শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫ ৬ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫
বারহাট্টায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর নির্মাণ ও বণ্টনে ব্যাপক অনিয়ম
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২, ৪:০১ PM আপডেট: ২৪.১১.২০২২ ৪:০৪ PM

নেত্রকোনার বারহাট্টায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার ঘর নির্মাণ ও বণ্টনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভূমিহীনদের নামে দুই শতাংশ খাসজমি বরাদ্দ আর্থিক সচ্ছল ব্যক্তিরা ভূমি ও ঘর আছে এমন ব্যক্তিরাও পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী দেওয়া ভূমিহীনের ঘর।

সরেজমিনে ঘুরে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এছাড়া এসব ঘর নির্মাণ কাজের প্রতিটি ধাপে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা সহ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ।

(২২-২৩ নভেম্বর) বুধবার ও বৃহস্পতিবার তালিকায় ঘর প্রাপ্তিদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ হওয়ার ঘর প্রাপ্তির কারো ৫ কাঠা জমি আছে, আবার কেউ ভূমি ও ঘরের মালিক। এছাড়া একাধিক বার সরেজমিনে ঘর নির্মাণের কাজ দেখতে গিয়ে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর নির্মাণে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার ও প্রয়োজনের তুলনায় কম সিমেন্ট দিয়ে ঘর তৈরি করছে। ফলে এসব ঘর নির্মাণের পর দেয়ালে হাত দিয়ে আঘাত করলেও দেয়াল থেকে আস্তর খসে পড়ছে। ফলে এসব ঘর যেকোনো সময় ধ্বসে পড়ার আশংকা থেকে যাচ্ছে। এছাড়া ঘরের চালে হালকা ও নিম্নমানের পাতলা কাট ও পাতলা টিন ব্যবহারের ফলে বড় ধরনের বাতাস কিংবা ঝড়-তোফানে এসব ঘরের চাল টিকবে কি-না সেই শংকাও রয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও ক্ষুব্ধ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের সুবিধাভোগী কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘরের চাবি বুঝে পেলেও এখন পর্যন্ত ঘর বুঝে পাননি তারা। কারণ উল্লেখ করে তারা বলেন, ঘর নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। এছাড়া তারাসহ এলাকার অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্মাণাধীন উপহার ঘর নির্মানে নিম্ন মানের ইট, বালু, কাঠ, টিন ও প্রয়োজনের তুলনায় সিমেন্ট কম ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে দেয়াল থেকে আস্তর ধ্বসে পরছে। ভেঙ্গে পড়ছে দেয়াল ও পিলার। সৌন্দর্যের জন্য দেয়ালে ব্যবহার করা রং একেবারেই নিম্ন মানের হওয়ায় রং লাগানোর পর পরই ফ্যাকাসে হয়ে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে বিশ্রী দেখাচ্ছে। সমান্তরাল স্থানে নির্মানকৃত এসব ঘর কোনোটা উঁচু আবার কোনোটা অনেক নিচু হওয়ার কারনে বৃষ্টি হলে নিচু ঘরে পানি ঢুকে পড়ার শংকা রয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯৫ টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে এবং প্রতিটি ঘরের জন্যে বরাদ্দ করা হয়েছিল ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে এবং প্রতিটি ঘরের জন্যে বরাদ্দ করা হয়েছে ২ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫ শত টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় এ উপজেলায় ২০২১-২২ ও ২৩ অর্থবছরে মোট ১০৫টি ভূমিহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে একটি করে সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন এই কাজের দেখভাল করছেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। এ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ বাস্তবায়নে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাজহারুল ইসলাম এবং ঘর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছেন প্রকল্পের সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লতিফুর রহমান।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লতিফুর রহমান এই কাজের তদারকি করছেন বলে তার অফিস সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনিই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের বড়গাওয়া এলাকার এক ব্যক্তির মাধ্যমে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে এসব ঘর নির্মাণ করেছেন বলে জানা যায়।

ভূমিহীনদের মাঝে ২ শতাংশ করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমির) দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাজহারুল ইসলাম। তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নের নায়েবদের সহযোগীতায় প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে সরকারি খাস জমির দলিল রেজিষ্ট্রি করে না দিয়ে জমি ও গৃহ আছে এমন স্বচ্ছ ব্যক্তিদের মাঝে ২শতাংশ করে ভূমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। এলাকাবাসীর ধারণা কোন লাভ ছাড়া তিনি এ কাজগুলো করেননি।

গত ২৩ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘর উদ্বোধন করলেও এখন পর্যন্ত ঘর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় ভূমিহীনদের মাঝে এসব ঘর বুঝিয়ে দিতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি।

এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লতিফুর রহমানের নিকট ঘর নির্মাণের ওয়ার্ক ওয়ার্ডার দেখতে চাইলে তিনি বিষয়টি এরিয়ে গিয়ে বলেন, এব্যাপারে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলুন।

ঘর নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজ হওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাজহারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, কারণ অদৃশ্য কারণে তিনি এই প্রতিনিধির নাম্বারটি ব্রেকলিষ্ট করে রেখেছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মাইনুল হক কাসেমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার ঘর নির্মাণে কোন রকম দূর্নীতি সহ্য করা হবেনা। যদি কেউ নিম্নমানের দ্রব্য সামগ্রী দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার ঘর নির্মাণ করে সরকারের এ মহৎ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন করে তা হলে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে দূর্নীতি মুক্ত শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্টা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন সোনার বাংলা বাস্তবায়িত হবে।

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত