শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫ ৬ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫
নেত্রকোনায় বাজারে ভালো দাম থাকায় সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই কৃষকদের
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:২৬ PM

নেত্রকোনায় সরকারি খাদ্য গোদামে আমন ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারি দর আর বাজার দর খুব বেশি পার্থক্য না হওয়া, ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা নেওয়া, কড়াকড়ি আরোপসহ নানা ঝামেলার কারণে কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে অনাগ্রহী।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,  ২০২২ সালের ৫ নভেম্বর থেকে শুরু করা হয়েছে আমন ধান সংগ্রহ অভিযান। চলতি বছরে কৃষকদের কাছ থেকে মোট ৪০৩৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। সে অনুযায়ী ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে কৃষক বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতি কেজি ধানের সরকারি মূল্য ধরা হয়েছে ২৭ টাকা।

তবে ধান সংগ্রহ অভিযানের প্রায় তিন মাসে এ জেলায় ৪০৩৫ মেট্রিক টনের মধ্যে মাত্র ১৮৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার দিক দিয়ে একেবারেই সামান্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারিভাবে ধানের মূল্য ২৭ টাকা কেজি। সে অনুযায়ী এক মণ ধানের দাম ১ হাজার ৮০ টাকা। কিন্তু বাজারে প্রতি মণ ধান ১১০০ থেকে ১১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও কৃষকদের ভাষ্য, সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। এজন্য খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে অনীহা কৃষকদের। বিশেষ করে শুকনো ছাড়া গুদামে ধান নেওয়া হয় না। ধানের মূল্য পেতেও নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় তাদের।

জেলার চল্লিশা ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক বলেন, আমরা সাধারণ হাট-বাজারে ধান বিক্রি করে যে সুবিধা পাই, গুদামে সেই সুবিধা পাই না। অনেক নিয়ম কানুন। অফিসারদের অসহযোগিতা, গুদামে অনেক কড়াকড়িভাবে ধান নেওয়া হয়। বেশি শুকাতে হয়, পরিষ্কার করতে হয়। তাছাড়া বাজারের চেয়ে গুদামে ধানের দামও কম। তাই আমরা গুদামে ধান বিক্রি করতে অনাগ্রহী।

তারা আরও বলেন, সরকারিভাবে ধান বিক্রি করলে টাকা নিতে হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকতে হয়। অনেক চাষির অ্যাকাউন্টও নেই।

বাউসী ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক বলেন, আমরা যেখানে দাম বেশি পাবো, সেখানেই বিক্রি করবো। সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি, তাই বাজারেই বিক্রি করছি। এছাড়াও হাট-বাজারে নিজেদের ইচ্ছামতো বিক্রি করতে পারি। আর গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে অনেক নিয়ম কানুন আর ঝামেলা।

এ ব্যাপারে বারহাট্টা উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে ধান সংগ্রহের কাজ শুরু করি। কিন্তু কৃষকরা আমাদের কাছে ধান বিক্রি করছেন না।

এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বলেন, ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে। নানাভাবে কৃষকদের এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এমনকি কৃষকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে অনাগ্রহী এবং আসছেন না। আবার সরকারি দামের চেয়ে সাধারণ হাট-বাজারে ধানের মূল্য বেশি, যে কারণে কৃষকরা ধান বিক্রিতে গুদামমূখি হচ্ছেন না।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের লক্ষমাত্রা পূরনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি, কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে তারা যেন সরকারের এই মহৎ উদ্যোগকে সহযোগিতা করেন।

এ বিষয়ে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ করার জন্য প্রচার প্রচারণাসহ নানাভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত