‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকিতে রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়ি-ঘর ভেসে যাচ্ছে। গবাদী পশু বিক্রি করতে হচ্ছে অর্ধেক দামে। অভাব কাটাতে শিশু, তরুণ, কিশোর-কিশোরীরা মাটিকাটা, ইটভাটাসহ দিনমজুরের কাজ করছে। বেড়িবাঁধ ভাঙনে নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে তাদের স্বপ্ন। উপকূলীয় মানুষের এখন একটাই দাবি তারা 'ভাসতে নয়, বাঁচতে চায়'। উপকূলের মানুষের জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ, সাইক্লোন সেল্টার, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।’
বুধবার (৯ নভেম্বর) শিশুদের দ্বিতীয় উপকূলীয় জলবায়ু সম্মেলনে কথাগুলো বলছিল শিশু বক্তা কয়রার বেদকাশী এলাকার যুবরাজ সরকার। খুলনার কারিতাস মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘ (জেজেএস) দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনে সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিশু বক্তা জয়ত্রী মন্ডল বলে, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। ফলে ক্ষেতের ফসল ও মাছ পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে উপকূলীয় জনপদ এক সময় বিলীন হয়ে যাবে। বাল্যবিবাহের হার বাড়ছে। অপরিণত বয়সে বিয়ের জন্য শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়ছে কিশোরীরা। শিশু ফোরামের সদস্য বৈশাখী সরকার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নারী ও পুরুষ গণনা করা হয়। কিন্তু শিশুদের কোনো গণনা নেই। শিশু বান্ধব পরিবেশ নেই। ফলে শিশুদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। ওদের নিয়েও ভাবা উচিত।
সম্মেলনে শিশু বক্তারা শিশুবান্ধব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ ও দেশ উপহার দেয়ার দাবি জানায়। তারা বলেন, বাংলাদেশের যে কোনো দুর্যোগে শিশুদের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে খাদ্য, পানি সংকটসহ সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় সামাজিক দুরাবস্থা। একপর্যায়ে লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয়। অথচ দেশের যে কোনো পরিকল্পনায় শিশুদের রাখা হয় না। এজন্য তারা দেশের উন্নয়নসহ যে কোনো পরিকল্পনায় শিশুদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ২০১০ সাল থেকে কপ সম্মেলনে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশসহ অনুন্নত দেশগুলো। ২০১০ সালে কপ সম্মেলনে প্রথমে দাবিটি তুলে ধরেছিলেন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কপ সম্মেলনে শুধু এটি আলোচনাই হয়, বাস্তবায়ন হয় না। এখন সময় এসেছে সম্মিলিতভাবে সকলকে এগিয়ে এসে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতি ও ঝুঁকি কমিয়ে আনার চেষ্টা করার।
এদিন সম্মেলনে জলবায়ু বিষয়ক ছয়টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে শিশুদের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি পেশ করেন বৃষ্টি ও মেঘলা আক্তার মোহনা। বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ইকবাল হোসেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খান মোতাহার হোসেন।
বাবু/জেএম