কেরানীগঞ্জে বাকপ্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যার মূল আসামি সুজন মিয়া (২৫) নামের একজনকে শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানার তেগাছিয়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ!
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি জানান, প্রতিবন্ধী নারী লতা সরকারকে প্রেমের ফাদে ফেলে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে সুজন নামের এক শ্রমিক। পরবর্তীতে লতা সুজনকে বিয়ের জন্য জোর-জবরদস্তি করতে থাকে। লতা সুজনকে বলে যে, সে যদি লতাকে বিয়ে না করে তাহলে সে শারীরিক সম্পর্কের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে। আর এটাই লতার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। সুজন লতাকে প্রস্তাব করে দুজন দূরে কোথাও পালিয়ে যাবে। সুজন তখন লতাকে কাপড়-চোপড় নিয়ে রাতে বাড়ির পাশে গাবগাছ তলায় অপেক্ষা করতে বলে। লতা সবকিছু নিয়ে চলে এলে সুজন লতাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে দূরে কোন নির্জন জায়গায় রওয়ানা করে।
পরে কেরানীগঞ্জের আটি বাজার এলাকাসহ বেশকিছু স্থানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শেষে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা শুভাঢ্যা সাবান ফ্যাক্টরী এলাকায় এনে হত্যার উদ্দেশ্যে রাস্তার পাশে একটি শুকনো খাদে ফেলে দেয়। লতা চিৎকার করলে সুজন তার গলা টিপে ধরে পাশেই পড়ে থাকা জমাট পড়া সিমেন্ট এর বস্তার উপর মাথা রেখে ইট দিয়ে মাথা থেতলে দেয়। পরে খাদের ভিতরে নিয়ে লতা সরকারের ব্যাগে থাকা কাপড় দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় লতা সরকারের শরীর ৬৫% পুড়ে যায়।
গত ২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে দশটায় দিকে ৯৯৯ কল এর মাধ্যমে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ সংবাদ পায় যে, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন সাবান ফ্যাক্টরী রোডের পাশে একটি শুকনো খাদের মধ্যে একজন মহিলার শরীরে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি মোবাইল টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় জনগনের সহায়তায় অগ্নিদগ্ধ মহিলাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ড হাসপাতাল) ও পরবর্তীতে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী হাসপাতাল ঢাকায় নিয়ে ভর্তি করে।
মৃত্যুর আগে লতা সরকার হাতের ইশারায় ঘটনার বনর্না দেন পুলিশকে। পুলিশ তার কথা কিছু বুঝতে না পাড়লে বাকপ্রতিবন্ধী বিশেষজ্ঞ এনে তার কথা গুলোর নোট নেন। পরে বিশেষজ্ঞ লতার তার কথাগুলো উপস্থাপন করেন। তার একদিন পর ভিকটিম লতা সরকারের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর নেতৃত্বে চৌকস টিম মামলার পাঁচদিন পর মূল আসামি সুজন মিয়াকে শশুর বাড়ি পটুয়াখালী কলাপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
-বাবু/এ.এস