ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে আক্রান্ত রোগীর বেশিরভাগই ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে ময়মনসিংহে এসেছেন। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের জন্য ৫০ শয্যার ডেঙ্গু আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই ওয়ার্ডটি গত ১৯ অক্টোবর চালু করা হয়। তবে, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেলে কেউ মারা যাওয়ার তথ্য নেই। হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে চলতি অক্টোবর মাসেই চিকিৎসা নিয়েছেন দুই শতাধিক রোগী।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) পর্যন্ত ডেঙ্গু আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন ৬৪ জন রোগী। যার মধ্যে ৫০ জন পুরুষ, ১২ জন নারী এবং শিশু ভর্তি আছে দুই জন। আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রাবেয়া আক্তার নামে এক রোগী বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড করায় খুব ভালো হয়েছে। ওয়ার্ড পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সকল ওষুধপত্রসহ ভালো চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালের ডাক্তাররাও নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। সময়মতো চিকিৎসা দিচ্ছেন।
ডেঙ্গু আইসোলেশন পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার রাজীব হাসান জানান, তিনি গাজীপুরে একটি গার্মেন্টস কারখানায় কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর হিসেবে চাকরি করেন। গত শনিবার শরীরে জ্বর ও মাথাব্যথা শুরু হয়। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে জ্বর মাথাব্যথা ওষুধ খাওয়ার পরও কাজ না হওয়ায় গত সোমবার ময়মনসিংহ মেডিকেলে এসে ডাক্তার দেখান। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তারপর থেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, চিকিৎসক বলেছেন রক্তের প্লাটিলেট কমে গেছে। রক্ত দিতে হবে। আমার গার্মেন্টসে কর্মরত বেশ কয়েকজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, দিন দিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের তিনতলায় ৫০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। রোগীর সংখ্যা যদি আরও বেড়ে যায় তাহলে বেডের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। ওষুধসহ সব ধরনের ব্যবস্থাপনা রয়েছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসক-নার্স এবং অন্যান্য কর্মচারী রোগীদের সেবায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছেন।
এদিকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে চলছে ক্রাশ প্রোগ্রাম। মশক নিধন কার্যক্রম চলছে নগরের অলিতে-গলিতে। সচেতনতা বাড়াতে চালানো হচ্ছে প্রচারণাও। বিভিন্ন বাসা বাড়িতে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা আছে কীনা, তা নির্ণয়ে নিয়মিত চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় এরই মধ্যে কয়েকজন বাড়ির মালিককে জরিমানাও করেছে সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন তারা সবাই অন্যস্থান থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন। ময়মনসিংহ নগরের এখনও কাউকে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, নগরে বসবাস করা নাগরিকদের সচেতন হতে হবে বেশি। বাসা বাড়ি ছাদে এবং নির্মাণাধীন ভবনে যেন পানি জমে না থাকতে পারে, সেজন্য প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডেই নিয়ম করে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বাবু/জেএম