন কাঠামো না থাকা।

>>সেশনজট

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ টা ডিপার্টমেন্টর প্রায় বেশির ভাগ ডিপার্টমেন্টেই লেগে আছে সেশনজট। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নুরুল করিম চৌধুরীর  সাথে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর ) পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের ৩২ টি সেমিস্টার ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৪ টি সেমিস্টারের রেজাল্ট আটকে আছে। সেমিস্টার শেষ হওয়ার ৮ সপ্তাহের মধ্যে রেজাল্ট প্রকাশ করার কথা থাকলেও কোন কোন ডিপার্টমেন্টে রেজাল্ট প্রকাশ হতে ছয় মাসেরও অধিক সময় লেগে যায়। ফলে কাঙ্খিত সময়ে শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি শেষ করতে পারে না। এতে করে চাকরির বাজারেও পিছিয়ে পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

>>আবাসন সমস্যা

২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯৬৫ জন। এর  বিপরীতে  ছেলেদের জন্য তিনটি হল ও মেয়েদের জন্য রয়েছে মাত্র দুইটি হল। এসব আবাসিক হলগুলোতে দেশীয় শিক্ষার্থীরা সিট পাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাশীল ছাত্র সংগঠনের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে সিট পেয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা এসে আবাসিক হলে কাঙ্খিত সিট পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা বিড়ম্ভবনার শিকার হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ কমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের।

>>রাজনৈতিক অস্থিরতা

কাগজে-কলমে রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের ঘোষণা থাকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ক্ষমতাশীল ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম। ফলে নানা সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যায় ক্যাম্পাসে। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষ ও ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়া নিয়ে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

>>বিভাগগুলোতে পাঠদান প্রক্রিয়ার নির্দিষ্ট কাঠামো না থাকা

একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত একটি বিভাগে কোন কোর্সগুলো পড়ানো হবে এসব বিষয়ে কোন ধারনাই নিতে পারবে না। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিটি বিভাগের পাঠদান প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা থাকে ওয়েবসাইটে। নির্দিষ্ট ধারণা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

>>ওয়েবসাইট সমস্যা

একটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে যে কেউ প্রথমেই সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রথমে ঢুকবে। কিন্তু বেহাল অবস্থা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটটির। সাধারণ তথ্যগুলো পেতেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। ওয়েবসাইটে একটি বিভাগ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই উল্লেখ করা নেই। 

এই বিষয়ে জানতে চাইল সমাজবিজ্ঞান  অনুষদের ডিন রবিউল আওয়াল বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ না থকার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কনটেন্ট ও এই সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়স্তু তাদের কাছে উপস্থানে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। বিদেশী শিক্ষার্থী থাকলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যংকিংয়েও প্রভাব ফেলে। নতুন উপাচার্য আসার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা স্টেক হোল্ডারকে নিজেদের কাজ সঠিক ভাবে পালনের মাধ্যেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে হবে।

উপাচার্য এ এফ এম আব্দুল মইন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বিদেশী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ না থাকার পেছনে মূল কারন হলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যংকিংয়ে এখনো পিছিয়ে আছে। আমারা যেন র‍্যাংকিংয়ে আগাতে পারি তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। র‍্যাংকিংয়ে উন্নতির জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণামূখী করার চেষ্টা করছি। এছাড়া ওয়েবসাইট সহ যে যে সমস্যা আছে তা সমাধেনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত